সেনা-চিরুনি অভিযানের মুখে কাশ্মীরিদের অসহযোগ আন্দোলনের ডাক

আবরার আবদুল্লাহ ।।

ভারত অধিকৃত কাশ্মীরের পরিবেশ ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। কাশ্মীরে এক আত্মঘাতী বোমা হামলায় ভারতীয় প্যারামিলিটারি বাহিনীর ৪০ সদস্য নিহত হওয়ার পর নতুন এই উত্তেজনা শুরু হয়েছে। এই হামলার পর ভারত-পাকিস্তানের ভেতর যেমন উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হচ্ছে, তেমনি মুখোমুখি অবস্থায় রয়েছে কাশ্মীরের সাধারণ মানুষ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা।

একদিকে ভারতীয় বাহিনীগুলো কাশ্মীরে ব্যাপক ও দীর্ঘ মেয়াদি এক সেনা অভিযান শুরু করেছে, অন্যদিকে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলন শুরু করেছে কাশ্মীরিরা। ভারত সরকার কাশ্মীরে ১০ হাজার নতুন সেনা নিয়োগ দিয়েছে এবং কাশ্মীরিরা দোকান-পাট, বাজার-ঘাটসহ সব ধরনের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছে।

গতকাল রোববার কাশ্মীরের দক্ষিণ কুলগামের তুরিগাম গ্রামে এক ভারতবিরোধী বিক্ষোভে হাজার হাজার কাশ্মীরি অংশগ্রহণ করেছে। এ সময় নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে সংঘর্ষ ও পাথর নিক্ষেপের ঘটনাও ঘটে। সংঘাতে একজন সেনা অফিসারসহ দু’জন সেনা সদস্য আহত হন। গতকাল রোববার পুরো কাশ্মীর ছিলো বিক্ষোভে উত্তাল।

Related image

একই সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরাও আগ্রাসী হয়ে উঠছে। তারা বিক্ষোভকারীদের উপর গুলি, টিয়ারশেল নিক্ষেপ ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করছে। এতে ব্যাপক হতাহতের ঘটনা ঘটছে।

পুলিশ ও প্যারামিলিটারি বাহিনীর সদস্যরা শ্রীনগরের রাস্তায় রাস্তায় টহল দিচ্ছে এবং একটি শক্ত নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলার চেষ্টা করছে। যেন কোনো ধরনের বিক্ষোভ বা সংঘাত তৈরি না হয়। এতে তারা স্বয়ংক্রিয় রাইফেল, দাঙ্গা প্রতিরোধক পোশাক-অস্ত্র-যানবাহন, লোহার ব্যারিকেট ব্যবহার করছে। মূলত নিরাপত্তা কর্মীরাই শ্রীনগরকে একটি বিচ্ছিন্ন নগরে পরিণত করেছে।

গত শুক্রবার রাতে কাশ্মীরে এই বিশেষ সেনা অভিযান শুরু হয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, ইসলামপন্থী রাজনীতিকদের বিশেষভাবে টার্গেট করছে সেনারা। বিশেষত যারা কাশ্মীরের অখণ্ডতা ও স্বাধীনতার কথা বলে।

এই পর্যন্ত কাশ্মীরের চারশো রাজনৈতিক নেতা-কর্মী গ্রেফতার হয়েছে। ভারতবিরোধী বিক্ষোভের ব্যাপারে স্থানীয়দের বারবার সতর্ক করা হচ্ছে। ভারতবিরোধী বিক্ষোভ বন্ধ করার জন্যই সেনা অভিযান শুরু হয়েছে বলে দাবি করছেন স্থানীয়রা।

কাশ্মীরের স্বাধীনতাপন্থী নেতা আবদুল হামিদ ফায়াজ ও মুহাম্মদ ইয়াসিন মালিক (জম্মু-কাশ্মীর লিবারেশন ফ্রন্টের প্রধান) সেনা অভিযানের সময় আটক হয়েছেন।

Image result for crackdown by India

অপর স্বাধীনতাকামী নেতা মীর ওয়াইজ ফারুক সেনা অভিযান বন্ধের আহবান জানিয়ে বলেছেন, ভারতের এই সেনা অভিযান ব্যর্থ হবে এবং কাশ্মীরের জনগণ তাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে কখনো সরে যাবে না।

তিনি আরও বলেন, ভারত কাশ্মীরিদের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়েছে। এখন তারা পাকিস্তানের সঙ্গে বিতর্কে লিপ্ত হয়েছে। আমরা ভারত সরকারের প্রতি আহবান জানাবো, তারা যেন শক্তি প্রয়োগ বন্ধ করে এবং আলোচনা দুয়ার খুলে দেয়। যেন আমরা কারো পক্ষাবলম্বনে বাধ্য না হই। এই সেনা অভিযান মানুষের ক্ষোভ বাড়িয়েই তুলবে এবং যুবকদের অস্ত্র হাতে নিতে বাধ্য করবে।

কাশ্মীরের জনগণ ১৯৮৯ সাল থেকে ভারতীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম করছে। এ পর্যন্ত ৭০ হাজার কাশ্মীরি ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে প্রাণ হারিয়েছে।

সাধারণ কাশ্মীরিদের ধারণা, নতুন সেনা অভিযানের ফলে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে জড়িয়ে যেতে পারে অথবা ভারতীয় সংবিধান প্রদত্ত কাশ্মীরের বিশেষ সুবিধা প্রত্যাহার করা হতে পারে।

ডেইলি সাবাহ অবলম্বনে

পূর্ববর্তি সংবাদসন্তানকে বাঁচাতে লঞ্চ থেকে নদীতে ঝাঁপ দিলেন মা
পরবর্তি সংবাদতুচ্ছ ঘটনায় প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাত :  নিহত ১