ইজতেমা মাঠের নিরাপত্তা নিয়ে সংশয়ের কোনো সুযোগ নেই : ইঞ্জিনিয়ার মাহফুজুল হান্নান

আগামীকাল (১৪ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে শুরু হচ্ছে তাবলিগ জামাতের বিশ্ব ইজতেমা। যা শেষ হবে আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি শনিবার। এরপর একই মাঠে ‘ইজতেমা’ করবে সাদপন্থীরা। অভিযোগ উঠেছে, ইজতেমা নিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে একটি পক্ষ। তারা ইজতেমা মাঠের নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন বিষয়ে মানুষকে ভীত-সন্ত্রস্ত করার চেষ্টা করছে।

এসব সংশয় ও অপপ্রচারের বিপরীতে ইজতেমার প্রস্তুতি ও মাঠের সর্বশেষ অবস্থা তুলে ধরেছেন বিশিষ্ট দাঈ ও কাকরাইলের মুরব্বি ইন্জিনিয়ার মাহফুজুল হান্নান। তিনি কাকরাইলের পক্ষ থেকে ইজতেমা মাঠ প্রস্তুতের সার্বিক কার্যক্রম তত্ত্বাবধান করছেন। ইসলাম টাইমসের পক্ষ থেকে তার সঙ্গে কথা বলেন আতাউর রহমান খসরু


ইসলাম টাইমস : ইজতেমার সার্বিক প্রস্তুতি এখন কোন পর্যায়ে?

মাহফুজুল হান্নান : আল হামদুলিল্লাহ! ইজতেমার প্রস্তুতি একদম শেষের দিকে। মৌলিক কাজগুলো আগেই শেষ হয়েছে। তবে সময় কম পাওয়ায় টুকটাক কিছু কাজ বাকি ছিলো। সেগুলো আজ শেষ হবে বলে আমরা আশা করছি। আমরা খিত্তার সাথীদের আজকেই মাঠে চলে আসতে বলেছি, কারণ প্রত্যেক খিত্তার জামাত যেন নিজ খিত্তার অবশিষ্ট কাজ (যদি থাকে) সম্পন্ন করে নিতে পারেন।

আমাদের ধারণা, এই মুহূর্তে (দুপুর সাড়ে ৩টা) কমপক্ষে দুই লাখ সাথী মাঠের কাজে নিয়োজিত আছেন।

ইসলাম টাইমস : মাঠের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন অনেকেই।

মাহফুজুল হান্নান : কুরআন-হাদিসে নিরাপত্তা লাভের সেসব আমল রয়েছে, আমরা তা পালন করেছি এবং করছি। নিরাপত্তা আল্লাহ দেবেন ইনশাআল্লাহ! সরকারও এই ব্যাপারে বদ্ধ পরিকর। এবার মাঠের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে কয়েক হাজার ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। কেউ কোনো অপকর্ম করতে এলে ধরা খাবে।

ইসলাম টাইমস : দুইপক্ষের ইজতেমার মাঝে সময়ের যে ব্যবধান তাতে কী সংঘাতের কোনো সম্ভাবনা আছে?

মাহফুজুল হান্নান : আমি সাথীদের বলবো, আপনারা আল্লাহর উপর ভরসা রেখে নির্ভয়ে মাঠে আসুন। আমরা ইজতেমা শেষ করার ১২ ঘণ্টা পর তারা মাঠে প্রবেশ করবে। আমাদের মোনাজাত যদি ১১-১২টার মধ্যে শেষ হয় এরপর ১২ ঘণ্টা সময় পাবো মাঠ ছেড়ে যাওয়ার জন্য। তারও ১২ ঘণ্টা পর তারা প্রবেশ করবে। সুতরাং সংঘাতের কোনো সম্ভাবনা নেই।

আমার জানা মতে, সরকার এবার অনেক বেশি সতর্ক। প্রায় ২০ হাজার নিরাপত্তাকর্মী নিয়োজিত করা হয়েছে।

ইসলাম টাইমস : ইজতেমার শুরু ও শেষ হওয়া নিয়েও ভিন্ন ভিন্ন কথা শোনা যাচ্ছে।

মাহফুজুল হান্নান : ইজতেমার আমল আগামীকাল সকাল থেকেই শুরু হবে এবং শনিবার সকাল ১০টার পর আখেরি মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে। এটা নিয়ে সংশয়ের কোনো সুযোগ নেই।

তবে শুনছি, একটা পক্ষ মিথ্যা তথ্য প্রচার করে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। তারা নাকি মাঠ ভরার জন্য গার্মেন্টস শ্রমিক ভাড়া করছেন। আল্লাহ ভালো জানেন তিনি কার শ্রম কবুল করবেন।

ইসলাম টাইমস : এবারের ইজতেমায় বিদেশিদের অংশগ্রহণ কেমন হবে? এর সাথে মাওলানা সাদের আসা, না আসার কোনো সম্পর্ক আছে?

