ব্যাখ্যা দেওয়ার পরও বিবৃতি দিয়ে আল্লামা শফীর বক্তব্যের সমালোচনা করলেন ফখরুল

ইসলাম টাইমস ডেস্ক: নারী শিক্ষা নিয়ে হেফাজত আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফীর বক্তব্যের সমালোচনা করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, মেয়েদের স্কুল-কলেজে না পাঠানোর জন্য হেফাজতের আমিরের বক্তব্যে আমি হতবাক ও বিস্মিত হয়েছি। একবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকে এ ধরনের বক্তব্য বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে বিব্রত করবে।

আল্লামা শফী নারী শিক্ষা নিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা অনাকাঙ্ক্ষিত, অনভিপ্রেত ও দুঃখজনক বলেও মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল। রোববার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব।

১১ জানুয়ারি হাটহাজারি মাদরাসার বার্ষিক সম্মেলনে নিরাপদ পরিবেশ ছাড়া মেয়েদেরকে উচ্চ শিক্ষার জন্য পাঠাতে নিষেধ করেন। এ নিয়ে প্রধান গণমাধ্যমগুলোতে ‘খণ্ডিত’ বক্তব্য প্রচার হওয়ায় একদিনের মধ্যেই আল্লামা আহমদ শফীর পক্ষ থেকে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়। গণমাধ্যমে পাঠানো সে ব্যাখ্যায় জানানো হয়,মাহফিলে দেয়া তার বক্তব্যের একটি খণ্ডাংশ বিভিন্ন মিডিয়ায় ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। ইসলাম নারীর শিক্ষাকে উৎসাহিত করে। তিনিও নারী শিক্ষার বিরুদ্ধে নন। নারীদের শিক্ষার পরিবেশ নিরাপদ করার উদ্দেশ্যেই তিনি এ বক্তব্য দিয়েছেন।

আরও পড়ুন : আল্লামা শফীর সমালোচনা করে মির্জা ফখরুলের বিবৃতি কোন উদ্দেশ্যে?

ওই ব্যাখ্যামূলক বিবৃতিতে হেফাজত আমির আরো বলেন, বক্তব্যে আমি মূলত বলতে চেয়েছি- ইসলামের মৌলিক বিধান পর্দার লঙ্ঘন হয়, এমন প্রতিষ্ঠানে নারীদের পড়াশোনা করানো উচিত হবে না। আমাদের মনে রাখতে হবে যে, ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। এখানে শিক্ষা থেকে শুরু করে রাষ্ট্র পরিচালনাসহ যাবতীয় সব কিছুই রয়েছে। ইসলামে নারীদের শিক্ষার বিষয় উৎসাহিত করা হয়েছে এবং সবাই অবগত যে, উম্মুল মুমিনিন হজরত মা আয়েশা (রা.) ছিলেন একজন প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস। তিনি শিক্ষাগ্রহণ না করলে উম্মত অনেক হাদিস থেকে মাহরুম হয়ে যেত।

মির্জা ফখরুলের সমালোচনামূলক এ বিবৃতিটি গণমাধ্যমে পাঠানো হলো আল্লামা আহমদ শফীর পক্ষ থেকে ব্যাখ্যা দেয়ার পরে।

বিএনপির সহদফতর সম্পাদক মুহাম্মদ মুনির হোসেন প্রেরিত ওই বিবৃতি বলা হয়, নারী শিক্ষার সঙ্গে ধর্মের কোনো বিরোধ নেই। বিএনপি মনে করে নারী সুশিক্ষায় আলোকিত না হলে তাদের বিকাশ ও প্রকৃত ক্ষমতায়ন হবে না।

‘নারী-পুরুষ নির্বিশেষে শিক্ষিত হওয়া ছাড়া ইসলামে সমাজকল্যাণ, অর্থনেতিক ও মানবিক সাম্যসহ ইসলামের অন্তর্নিহিত মর্মবাণী বুঝতে সক্ষম হবে না। সন্তানের প্রাথমিক শিক্ষালাভ ঘটে মায়ের কাছ থেকেই। নৈতিক ও অক্ষর পরিচয়ের প্রথম পাঠশালাই হলো মায়ের সাহচার্য। সুতরাং মা সুশিক্ষিত না হলে পারিবারিক প্রতিষ্ঠানটি ঐক্যবদ্ধ ও সুসংহত হয় না।’

বিবৃতিতে মির্জা ফখরুল বলেন, সামাজিক অন্যায় ও বৈষম্য দূর করার জন্য অবশ্যই নারীর শিক্ষা অপরিহার্য। বাংলাদেশের মোট জনসমষ্টির অর্ধেকই নারী, প্রাচীন প্রথা ও কুসংস্কারের নিগড় থেকে বেরিয়ে এসে জাতি গঠনমূলক ও জাতীয় অর্থনীতিতে যথার্থ ভূমিকা পালনের প্রধান শর্ত হচ্ছে নারী শিক্ষা।

তিনি আরও বলেন, নারীরা শিক্ষিত না হলে তারা সমাজে অমানবিক নষ্টবুদ্ধির মানুষদের প্রতারণা, লাঞ্ছনা ও শোষণ-বঞ্চনা থেকে রক্ষা পাবে না। নিগ্রহ ও অসম্মানের হাত থেকে বাঁচতে বাংলাদেশের অক্ষরহীন নারীদের অবশ্যই পড়ালেখা করতে হবে। তা না হলে আমাদের দেশ ও সমাজ অগ্রসরমান পৃথিবী থেকে অনেক পেছনে অবস্থান করবে।

পূর্ববর্তি সংবাদচীনে কয়লা খনি ধসে নিহত ২১
পরবর্তি সংবাদরাজনৈতিক দলগুলোকে আবারও সংলাপে ডাকবেন প্রধানমন্ত্রী : ওবায়দুল কাদের