তাবলিগ সংকট নিরসনে দেওবন্দ সফর: কেন চলছে সাদপন্থীদের উদ্দেশ্যমূলক প্রচারণা?

আতাউর রহমান খসরু ।।

বাংলাদেশে তাবলিগ জামাতের চলমান সংকট নিরসনে বিতর্কিত তাবলিগি মুরব্বি মাওলানা সাদের ব্যাপারে দারুল উলুম দেওবন্দের মতামত ও অবস্থান জানতে আগামী ১৫ জানুয়ারি ভারত যাচ্ছেন একটি প্রতিনিধি দল। এতে থাকবেন তাবলিগ জামাতের উভয়পক্ষ ও সরকারের পদস্থ ব্যক্তিরা।

গত ৬ জানুয়ারি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত তাবলিগ জামাত বিষয়ক এক বৈঠকে এই সফরের সিদ্ধান্ত হয়। সিন্ধান্তানুযায়ী আগামী ১৫ জানুয়ারি তারা ভারত যাবেন এবং দুই দিনের সফর শেষে ১৭ জানুয়ারি দেশে ফিরবেন।

বৈঠক সূত্রে সফরের সিদ্ধান্তের কারণ হিসেবে জানা যায়, উলামায়ে কেরাম মাওলানা সাদের বিতর্কিত ও কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী বক্তব্যের ক্ষেত্রে দারুল উলুম দেওবন্দের মতামত ও ফতোয়ার কথা উল্লেখ করেন। তারা বলেন, দারুল উলুম দেওবন্দের আপত্তির কারণে তারা মাওলানা সাদের ব্যাপারে আপত্তি করছেন।

আরও পড়ুন : তাবলিগ সংকট : ১৫ জানুয়ারি যারা দারুল উলুম দেওবন্দ যাচ্ছেন

কিন্তু সাদপন্থীদের দাবি দারুল উলুম দেওবন্দ মাওলানা সাদের ব্যাপারে দেওয়া তাদের বক্তব্য ও মতামত থেকে সরে এসেছে। এখন তার ব্যাপারে দারুল উলুমের কোনো আপত্তি নেই। উভয় দলের বক্তব্যের যথার্থতা যাচাইয়ের জন্যই এই সফরের সিদ্ধান্ত হয়।

প্রতিনিধি দল দারুল উলুম দেওবন্দের কাছে জানতে চাইবেন যে, মাওলানা সাদের ব্যাপারে তাদের আপত্তিসমূহ এখনো আছে কী না? স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের বৈঠকেও বিষয়টি এমনভাবেই আলোচিত হয় বলে দাবি করেন বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সূত্র।

৬ জানুয়ারি বৈঠক ও প্রতিনিধি দলের ভারত যাওয়া বিষয়ক দৈনিক প্রথম আলোর এক প্রতিবেদনে (৮ জানুয়ারি প্রকাশিত) স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দারুল উলুম দেওবন্দ যাওয়ার উদ্দেশ্য ও আলোচ্য বিষয় সম্পর্কে বলেন, ‘এক পক্ষ বলছে, সাদ শরিয়তবিরোধী কাজ করছেন। তিনি যেসব কথা বলেছেন, সেগুলো শরিয়াবিরোধী কি না সেটা যাচাইয়ের জন্য তাবলিগের দুই পক্ষের সমন্বয়ে একটি দল দেওবন্দে পাঠানো হবে। তারা ফিরে আসার পর সিদ্ধান্ত হবে।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দারুল উলুম দেওবন্দের কাছে প্রতিনিধি দলের জিজ্ঞাসার বিষয় হিসেবে ‘মাওলানা সাদের শরিয়তবিরোধী বক্তব্য’কে উল্লেখ করলেও সাদপন্থী কিছু নেতা ও তাদের মদদপুষ্ট কয়েকটি মিডিয়া আলোচ্য বিষয় পরিবর্তনের চেষ্টা করছেন। তারা প্রচার করছেন, ‘সরকারের প্রতিনিধিরা মূলত জানতে চাইবেন মাওলানা সাদের ব্যাপারে বাংলাদেশি আলেমদের বক্তব্য ও কর্মকাণ্ড ঠিক আছে কি না? তার বাংলাদেশে আসার ব্যাপারে দেওবন্দের আপত্তি আছে কি না?’ অর্থাৎ তারা আলোচনার মূল কেন্দ্র থেকে মাওলানা সাদকে সরিয়ে বাংলাদেশের আলেম ও তাদের কর্মকাণ্ডকে নিয়ে আসতে চাইছে।

আরও পড়ুন : কী ঘটেছিল মোহাম্মদপুর সাত মসজিদে? কী চাচ্ছে সাদপন্থীরা?

