সফরের আগ মুহূর্তে ঘন ঘন ভোল পাল্টাচ্ছেন সাদপন্থীরা!

আবদুল করীম শাহেদ ।।

তাবলিগ সংকট নিরসনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদল ভারতের দেওবন্দে পৌঁছার কথা রয়েছে ২৩ জানুয়ারি বুধবার। দেওবন্দে যাওয়ার তারিখ যতই এগিয়ে আসছে বাংলাদেশের সাদপন্থী এতায়াতীদের ভোল বদলের জোয়ার বইতে শুরু করেছে। একেকবার তাদের প্রচার যন্ত্রগুলো থেকে একেক রকম কথা বের হয়ে আসছে। আগের দিনের সঙ্গে পরের দিনের কথা মিলছে না। সকালের কথার সঙ্গে রাতের কথার সম্পর্ক থাকছে না।

এবারের দেওবন্দ যাওয়ার উদ্যোগটির পেছনে সাদপন্থী এতায়াতীদের জোরাজুরিই ছিল সবচেয়ে বেশি। প্রশাসনের বৈঠকেও তারা বারবার দাবি করেছে-‘দেওবন্দ এখন সাদ সাহেবের ব্যাপারে মুতমাইন (আশ্বস্ত)। সুতরাং সাদ সাহেবকে বাংলাদেশে এনে ইজতেমা করার ক্ষেত্রে কোনো অসুবিধা নেই।’ তাদের এই ‘অসত্য’ দাবিটি যাচাইয়ের জন্য তারা দেওবন্দে আবার যেতেও প্রস্তুত বলে জানান। এর প্রেক্ষিতেই দেওবন্দে প্রতিনিধিদল যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু দেওবন্দ যাওয়ার সময় যতই ঘনিয়ে এসেছে ততই সাদপন্থীদের উপর-নিচ সব জায়গায় শুরু হয়েছে নানান টালবাহানা, প্রশ্ন ও অস্থিরতা।

তারা একবার প্রশ্ন ছুঁড়ে দিচ্ছেন, সাদ সাহেবের ভুলশুদ্ধ জানতে কোন্ দেওবন্দে যাওয়া হবে, দেওবন্দ তো দুইটা- দারুল উলূম দেওবন্দ, ওয়াকফ দারুল উলূম দেওবন্দ? উত্তর দেওয়া হয়েছে- যেই দেওবন্দ সাদ সাহেবের ব্যাপারে ফতোয়া দিয়েছে সেই দেওবন্দেই যেতে হবে। যেই দেওবন্দের ফতোয়ায় সাদ সাহেব ‘রুজুনামা’ পাঠিয়েছেন সেই দেওবন্দেই যেতে হবে।’ আরেকবার প্রশ্ন ছুঁড়ে দিচ্ছেন, দেওবন্দ যদি ভুল করে সে ভুলটা কে ধরবে?’ উত্তর দেওয়া হয়েছে- দেওবন্দের ‘ভুল’ ধরবে নাস্তিক –মুরতাদরা। দেওবন্দ সম্মিলিতভাবে ‘ভুল’ করলে নাস্তিক-মুরতাদদের অনুসারীরা সেই ‘ভুল’ নিয়ে কথা বলবে।

এসব উত্তর পেয়েও এতায়াতীরা মুখ বন্ধ করেননি। তারা বলছেন, দেওবন্দ হচ্ছে ইলমী মারকাজ। আর তাবলিগ হচ্ছে দাওয়াতী মেহনত- যার মারকাজ নিজামুদ্দীন। তাবলিগের ভুল ধরবে নিজামুদ্দীন, দেওবন্দ নয়।’ তাদের এই প্রশ্নের উত্তরে বলা হয়েছে – যে কোনো দ্বীনী কাজের ভুলশুদ্ধ যাচাইয়ের কাজ ইলমী মারকাজ থেকেই করা হয়। দেওবন্দ ইলমী মারকাজ বলেই নেযামুদ্দীনে চেপে বসা আমীরের ভুলশুদ্ধ যাচাইয়ের দায়িত্ব দেওবন্দের ওপরই বর্তায়। নেযামুদ্দীনের স্বঘোষিত আমীর নিজেই যেহেতু আকীদা –বক্তব্য ও চিন্তার ভুলে হাবুডুবু খাচ্ছেন– তাই এ বিষয়ক দায়িত্ব তার অধীনের প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে করানোর কোনো অর্থ থাকে না।

দেওবন্দের সঙ্গে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের সাক্ষাৎ হতে পারে ২৩ জানুয়ারি। সেদিনই মাওলানা সাদের ভ্রান্তি ও বিচ্যুতি সম্পর্কে আবারো স্পষ্ট বক্তব্য চলে আসতে পারে দেওবন্দের পক্ষ থেকে। সেজন্য এতায়াতীরা দেওবন্দকেই শেষ পর্যন্ত প্রশ্নবিদ্ধ করতে উঠে পড়ে লেগেছেন। এতদিন দেওবন্দের নামে তারা ছড়িয়েছেন- দেওবন্দ সাদ সাহেবের বিষয়ে মুতমাইন(আশ্বস্ত)। এখন বাস্তবতা সামনে চলে আসার আশঙ্কায় তারাই খোদ দেওবন্দকে নিয়ে প্রশ্ন উঠাতে শুরু করেছেন। এ যেন অন্ধ জেদ ও মতলব বজায় রাখতে ভোল বদলের এক ধারাবাহিকে পর্ব। প্রতিনিধিদল দেওবন্দ থেকে ফিরে আসা পর্যন্তই যে পর্ব চলতে থাকবে বলে অনুমান করা হচ্ছে।

নতুন করে গোমর ফাঁস হওয়ার আশঙ্কায় সফরের আগে আগে এতায়াতীদের কেউ কেউ একবার বললেন- পাসপোর্ট ঠিক নেই।’ আবার কখনো বলেন, ভিসার জটিলতা হচ্ছে। কখনো বলছেন, দেওবন্দের পরিস্কার বলতে হবে- সাদ সাহেবকে টঙ্গী ইজতেমায় উপস্থিত করার ব্যাপারে তাদের ভিন্নমত আছে কি না।’ এমন কি এখন এ-ও বলছেন, সাদ সাহেব ছাড়া ইজতেমা করলে বিদেশিরা ঢাকায় আসবে না। এতে বৈদেশিক মুদ্রা থেকে দেশ বঞ্চিত হবে। তাই সাদ সাহেবকে ইজতেমায় আসতে দিতে হবে। সাদ সাহেবের বাংলাদেশ আসা আর তাবলিগের কাজের ভালোমন্দের সঙ্গে তারা ‘বুদ্ধিমানের’ মতো মুদ্রার সম্পর্ক জুড়ে দিয়েছেন।

তাদের বক্তব্য, প্রশ্ন, বাহানা ও ভোলের অভাব নেই। যখন যেই কথা বলে পরিস্থিতির মধ্যে ধোঁয়াশা সৃষ্টি করা যায় –তারা ঠিক তাই করে যাচ্ছেন। কিন্তু তাবলিগের মেহনতের সাথে জড়িত অভিজ্ঞ মহল বলছেন, এতাআতীদের মরিয়া অসত্যাচারে এবার আর কোনো ফায়দা হবে না। ১ ডিসেম্বরের রক্তাক্ত টঙ্গী ময়দান আর দ্বিতীয়বারের দেওবন্দ সফরের পর তাদের দাবি-দাওয়া চুপসে যাবে। তবে সাদপন্থীদের এতসব ভোল পাল্টানো কর্মকাণ্ডের পরও সবাই চাইছেন এবারের ইজতেমা যেন সুষ্ঠুভাবে এবং বিতর্কিত সাদ সাহেবের উপস্থিতি থেকে মুক্ত থেকে সম্পন্ন হতে পারে।

পূর্ববর্তি সংবাদচাঁপাইনবাবগঞ্জে গভীর রাতে অভিযান, সন্দেহভাজন ১ আটক
পরবর্তি সংবাদউন্নয়ন প্রকল্পের গুণগত মান নিশ্চিত করতে হবে : প্রধানমন্ত্রী