ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক ও মানসিক সাহায্যকে গুরুত্ব দিতে হবে : মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ সাদী

চকবাজারের চুড়িহাট্টায় মর্মান্তিক অগ্নিকাণ্ডে প্রাণ হারিয়েছেন ৬৭ জন। পুড়ে ছাই হয়ে গেছে বেশ কয়েকটি ভবন। আহত হয়েছেন পঞ্চাশের অধিক মানুষ। ভয়াবহ এই দুর্ঘটনার কারণ ও প্রতিকার নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য প্রস্তাবনা আসছে সমাজের বিভিন্ন মহল থেকে। কিন্তু একজন মুসলিম হিসেবে আমরা এসব বিপর্যয়কে কীভাবে দেখবো, তার প্রতিরোধ ও প্রতিকারে কী করবো তা নিয়ে কথা বলেছেন দেশের বিশিষ্ট আলেম ও ইত্তেফাকুল উলামা ময়মনসিংহের মজলিসে আলেমার সভাপতি মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ সাদী। সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেছেন আতাউর রহমান খসরু

ইসলাম টাইমস : দুর্ঘটনা রোধে ইসলামের নির্দেশনা কী?

মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ সাদী : মানুষ দুর্ঘটনার শিকার হয় ভুল চিন্তা, অসচেতনা ও লোভে পড়ে। ইসলাম এর সবগুলো থেকে মানুষকে সতর্ক করেছে। যেমন, হাদিসে বলা হয়েছে, ঘুমানোর আগে আগুন নিভিয়ে দিতে। এটা সতর্কতার। এই যুগে মানুষের ঘরে হয়তো সেভাবে আগুন থাকে না। কিন্তু আপনি দেখবেন, বিদ্যুতের তার, সুইচবোর্ড, কয়েলের আগুন ইত্যাদির ব্যাপারে মানুষ অসচেতন।

মুমিন সম্পদের মোহে পড়ে নিজের এবং অন্যের জীবনকে হুমকির মুখে ফেলবে না, কিছু হবে না এমন চিন্তার ফাঁদে পড়বে না। একজন মুমিন অবশ্যই সচেতন হবেন।

হ্যা, সতর্কতা দিয়েই আমরা পুরোপুরি বেঁচে যাবো এমন ধারণাও ভুল। আল্লাহই সর্বোত্তম হেফাজতকারী। তার কাছে নিরাপত্তার জন্য দোয়া করাও আমাদের দায়িত্ব।

ইসলাম টাইমস : চকবাজারে যে দুর্ঘটনা ঘটলো –এমন ঘটনাকে মুমিন হিসেবে আমরা কীভাবে দেখবো?

মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ সাদী : একজন মুমিন হিসেবে আমাদের প্রথম কাজ হবে আল্লাহমুখী হওয়া এবং পরকালমুখী। কারণ, আল্লাহ মুমিনকে এমন কঠিন পরীক্ষায় ফেলেন তার নৈকট্য দান ও মুমিনের মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য। আরেকটা বিষয় হলো, এমন ঘটনা দুনিয়া ও দুনিয়ার ক্ষণস্থায়িত্বেরই প্রমাণ বহন করে। আমরা যেন সেটাও মনে রাখি।

আপনি দেখবেন, অনেকেই এমন দুর্ঘটনাকে আল্লাহর গজব বা শাস্তি হিসেবে উল্লেখ করেন। আবার অনেকে আল্লাহর পরীক্ষা বুঝতে না পেরে নিজের ভাগ্যকে দোষারোপ করেন। এর কোনোটাই উচিৎ নয়। আমাদের কাজ হলো, বিপদে পড়লে ধৈর্য ধারণ করা, আল্লাহর কাছে পরিত্রাণ চাওয়া এবং নিজের ভুল-ভ্রান্তির জন্য ক্ষমা চাওয়া।

ইসলাম টাইমস : অনেকেই এসব দুর্ঘটনার জন্য একশ্রেণির ব্যবসায়ীর অর্থলিপ্সাকে দায়ি করছেন।

মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ সাদী : হ্যা, শ্রেণির মানুষ অর্থ উপার্জনের জন্য এমন সব কাজ করেন যাতে মানুষের জীবন ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যায়। রাষ্ট্রের দায়িত্ব হলো, তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া এবং সাধারণ মানুষের জীবন যেন নিরাপদ থাকে সেই বিষয়টি নিশ্চিত করা।

ইসলাম টাইমস : দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য আমরা কী করবো?

মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ সাদী : ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানোর মূল দায়িত্ব রাষ্ট্রের। রাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেবে এটাই নিয়ম। তবে অনেক সময় রাষ্ট্র সেটা করে না বা করার সুযোগও থাকে না; এমনকি রাষ্ট্রের দৃষ্টিগোচরও হয় না, তখন আমাদের দায়িত্ব হলো সামর্থ্য অনুযায়ী পাশে দাঁড়ানো।

একজন মানুষ এমন হতে পারে, যার আর্থিক সাহায্যের প্রয়োজন নেই। কিন্তু দুর্ঘটনার কারণে সে যে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত –এজন্য তারও সাহায্য দরকার। সেটা হলো, সহমর্মিতা ও সমবেদনা। একটু সাহস যোগানো। আমাদের উচিৎ সবগুলো দিক খেয়াল রাখা।

ইসলাম টাইমস : এ বিষয়ে আপনি যদি আর কিছু বলতে চান?

মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ সাদী : আমি পাঠকের উদ্দেশে বলবো, আসুন! আমরা আল্লাহর বান্দা হয়ে যায়। আল্লাহমুখী হয়ে যায়। সব সময় মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত থাকি। অন্যের মৃত্যু ও বিপদ থেকে দুনিয়া ও আখেরাত উভয় ক্ষেত্রে শিক্ষাগ্রহণ করি। বিশেষ করে, বেশি বেশি ইস্তেগফার (আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া) করি। আল্লাহ আমাদের দুনিয়া ও আখেরাত -দুই জীবনকেই সুন্দর করুন। আমিন।

পূর্ববর্তি সংবাদ১২ লাখের মধ্যে ৮ লাখ রোহিঙ্গা ফেরত পাঠানোর চেষ্টা চলছে : পররাষ্ট্রমন্ত্রী
পরবর্তি সংবাদনারায়ণগঞ্জে ট্রাকচাপায় গার্মেন্টস কর্মকর্তা নিহত