এবারের ইজতেমা : স্বস্তি, সতর্কতা, অবিশ্বাস!

ওয়ারিস রব্বানী ।।

শেষ পর্যন্ত ইজতেমার তারিখ ঠিক হয়েছে ১৫,১৬,১৭ ফেব্রুয়ারি। বিবাদমান তাবলিগের দুই গ্রুপকে নিয়ে বসার পর ২৪ জানুয়ারি এ সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী।

এর আগের দিনের বৈঠকটি হয়েছিল আরো বড় পরিসরে। তাবলিগের দুই পক্ষের পাশাপাশি আলেমদের উঁচু পর্যায়ের প্রতিনিধিরাও সেখানে ছিলেন। বৈঠকটি হয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর নেতৃত্বে। বৈঠক শেষে বলা হয়েছে, দুই পক্ষ মিলে এবার একটি ইজতেমা হবে। সেখানে দিল্লির বিতর্কিত মাওলানা সাদ সাহেব আসবেন না।

দুটি বৈঠকই হয়েছে মন্ত্রণালয়ে। সিদ্ধান্তও জানানো হয়েছে মন্ত্রীদের পক্ষ থেকে। তবে এ ঘোষণায় তাৎক্ষণিকভাবে তাবলিগ সংশ্লিষ্ট সব মহলে স্বস্তি ছড়িয়ে পড়ার খবর পাওয়া গিয়েছিল।

২৪ জানুয়ারি বৈঠকটি শুধু কাকরাইলের দুই পক্ষের মুরব্বিদের নিয়ে হয়েছে। এ বৈঠকের শেষে ইজতেমায় সাদ সাহেবের আসা-না আসার ব্যাপারে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী একটু ঘুরিয়ে উত্তর দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, কে আসবে, কে আসবে না-এটা সরকার ঠিক করে দেবে না। তবে যে বা যারা এলে দেশে আইন শৃঙ্খলার অবনতি হবে না তারা আসবেন,আর যে বা যারা এলে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হবে, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী তাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে।

আরও পড়ুন : ভারত-পাকিস্তানের কোনো মুরব্বি এবারের ইজতেমায় ফায়সাল হবেন না

২৩ জানুয়ারি একসঙ্গে ইজতেমার ঘোষণা আর ২৪ জানুয়ারি ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর সাদ সাহেবের আসা- না আসা বিষয়ক উত্তরের পর থেকে নানা রকম মন্তব্য, সংশয় ও প্রচার-পাল্টা প্রচার শুরু হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। দেশে সাদপন্থীদের প্রচারপত্রগুলি ঢালাওভাবে বলতে শুরু করেছে, এবারের ইজতেমায় সাদ সাহেব আসছেন। তার আসার ব্যাপারে সরকারের তরফে কোনো বাধা নেই। আপর দিকে বলা হচ্ছে,  আলমি শুরার মাওলানা আহমদ লাট ও মাওলানা ইবরাহিম দেওলা আসার সিদ্ধান্ত থাকলেও তারা আর আসতে পারছেন না। তাদেরকে না কি আসতে দেওয়া হবে না।

আবার এমন কথাও ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে, এবারের ইজতেমায় বিতর্কিত সাদ সাহেবের কর্তৃত্বাধীন নেযামুদ্দিন থেকেও একটি কাফেলা আসছে। অপরদিকে আলমি শুরার কোনো কাফেলাই না কি আসছে না।

বলাই বাহুল্য, এসব বলাবলি ও প্রচার-পাল্টা প্রচারের প্রায় সবকিছুই সাদপন্থীদের অনলাইন প্রচারপত্র কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া প্রচার ও অভিব্যক্তি। কিন্তু এসব প্রচারে এরই মধ্যে নানা রকম দ্বিধা-অবিশ্বাস ছড়িয়ে পড়েছে। ইজতেমার ময়দান কতোটা শান্তিপূর্ণ থাকবে-এ নিয়ে অনেকেই সংশয় প্রকাশ করে ফোনও দিচ্ছেন ।

আরও পড়ুন : অভিন্ন ইজতেমার ব্যাপারে যেভাবে একমত হলেন তাবলিগের দুই পক্ষ

এবার বয়ান কারা কারা করবেন? ময়দানের শৃঙ্খলা ও নেজাম-নজমের দায়িত্বে কারা থাকবেন? উভয় পক্ষ থেকে লোক নিয়ে এসব বিষয়ে কীভাবে সমন্বয় করা হবে?  ইজতেমার বয়ানে ওয়াজাহাত কিংবা এতাআতের কোনো কথা কি কেউ বলবেন?  বললে পরিস্থিতি কেমন হবে? এ জাতীয় প্রশ্ন এখন সাক্ষাতে,ফোনে ও সামাজিক মাধ্যমে সমানেই ঘুরছে।

