কী ঘটেছিল মোহাম্মদপুর সাত মসজিদে? কী চাচ্ছে সাদপন্থীরা?

নিজস্ব প্রতিবেদক : গতকাল সোমবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ দেশের কয়েকটি গণমাধ্যমে দেশের অন্যতম দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়াকে জড়িয়ে তাবলিগ জামাত সংশ্লিষ্ট একটি সংবাদ প্রচারিত হয়েছে। সংবাদে বলা হয়েছে, এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা স্থানীয় সাদপন্থী এক তাবলিগি নেতাকে শারীরিকভাবে হেনস্থা করেছেন এবং তাকে মসজিদ ত্যাগে বাধ্য করেছেন। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরবর্তীতে স্থানীয়ভাবে উভয়পক্ষের মধ্যে কিছুটা উত্তেজনাও দেখা দেয়। পরবর্তী সময়ে প্রশাসনের সহযোগিতায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।এই ছিল প্রচারিত ঘটনা।

ঘটনার সত্যতা যাচাই করতে ইসলাম টাইমস জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়ার ছাত্র-শিক্ষকসহ স্থানীয় কয়েকজনের সাথে কথা বলে। তারা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করলেও এর পেছনে সাদপন্থীদেরই দায়ী করেন। তারা বলেন, তাদের মনে হয়েছে, ঘটনাটি ছিল উস্কানিমূলক। এর পেছনে সাদপন্থীদের ভিন্ন মতলব থাকতে পারে। তাদের জিজ্ঞাসা, সাদপন্থী এই নেতা দীর্ঘদিন পর হঠাৎ কেন মাদরাসালাগোয়া এই মসজিদে এলেন? বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে জেনেও কেন তিনি সেখান থেকে না সরার ঘোষণা দেন?

একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী ইসলাম টাইমসকে জানান, গত ১ ডিসেম্বর ২০১৮ টঙ্গীর ইজতেমার মাঠে সন্ত্রাসী হামলায় রাহমানিয়া মাদরাসার একাধিক ছাত্র-শিক্ষক গুরুতর আহত হন। তাদের মধ্যে রাহমানিয়াসংলগ্ন সাত মসজিদের ইমাম ও শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক রহ.-এর নাতি মাওলানা আনিসুল হকও মারাত্মকভাবে আহত হন। টঙ্গী হামলার প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, তাকে টার্গেট করে পেটানো হয়। আর মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষকদের টার্গেট করার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করেন স্থানীয় সাদপন্থীরা।

ইজতেমার মাঠে হামলার ঘটনার পর স্থানীয় সাদপন্থী নেতা মিজানুর রহমানকে তার ছেলে নাঈমের (রাহমানিয়ার সাবেক ছাত্র) মাধ্যমে অনুরোধ করা হয় তিনি যেন মাদরাসার এলাকায় না আসেন। কারণ, ইজতেমার মাঠে অসংখ্য ছাত্র-শিক্ষক বিশেষত রাহমানিয়ার শিক্ষক ও সাত মসজিদের ইমাম মাওলানা আনিসুল হকের উপর বর্বরোচিত হামলার কারণে মাদরাসা ছাত্র-শিক্ষক ও সাধারণ মুসল্লিদের মধ্যে প্রচণ্ড রকম ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। তিনি মাদরাসার এলাকায় এলে অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা ঘটতে পারে এমন আশঙ্কা ছিলো অনেকের।

টঙ্গীর হামলার পর দীর্ঘদিন এলাকায় অনুপস্থিত থাকার পর গতকাল ৭ জানুয়ারি তিনি জোহরের নামাজের সময় সাত মসজিদে উপস্থিত হন। এতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় মসজিদের সাধারণ মুসল্লি ও মাদরাসার ছাত্রদের মধ্যে। তখন তাকে অনুরোধ করা হয়, উত্তেজনাকর পরিস্থিতি এড়াতে তিনি যেন পার্শ্ববর্তী কোনো মসজিদে গিয়ে নামাজ আদায় করেন। কিন্তু তিনি সবার অনুরোধ উপেক্ষা করেই মসজিদে থাকার অনড় ঘোষণা দেন। এতে উপস্থিত মুসল্লিরা ক্ষিপ্ত হয় এবং তাকে মসজিদ ত্যাগে বাধ্য করে। এই সময় তার সঙ্গে ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে।