৬ জানুয়ারি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ডের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক। তিনি দেওবন্দ সফরের জন্য মনোনীত প্রতিনিধি দলের সদস্যও। তার কাছে সাদপন্থীদের প্রচারণার বিষয়টি উত্থাপন করলে তিনি বলেন, ‘এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও অপপ্রচার। সেদিন এমন কোনো বিষয়ে আলোচনা হয়নি। সেখানে আলোচনাই হয়েছে মাওলানা সাদের শরিয়ত বিরোধী বক্তব্যের ব্যাপারে দেওবন্দের এখনও আপত্তি আছে কী না তা স্পষ্ট হওয়ার বিষয়টি নিয়ে।’

তিনি আরও বলেন, মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গণমাধ্যমে স্পষ্ট বলেছেন, ‘মাওলানা সাদের বক্তব্য শরিয়ত বিরোধী কী না তা জানতেই প্রতিনিধি দল দেওবন্দ যাচ্ছে। তিনি ৬ তারিখের বৈঠকেও বলেছেন, আমাদের জানার বিষয় সাদ সাহেবের বক্তব্য কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী কী না? কারণ, আমরা মুসলমান হিসেবে কুরআন-সুন্নাহর বাইরে যেতে পারবো না।’

তাহলে সাদপন্থীরা নির্ধারিত আলোচ্য বিষয় পরিবর্তন করে ভিন্নভাবে প্রচার করছে কেন? তাবলিগ জামাতের সংকট নিরসনে সক্রিয় আলেম মুফতি কেফায়তুল্লাহ আযহারী মনে করেন, ‘তারা মূলত ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চায়। তা এভাবে যে, দারুল উলুম দেওবন্দ মাওলানা সাদের বক্তব্য শরিয়ত বিরোধী কি না সে বিষয়ে কথা বললেও হয়তো তার বাংলাদেশে আসা বা না আসার ব্যাপারে কোনো বক্তব্য দেবে না। কারণ, দেওবন্দ তার বাংলাদেশে আসা  বা না আসাকে তার ব্যক্তিগত বিষয় হিসেবে দেখতে পারে। আর এমন ঘটলে তখন সাদপন্থীরা ফলাও করে প্রচার করতে চাইবে, মাওলানা সাদের বাংলাদেশে আসার ব্যাপারে দেওবন্দের কোনো আপত্তি নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘এর আগের সফরেও জনাব ওয়াসিফুল ইসলাম এই প্রশ্নটি তুলেছিলেন। কিন্তু তখন দেওবন্দ বিষয়টি এড়িয়ে যায়। দেওবন্দ কর্তৃপক্ষ বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের সাথে সংশ্লিষ্ট নয়। এটা বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট মহলের বিষয়।’ দেওবন্দে এ কথাটিকেই সাদপন্থীরা ‘মাওলানা সাদের বাংলাদেশে আসার ব্যাপারে দেওবন্দের আপত্তি নেই’ বলে প্রচার শুরু করেন।

তবে মুফতি কেফায়াতুল্লাহ আশা করেন, এবারও তারা অপ্রাসঙ্গিক বিষয়ের অবতারণা করলে গতবারের মতো দারুল উলুমের লিখিত মতামতে তা আবারো প্রত্যাখ্যাত হবে।

পূর্ববর্তি সংবাদআন্দোলনে ব্যর্থ দল নির্বাচনে জয়ী হতে পারে না : প্রধানমন্ত্রী
পরবর্তি সংবাদউপজেলা নির্বাচন মার্চ থেকে