বাস্তব কোনো সূত্র থেকে অবশ্য এসব প্রশ্নের নির্দিষ্ট উত্তর এখনও আসেনি। নানা রকম প্রচার ও সংশয়ের পক্ষে কোনো সমর্থনও পাওয়া যায়নি। কিন্তু সংশয়,প্রশ্ন ও প্রচার থেমে নেই মোটেও।

কওমি মাদরাসার শিক্ষক-ছাত্র ও সাদ বিরোধী তাবলিগি সাথীদের কেউ কেউ একসঙ্গে ইজতেমার ঘোষণা আসার পর এমন প্রশ্নও সামনে আনছেন যে, দুই পক্ষ একসঙ্গে হয়েই যদি ইজতেমা হয়, তবে ১ডিসেম্বর টঙ্গী ময়দানে আক্রমণ এবং নিরীহ আলেম ও মাদরাসা ছাত্রদের রক্তাক্ত করার বিচার কবে ও কীভাবে হবে? এই বর্বরতার বিচার কি আর কখনো হবে না?

তারা এ-ও বলছেন, তাবলিগের মূল সমস্যা কি শুধু দিল্লির মাওলানা সাদের টঙ্গী ইজতেমায় আসা-না আসার ব্যাপার, না কি তার ছড়িয়ে দেওয়া গুমরাহিমূলক ফিকির ও বক্তব্য? এ দেশের এতায়াতী যারা সাদ সাহেবের কথা ও বিচ্যুতির প্রতি অনুগত এবং এখনও তওবা করেনি, এমনকি তওবা করার দরকারও মনে করে না, তাদের সঙ্গে নিয়ে,  তাদের অবস্থানের বিষয়ে চুপ থেকে ইজতেমার কাজ বাস্তবায়ন করার যৌক্তিকতা কতটুকু?

আলেমদের সিদ্ধান্তের প্রতি আস্থাশীল তাবলিগি সাথীদের কারো কারো প্রশ্ন, তাবলিগের দুই পক্ষকে মিলানোর জন্য এখন আলেম অভিভাবকদের তৃতীয় পক্ষ আখ্যা দিয়ে সরিয়ে রাখা হয়েছে। কিন্তু ইজতেমার আগে-পরে সাদপন্থী-ওয়াসিফপন্থীদের `কারসাজি’তে তাবলিগের নেজামে কিংবা সাদ প্রচারিত গুমরাহি বিস্তারে নতুন কোনো সংকট তৈরি হলে তখন কী হবে? তাবলিগের প্রতিটি কাজ কি এখন থেকে মন্ত্রণালয় থেকে ঠিকঠাক করে দেওয়া হবে? নিজেদের বিরোধ মেটানোর জন্য কি প্রশাসনের ভূমিকা বা হস্তক্ষেপ ছাড়া তাবলিগ জামাতের সামনে আর কোনো রাস্তা খোলা থাকবে না?

আরও পড়ুন : ফেব্রুয়ারিতে অভিন্ন ইজতেমা, আসছেন না মাওলানা সাদ

আসলে এসবই হচ্ছে চলমান প্রশ্ন, সংশয় আর অবিশ্বাস। অনুমান করা যায়, এবারের ইজতেমায় দুই পক্ষের বিরোধ কমিয়ে বা স্থগিত রেখে অন্তত ইজতেমাটা অনুষ্ঠানের জন্যই অনেক বিষয় চোখের আড়ালে সরিয়ে রাখা হয়েছে। কিন্তু এসব চেষ্টার সঙ্গে সঙ্গে শান্তিময় পরিস্তিতি রক্ষা, হক-বিচ্যুতির জায়গাটাকে স্পষ্ট রাখা, আশ্বাস ও আস্থার ব্যাপারগুলো পরিস্কার করার মতো সিদ্ধান্তও দরকার। তাবলিগ সংশ্লিষ্ট সবাই ভেতর-বাইরের পরিকল্পনার সবকিছু জানেন না, কিন্তু ভালোবাসার তাবলিগ নিয়ে সংশয়, উদ্বেগ আর শঙ্কা কিংবা আশাবাদ নিয়ে ভাবনায় বা কথা বলায় কেউ থেমে নেই। ইজতেমার দিন ঘনিয়ে আসার আগেই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলিতে স্বচ্ছ ও নির্দিষ্ট অবস্থান ও অবস্থা সামনে এলে সবার জন্য কল্যাণ, ইজতেমার কামিয়াবির জন্যও সহায়ক।

পূর্ববর্তি সংবাদঅচিরেই বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার পরিণতি ভোগ করবে : ওবায়দুল কাদের
পরবর্তি সংবাদনড়াইলে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ, এক পরিবারের দগ্ধ ৮