নির্বাচন পরবর্তী ভাবনা : আগামী দিনের সংকট ও ঐক্য নিয়ে যা বললেন ইসলামি রাজনীতিবিদরা

আতাউর রহমান খসরু ।।

গতকাল মন্ত্রিসভা গঠনের মধ্য দিয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হলো প্রায়। বহুল আলোচিত ও সমালোচিত এই নির্বাচন নিয়ে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গণ স্পষ্টতই বিভক্ত। আওয়ামী লীগসহ মহাজোটের অংশিদার দলগুলো নির্বাচন নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করলেও অধিকাংশ বিরোধী দল নির্বাচনের স্বচ্ছতা ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে।

অন্যদিকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সংসদে কার্যকর কোনো বিরোধী দলের অনুপস্থিতি দেশের রাজনীতিকে আরও ভারসাম্যহীন করে তুলবে। তাদের আশঙ্কা, প্রায় চ্যালেঞ্জহীন অবস্থায় সরকার পরিচালনার সুযোগ সংসদের বাইরের বিরোধী দলগুলোর উপর সরকারকে আরও কর্তৃত্বপরায়ণ করে তুলতে পারে। সে হিসাবে রাজনৈতিক দলগুলো আগামীতে বহুমুখী চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে পারে।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব হাফেজ মাওলানা অধ্যক্ষ ইউনুছ আহমাদ মনে করেন, একাদশ জাতীয় নির্বাচনে ক্ষমতার যে ভারসাম্যহীন অবস্থার তৈরি হয়েছে তাতে সাধারণভাবেই দেশের রাজনীতি ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়বে। ক্ষমতাসীন দল আরও বেশি বেপরোয়া হয়ে উঠবে। বিরোধী দল আরও বেশি কোণঠাসা হবে। তবে তার মতে, সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হবে ইসলামি রাজনীতি।

কেন? ‘কারণ, জনভিত্তিহীন এই সরকার টিকে থাকতে বিদেশি শক্তিগুলোর উপর আরও বেশি নির্ভরশীল হবে। এখন সরকারকে তাদের আরও বেশি প্রত্যাশা পূরণ করতে হবে। আর বিশ্বরাজনীতির নিয়ন্ত্রক শক্তিগুলোর ইসলাম বিদ্বেষী মনোভবের কথা সবাই জানে। তাই ইসলামি দলগুলোর উপর সরকার কঠোর হয়ে উঠতে পারে।’

খেলাফত মজলিসের মহাসচিব অধ্যাপক ড. আহমদ আবদুল কাদের অবশ্য বিষয়টি ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করেন। তার দৃষ্টিতে আগামীর দিনগুলো কতোটা সংকটময় হবে তা নির্ভর করছে বিএনপি-ঐক্যফ্রন্টের উপর। বিএনপি যদি নির্বাচনের ব্যাপারে তাদের অভিযোগগুলো প্রতিষ্ঠিত করতে পারে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গণে নির্বাচনের ‘সঠিক চিত্র’ তুলে ধরতে পারে তবে সরকারই সংকটে পড়বে। আর বিএনপি-ঐক্যফ্রন্ট ব্যর্থ হলে তাদের জন্য সমূহ সংকট অপেক্ষা করছে।

ইসলামি দলগুলোর জন্য পৃথক কোনো সংকট তৈরি হতে পারে?’ উত্তরে আহমদ আবদুল কাদের বলেন, ‘আওয়ামী লীগের মধ্যে ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহারের মানসিকতা দেখা যাচ্ছে। যদি দেশের ইসলামি দলগুলো তাদের এই কাজে বাধা না দেয়, তবে কোনো সংকট তৈরি হবে না। আর যদি তারা বাধা সৃষ্টি করে তবে অন্যান্য বিরোধী দলের মতো তাদেরও দমন করা হবে বলে আমার ধারণা।

দেশের সম্ভাব্য রাজনৈতিক সংকট মোকাবেলায় উভয় নেতাই মনে করেন বৃহত্তর ঐক্য প্রয়োজন। যদিও ঐক্য বিষয়ে দুই নেতার প্রস্তাব দুই রকম। অধ্যাপক আহমদ আবদুল কাদের মনে করেন, ‘দেশের চলমান রাজনৈতিক সংকটে সকল বিরোধী দলের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন হওয়া প্রয়োজন। আর সেটা সম্ভব না হলে অন্তত ঐক্যের কাছাকাছি জায়গায় থেকে মানুষের মৌলিক রাজনৈতিক অধিকারগুলো আদায়ের চেষ্টা করা প্রয়োজন। কারণ, বর্তমান সংকট সামগ্রিক সংকট, শুধু ইসলামপন্থী বা ইসলাম বিরোধীদের সংকট নয়।’ বিপরীতে অধ্যক্ষ ইউনুছ আহমাদের মত হলো, বড় কোনো আন্দোলনে যাওয়ার আগে লক্ষ্য-উদ্দেশ্য নির্ধারণ করা আবশ্যক। নতুবা সেই আন্দোলন ফলাফল ইসলামি দলগুলোর কোনো উপকারে আসে না।

তাহলে কী বৃহত্তর আন্দোলনের লক্ষ্যে কোনো ঐক্য বা সমঝোতার সম্ভাবনা নাকচ করে দিচ্ছেন? ‘না, আমি ঐক্যের সম্ভাবনা নাকচ করছি না। বৃহত্তর আন্দোলনের প্রয়োজনীয়তা অবশ্যই আছে। তবে আমরা মনে করি, বড় দলের উপর নির্ভরতা কমিয়ে আদর্শিক দূরত্ব নেই এমন দলগুলো মানে ইসলামি দলগুলোর বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলা বেশি প্রয়োজন। আর সেটা হলে বড় দলের সঙ্গে জোটবদ্ধ হওয়ার প্রয়োজনও থাকবে বলে আমরা মনে করি না। ইসলামি দলগুলো ঐক্যবদ্ধ হলে দেশের সামগ্রিক রাজনীতি ইসলামপন্থীদের একটি অবস্থান তৈরি হবে। তখন আরও বৃহত্তর পরিসরে যেয়ে আন্দোলনের চিন্তা করা যেতে পারে।’ উত্তরে অধ্যক্ষ ইউনুছ আহমাদ বলেন।

অধ্যাপক আহমদ আবদুল কাদেরও তার কথার সঙ্গে একমত হন যে, ইসলামি দলগুলোর বৃহত্তর ঐক্য দেশের রাজনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে। তবে ইসলামি দলগুলোর বৃহত্তর ঐক্য গড়ে ওঠার ব্যাপারে তার যথেষ্ট সংশয় রয়েছে এই নেতার। তার ভাষায়, ‘কার্যকর কোনো উদ্যোগ না নিয়ে শুধু মুখে বললে তো কোনো লাভ নেই।’

তার কাছেই জানতে চেয়েছিলাম, বামধারার দল ও জোটগুলো নির্বাচন ও নির্বাচনে নানান অসঙ্গতির অভিযোগ তুলে সরব হলেও ইসলামি দলগুলো এখনও চুপ করে আছে কেন? ‘ইসলামি দলগুলোর বৈশিষ্ট্যগত একটি দুর্বলতা হলো, তারা ইসলাম সংশ্লিষ্ট ইস্যু ছাড়া কথা বলেন না। এজন্য রাজনীতিতে তাদের গুণগত কোনো পরিবর্তনও আসছে না। আমার মনে হয়, ইসলামি দলগুলো চুপ করে থাকার কারণও ঠিক তাই।’

তবে নির্বাচন ইস্যুতে তিনি বিএনপিরও সমালোচনা করেন। তার ভাষায় বিএনপিও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ এখনও নিতে পারেনি। জনগণের আস্থা অর্জনের মতো কোনো কর্মসূচির দিকেও যাচ্ছে না তারা।

পূর্ববর্তি সংবাদআমার অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয়নি : মাহবুব তালুকদার
পরবর্তি সংবাদনবনির্বাচিত সংসদ সদস্যদের শপথের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আইনি নোটিশ