এই ঘটনার পরপর রাহমানিয়ার শিক্ষকরা ছাত্রদের মাদরাসার ভেতর নিয়ে যান এবং মাদরাসার গেট বন্ধ করে দেন। অন্যদিকে সাদপন্থী নেতা মিজানুর রহমান সাত মসজিদ এলাকায় স্থানীয় অন্য সাদপন্থীদের জড়ো করে মাদরাসা ছাত্র-শিক্ষকদের অবরুদ্ধ করে রাখেন। সাত মসজিদ এলাকা ছাড়াও সে সময় পার্শ্ববর্তী এলাকার সাদপন্থীদেরও ঘটনাস্থলে ইপস্থিত হতে দেখা যায়। উপস্থিত সাদপন্থীদের মধ্যে টঙ্গীর মাঠে সন্ত্রাসী হামলায় নেতৃত্ব দেওয়া শাকিল ও শাহীন ছিলেন বলে একজন প্রত্যক্ষদর্শী দাবি করেন।

এছাড়াও মোহাম্মদপুর বিআরটিসি বাস স্ট্যান্ডের আল্লাহ করিম মসজিদেও কয়েকশো সাদপন্থী জড়ো হয়। পরবর্তীতে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন এগিয়ে এলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

তবে দীর্ঘদিন এলাকায় অনুপস্থিত থাকার পর সাদপন্থী নেতা মিজানুর রহমান কেন আবার এলাকায় এলেন তা নিয়ে নানান গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। অনেকের ধারণা, উলামায়ে কেরাম গত ৭ জানুয়ারি উত্তরার পূর্ব নির্ধারিত পরামর্শ সম্মেলন করতে না পারায় সাদপন্থীরা নতুন করে কাজ শুরু করার সাহস পাচ্ছে। এছাড়াও ৬ জানুয়ারি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে উলামায়ে কেরাম ও সাদপন্থী উভয়পক্ষ সমান্তরাল আচরণ পাওয়ায় সাদপন্থীরা নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করতে মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে বলে অনেকেই অভিযোগ করেছেন।

ইসলাম টাইমসের অনুসন্ধানও বলছে, সম্প্রতি ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় সাদপন্থীদের তৎপর হতে দেখা যাচ্ছে। বিশেষত ঢাকার উত্তরা, মিরপুর ও পুরান ঢাকার বিভিন্ন মহল্লা, সাভার ও কেরানিগঞ্জের কোনো কোনো মসজিদে সাদপন্থীদের তৎপরতার খবর পাওয়া যাচ্ছে। এসব এলাকায় চিহ্নিত সাদপন্থীদের বিরুদ্ধে মসজিদের মুসল্লি, সাধারণ তাবলিগী সাথী, মসজিদ কমিটি ও আলেমদের সম্মিলিত অবস্থান ছিল।  দীর্ঘদিন পর আবার সেসব এলাকায় সাদপন্থীরা সক্রিয় হয়ে উঠেছেন বলে অভিযোগ স্থানীয় মুসল্লিদের।

সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, সাদপন্থীরা চাচ্ছে তাদের কাজকর্মে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে এমন এলাকা ও মসজিদগুলিতে এখন জোর করে প্রবেশ করতে। এজন্য তারা টঙ্গীর মাঠের মতো রক্তক্ষয়ী কাণ্ড ঘটানোর মতো ঝুঁকি নিতেও পিছপা হতে রাজি না। তাদের টার্গেট হচ্ছে তাদের হাতে কাজের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া অথবা সাদমুক্ত বিশ্ব ইজতেমা বাতিল করার ক্ষেত্র তৈরি করা। মোহাম্মদপুর সাত মসজিদ এলাকার ঘটনার পেছনে সেই মানসিকতাই কাজ করেছে।

পূর্ববর্তি সংবাদবর্তমান মন্ত্রী-এমপিদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ পেলেও ব্যবস্থা: দুদক
পরবর্তি সংবাদনির্বাচন নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর বিবৃতিতে চিন্তিত নই : পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী