কাদিয়ানিদের পক্ষ-নেওয়া মন্ত্রী মুসলমানের জন্য কল্যাণকামী হতে পারেন না : মাওলানা বাহাউদ্দীন যাকারিয়া

ইসলাম টাইমস ডেস্ক : মুসলমানদের ঈমানশূণ্য করার জন্য সাম্রাজ্যবাদী অপশক্তি যে সব গোষ্ঠি বা সম্প্রদায় সৃষ্টি করেছে তার মধ্যে ভয়ঙ্কর একটি গোষ্ঠির নাম কাদিয়ানী৷ এরা মুসলমানদের ঈমানশূন্য করার পাশাপাশি কুফরি শক্তির সাথে ঐক্যবদ্ধ হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে মুসলমানদের উপর যুলুম-নির্যাতন করে আসছে৷ ৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পাকিস্তান আর্মির কাদিয়ানি সদস্যরা আমাদের মা বোনদের ধর্ষণ, লুটতরাজ, বাড়ি-ঘর অগ্নিসংযোগসহ ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ বেশি চালিয়েছিল বলে প্রমাণ পাওয়া যায়৷ এ দেশীয় কাদিয়ানিরাও পাক আর্মিকে নানাভাবে সহযোগিতা করেছিল৷ এ থেকে প্রমাণিত হয় কাদিয়ানি সম্প্রদায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধী ছিল৷

কাদিয়ানিরা ইংরেজ সাম্রাজ্যবাদবিরোধী সংগ্রামেরও বিপক্ষে ছিল৷ তাদের মতে, দখলদার ইংরেজদের বিরুদ্ধে জিহাদ করা হারাম৷ কুফরি শক্তির মদদপুষ্ট কাদিয়ানি সম্প্রদায় সর্বদা মুসলিম উম্মাহর স্বার্থবিরোধী ভূমিকায় অবস্থান নিয়ে থাকে৷ এরা সব সময় মুসলিম উম্মাহর ঐক্যবিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত৷ ইসলামের ছদ্মাবরণে সরলমনা মুসলমানদের মুরতাদ বানানোই এদের প্রাধান টার্গেট৷ মুসলিম রাষ্ট্রের শান্তি-শৃঙ্খলা বিনষ্টের অপতৎপরতায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে এরা৷ ধর্মীয় সম্প্রীতি ধ্বংসে কাদিয়ানি সম্প্রদায় সদা তৎপর৷ ইসলামি তাহজিব-তামাদ্দুন, সংস্কৃতিকে অনৈসলামিক করণে ইয়াহুদ-নাসারাদের সাথে একাত্ম হয়ে কাজ করে৷

কাদিয়ানিরা সরলপ্রাণ মুসলমানদের ধোঁকা দেয়ার জন্য নিজেদের আহমদী মুসলিম জামাত নামে পরিচয় দিয়ে থাকে৷ তাদের ইবাদতখানাকে মসজিদ বলে৷ ইবাদতখানা সামনে বিশাল আকারে কালিমা লেখা শোভা পায়৷ প্রতারণাই হলো এদের মূল হাতিয়ার৷ অজ্ঞ, দরিদ্র ও অনগ্রসর মুসলমানদের প্রতারণার জালে ফাঁসাতে এরা সদা তৎপর৷ ইসলামের সংরক্ষিত পরিভাষা ব্যবহার করে তারা অতি সহজেই সরলপ্রাণ মুসলমানকে প্রতারিত করে থাকে৷ যা সাধারণত অন্য ধর্মাবলম্বীরা করে না৷

প্রত্যেক ধর্মের কিছু সংরক্ষিত পরিভাষা রয়েছে৷ প্রত্যেক ধর্মেরই বেশ কিছু স্বতন্ত্র ইবাদত-বন্দেগী রয়েছে৷ মৌলিক বোধ বিশ্বাসেও রয়েছে ভিন্নতা৷ এক ধর্মের পরিভাষা সাধারণত অপর ধর্মাবলম্বীরা ব্যবহার করে না৷ যদি কেউ করে তা কেবল প্রতারণা, শঠতা, ধোঁকাবাজির উদ্দেশ্যেই করে থাকে৷ আমরা দেখি, কাদিয়ানিরা ব্যাপকভাবে এবং খ্রিস্টানরা স্বল্প পরিসরে ইসলামি পরিভাষা ব্যবহার করে থাকে৷

ইসলাম ধর্মের মৌলিক বিশ্বাস হলো আল্লাহ এক, তাঁর কোন শরিক নেই এবং মুহাম্মদ সা. সর্বশেষ নবী৷ তাঁরপরে আর কোন নবীর আগমন হবে না৷ কাদিয়ানীরা হযরত মুহাম্মদ সা.-কে শেষ নবী বলে বিশ্বাস করে না৷ তাই তারা মির্জা গোলাম আহমদকে নবী বলে বিশ্বাস করে৷

