অভিন্ন ইজতেমার ব্যাপারে যেভাবে একমত হলেন তাবলিগের দুই পক্ষ

আবরার আবদুল্লাহ ।।

আগামী ফেব্রুয়ারি টঙ্গীর ইজতেমার মাঠে অনুষ্ঠিত হবে অভিন্ন ইজতেমা। এতে অংশ নেবে তাবলিগ জামাতের বিবাদমান দুটি পক্ষই। আজ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে অভিন্ন ইজতেমার এই সিদ্ধান্ত হয়।

বৈঠক শেষে গণমাধ্যমে জানানো হয়, তাবলিগ জামাতের উভয়পক্ষ অভিন্ন ইজতেমা অনুষ্ঠান ও তাতে অংশ নিতে সম্মত হয়েছে। তবে এবারের ইজতেমায় অংশ নেবেন না ভারতের বিতর্কিত তাবলিগি মুরব্বি মাওলানা সাদ।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন অনেকেই। তারা মনে করছেন, অভিন্ন ইজতেমা তাবলিগ জামাতের দুটি পক্ষকে কাছাকাছি আসতে এবং মতবিরোধ দূর করতে সাহায্য করবে। অন্যদিকে অনেকেই গত ১ ডিসেম্বর ২০১৮-এর ঘটনা স্মরণ করে নানা ধরনের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, যেহেতু মাওলানা সাদ ও তার ভ্রান্ত বিশ্বাসের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি তাই সংঘাতের আশঙ্কা থেকেই যায়।

উলামায়ে কেরাম সাদপন্থীদের ইজতেমা করতে না দেওয়া এবং সাদপন্থীরা ভিন্ন ইজতেমার দাবি করে এলেও শেষ পর্যন্ত অভিন্ন ইজতেমার ব্যাপারে উভয়পক্ষ কীভাবে একমত হলো তা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন অনেকেই।

আরও পড়ুন : ফেব্রুয়ারিতে অভিন্ন ইজতেমা, আসছেন না মাওলানা সাদ

ইসলাম টাইমস বিষয়টি নিয়ে টঙ্গী দারুল উলুমের প্রিন্সিপাল মুফতি মাসউদুল করীম, মাওলানা আমানুল হক, মুফতি কেফায়াতুল্লাহ আজহারিসহ তাবলিগ সংশ্লিষ্ট একাধিক আলেমের সঙ্গে কথা বলেছে।

এছাড়াও সাদপন্থী নেতা তৌহিদুল হকের সঙ্গেও প্রতিবেদক কথা বলেন।

তারা জানিয়েছেন, সরকারের আগ্রহ ও প্রস্তাবে সাড়া দিয়েই উভয়পক্ষ অভিন্ন ইজতেমায় অংশগ্রহণে রাজি হয়েছে।

আজ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকের শুরুতেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল ইজতেমার ব্যাপারে সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি ও প্রত্যাশার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, যেহেতু ইজতেমা হওয়া, না হওয়ার সাথে বাংলাদেশ ও সরকারের ভাবমূর্তি জড়িত তাই সরকার চায় ইজতেমা হোক। আর তাবলিগ সমস্যার সমাধানের জন্য অভিন্ন ইজতেমা হওয়াই ভালো।

উত্তরের উলামায়ে কেরাম বলেন, মাওলানা সাদ ও তার ভ্রান্ত মতবাদই আমাদের আপত্তির মূল জায়গা। তিনি যদি না আসেন এবং তার ভ্রান্ত আকিদার উপস্থাপন না হয় তাহলে উলামায়ে কেরামের আপত্তি থাকবে না। এতে সরকারপক্ষ সম্মত হন।

তবে সাদপন্থীরা আপত্তি করলে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, মাওলানা সাদ এবারের ইজতেমায় অংশগ্রহণ করবেন না। ইজতেমার তারিখ হোক –সম্ভব হলে ইজতেমার আগে এবং না হলে ইজতেমার পরে প্রতিনিধি দল দেওবন্দ যাবেন এবং তাদের মতামত জানতে চাইবেন। দেওবন্দের মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে মাওলানা সাদ আসবেন কী না?

মাওলানা সাদের অনুসারীরা শুরু থেকেই পৃথক ইজতেমার দাবি করে আসছিলেন। তাহলে অভিন্ন ইজতেমার ব্যাপারে একমত হলেন কীভাবে? উত্তরে সাদপন্থী নেতা তৌহিদুল হক জানান, তৃতীয়পক্ষের (উলামায়ে কেরামের) অংশগ্রহণ না থাকা এবং মাওলানা সাদের ইঙ্গিতেই তারা এই সিদ্ধান্তের ব্যাপারে একমত হয়েছেন।

মাওলানা সাদের ইঙ্গিতের বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হজরতজি (মাওলানা সাদ) বলেছেন, আপনারা এক হতে পারছেন না আর আমারও সিডিউল খালি নেই। সুতরাং আপনারা নিজেদের মতো সিদ্ধান্ত নেন।’

আরও পড়ুন : ইজতেমার তারিখ নির্ধারণে কাল ধর্ম মন্ত্রণালয়ে বৈঠক

তবে মাওলানা সাদের অনুপস্থিতিতে ইজতেমার সিদ্ধান্তে নিজেদের অসন্তোষের কথা প্রকাশ করেন তৌহিদুল হক।

ইজতেমার প্রস্তুতি, শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে উভয়পক্ষের পরিকল্পনা জানতে চাইলে তারা জানান, ‘আগামীকালের বৈঠকে (ধর্মমন্ত্রণালয়ে) এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। তবে আজকের বৈঠকে নিরাপত্তার বিষয়ে সরকার সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে বলেও জানান তারা।

ইজতেমার প্রস্তুতির বিষয়ে মাওলানা আমানুল হক বলেন, ‘পুরো দায়িত্ব আমাদের মনে করেই আমরা কাজ করবো। তবে তারা অংশগ্রহণ করলে সুযোগ থাকবে।’

অভিন্ন ইজতেমা নিয়ে আশা ও আশঙ্কা কোনটা শেষ পর্যন্ত বাস্তবে রূপ নেবে তা দেখতে অপেক্ষা করতে হবে আরও কিছুদিন।

পূর্ববর্তি সংবাদময়মনসিংহে শিক্ষককে মারধর, থানায় শিক্ষার্থীদের হামলা
পরবর্তি সংবাদকিশোরগঞ্জে উম্মুল কোরা একাডেমির মাহফিল অনুষ্ঠিত