মাহফুজুল হান্নান : আমরাও ধারণা করছি, এবার বিদেশি জামাত কম আসবে। তবে এর সাথে মাওলানা সাদের আসা, না আসার কোনো সম্পর্ক নেই। বিদেশি জামাত কম হওয়ার ধারণা করছি যেসব কারণে তাহলো, এর আগে ইজতেমার তারিখ দুইবার পেছানোর কারণে তাদের অনেকের টিকিট ফরসিব হয়েছে, সময়ের স্বল্পতার জন্য অনেকের কাছে দাওয়াত পৌঁছানো যায়নি, অথবা এমন সময় পৌঁছেছে যখন তিনি সময় মেলাতে পারেননি, এছাড়াও এবার ভিসা সংক্রান্ত কিছু জটিলতাও তৈরি হয়েছে।

ইজতেমা যদি গত বছরের ঘোষিত সময়ে হতো এবং বিদেশি জামাত কম হতো, তাহলে মাওলানা সাদকে জড়িয়ে যে প্রচার চালোনো হচ্ছে তা সত্য প্রমাণিত হতো। আমরাও দেখবো তাদের ইজতেমায় কতোজন বিদেশি উপস্থিত হন। ওটা তো মাওলানা সাদের অনুগতদের ইজতেমা।

ইসলাম টাইমস : তাবলিগ জামাতেরই একটি পক্ষ প্রচার করছে ইজতেমা শুরুই হবে ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে। তারা আপনাদের ইজতেমা স্বীকৃতি দিচ্ছে না। আপনারা তাদের ব্যাপারে কী বলবেন?

মাহফুজুল হান্নান : তাদের আমল তাদের, আমাদের আমল আমাদের। তাদের ব্যাপারে মানুষ বলে -মিথ্যাই নাকি তাদের পুঁজি। আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করুন। তাদের ব্যাপারে আমরা বলবো, এই মাঠে তাদের কোনো অধিকার নেই। কোনো মানুষ কী তার নিজের ঘরে তাণ্ডব চালায়? ঘর যদি বেদখল হয় তাহলে কী কেউ ঘরে ঢুকলে পারলে তা ধ্বংস করে দেওয়ার চেষ্টা করে? দরজা-জানালা ভাঙবে? জেনেরেটর ভাঙবে? ১ ডিসেম্বর তারা তাদের কাজের মাধ্যমে প্রমাণ করেছে এই মাঠ তাদের না।

তারা সরকারের করুণায় এখানে ইজতেমা করছে। নতুবা তাদের ইজতেমা করার কোনো অধিকার আছে বলে আমি মনে করি না। কুরআন-হাদিসের বাইরে যাওয়া একজন মানুষকে নিয়ে যারা পথ চলতে চায় তাদের ইজতেমা জাতির কী কাজে আসবে?

ইসলাম টাইমস : সবকিছু মিলিয়ে এবারের ইজতেমা কেমন হবে বলে আশা করছেন?

মাহফুজুল হান্নান : আমাদের ইজতেমায় সাধারণ মানুষ ও উলামায়ে কেরামের সমন্বয় হবে। সুতরাং আমরা আশা করছি, ইজতেমা অনেক বেশি ফলপ্রসূ হবে। মানুষ অনেক বেশি উপকৃত হবে। জনসমাগম যেমন হবে, অনেক বেশি জামাতও আল্লাহর রাস্তায় বের হওয়ার জন্য প্রস্তুত হবে।ইনশাআল্লাহ! আমরা আল্লাহর রহমত চাই, তার সাহায্য ও দয়া চাই। তিনি যেন আমাদের মেহনতকে কবুল করে নেন। আমিন।

ইসলাম টাইমস : ব্যস্ততার মধ্যেও সময় দেওয়ায় আপনাকে ধন্যবাদ।

মাহফুজুল হান্নান : আপনাকেও ধন্যবাদ।

পূর্ববর্তি সংবাদনবীগণের প্রতি মির্জা কাদিয়ানির অবমাননা এবং সকল মুসলমানকে কাফের সাব্যস্ত করা
পরবর্তি সংবাদভারতে মদের দোকান বন্ধের দাবিতে জনতার বিক্ষোভ