কাদিয়ানীদের ধর্মীয় প্রতারণা থেকে সাধারণ মুসলমানদের রক্ষা করতে হলে, তাদের জন্য ইসলামী পরিভাষার ব্যবহার নিষিদ্ধ করতে হলে, ধর্মীয় সম্প্রীতি বিনষ্ট রোধ করতে হলে, অনতিবিলম্বে অপরাপর মুসলিম দেশের ন্যায় কাদিয়ানীদের অমুসলিম সংখ্যালঘু সম্প্রদায় বলে ঘোষণা করতে হবে৷ এ দেশের উলামায়ে কেরামসহ ধর্মপ্রাণ মুসলমান দীর্ঘ দিন ধরে এ দাবি জানিয়ে আসছেন৷ কিন্তু অতীব দুঃখের বিষয় হলো, কোন সরকারই এ দাবির প্রতি সামান্যতম কর্ণপাত করেনি৷

যার ফলে তারা সংখ্যাঘরিষ্ঠ মুসলিম দেশে ধর্মীয় শান্তি-শৃঙ্খলা বিনষ্টের অপচেষ্টা অনবরত করে চলেছে৷ এরই অংশ হিসেবে পঞ্চগড়ে তাদের জাতীয় ইজতেমার আয়োজন করা৷ জানা গেছে, এজন্য প্রায় আশি বিঘা জমির উপর প্যান্ডেল করছে৷ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বসবাসরত কাদিয়ানীরা এ ইজতিমায় শরিক হবে৷ বিশ্বের নানা দেশ থেকে প্রায় সাত হাজার কাদিয়ানী ধর্মাবলম্বীরা এ ইজতিমায় অংশগ্রহণ করবে৷ সাধারণ মানুষকে ধোঁকা দেয়ার জন্য জাতীয় ইজতেমা নাম দিয়েছে৷

শোনা যাচ্ছে, এ এলাকার সংসদ সদস্য যিনি রেল মন্ত্রীও বটে, কাদিয়ানীদের এ ইজতেমার পক্ষাবলম্বন করেছেন৷ তার ভাষায় কাদিয়ানীরা ভাল মানুষ৷ তাকে নিমন্ত্রণও করেছে তারা৷

দুঃখের বিষয়, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের একজন মন্ত্রীর কাছে কাদিয়ানীরা কিভাবে ভাল মানুষ হিসেবে বিবেচিত হয়? একজন মুসলমান দাবিদার কিভাবে কাদিয়ানীদের পক্ষাবলম্বন করতে পারে? যারা আকিদায়ে খতমে নবুওয়াতের দুশমন মন্ত্রী কিভাবে তাদের দাওয়াত গ্রহণ করতে পারেন? খতমে নবুওয়াতের রাজ-সিংহাসনে যারা কুঠারাঘাত করে তাদের হয়ে একজন মন্ত্রী মুসলমানদের কী করে শাসাতে পারেন?

আরও পড়ৃন : পঞ্চগড়ে কাদিয়ানি ইজতেমা : মন্ত্রী বললেন, কাদিয়ানিরা ভালো!

যে মন্ত্রী কাদিয়ানীদের পক্ষাবলম্বন করেন সে কখনও মুসলমানদের কল্যাণকামী হতে পারে না৷ এমন লোক মন্ত্রীসভায় থাকার উপযুক্ত কী করে হন? এমন লোককে মন্ত্রীসভা থেকে অপসারনের দাবীতে জনতা ফুঁসে উঠবে যে কোন সময় ৷

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট মুসলিম জনতার দাবি, পঞ্চগড়ে আহুত কাদিয়ানীদের ইজতিমা অবিলম্বে নিষিদ্ধ করুন, কাদিয়ানীভক্ত মন্ত্রীকে মন্ত্রীসভা থেকে অপসারন করুন ৷ তাদের রাষ্ট্রীয়ভাবে সংখ্যালঘু অমুসলিম সম্প্রদায় ঘোষণা করুন ৷ তাদের জন্য ইসলামী পরিভাষার ব্যবহার আইনত দন্ডনীয় বলে জাতীয় সংসদে আইন পাশ করুন৷

পূর্ববর্তি সংবাদঠাকুরগাঁওয়ে বিজিবি-এলাকাবাসীর সংঘর্ষ, নিহত ৪, আহত ১৬
পরবর্তি সংবাদকাদিয়ানি সম্প্রদায়ের আসল রূপ