মানুষ আমাদের প্রশ্ন করছে, এতোদিন মাঠে সক্রিয় ছিলেন না কেন : মাওলানা নুরুল ইসলাম

সম্প্রতি পঞ্চগড়ের কাদিয়ানিদের ইজতেমা করার উদ্যোগ এবং তা বন্ধে দেশব্যাপী আন্দোলন খতমে নবুওয়াত ও কাদিয়ানি ইস্যুর প্রতি নতুন করে দেশের সাধারণ মুসলমানের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। দীর্ঘ বিরতির পর আবারও আলোচনা উঠেছে খতমে নবুওয়াতের বিষয়টি। দেশের মানুষের ভেতর জেগে ওঠা এই সজাগ-সচেতন দাবি রাষ্ট্রের কাছে পৌঁছে দিতে চাচ্ছেন খতমে নবুওয়াতের পক্ষে কাজ করা সংগঠনগুলো।

সেই সূত্রে আন্তর্জাতিক তাহাফফুজে খতমে নবুওয়াত ধারাবাহিকভাবে কিছু কর্মসূচিও বাস্তবায়ন করছে। দীর্ঘ বিরতি ও তারপর এই নতুন উদ্যম ও কর্মসূচি নিয়ে কথা বলেছেন, আন্তর্জাতিক তাহাফফুজে খতমে নবুওয়াতের মহাসচিব মাওলানা নুরুল ইসলাম জিহাদি। তার সঙ্গে কথা বলেন আতাউর রহমান খসরু

ইসলাম টাইমস : দীর্ঘ একটা বিরতির আর খতমে নবুওয়াত আন্দোলনে নতুন উদ্যম দেখা যাচ্ছে। এর কারণ কী?

মাওলানা ‍নুরুল ইসলাম : খতমে নবুওয়াত আন্দোলন নতুন উদ্যমে শুরু হওয়ার কারণ উপযুক্ত পরিবেশ ও প্রেক্ষাপট তৈরি হওয়া। পঞ্চগড়ের কাদিয়ানি ইজতেমার উদ্যোগ আমাদের উদ্যমী করেছে কোনো সন্দেহ নেই। তাছাড়া এখন আন্দোলনের একটি অনুকূল পরিবেশও এখন বিরাজ করছে বলেও আমরা মনে করছি।

ইসলাম টাইমস : কোন লক্ষ্য সামনে রেখে নতুন করে কাজ শুরু করলেন?

মাওলানা নুরুল ইসলাম : পূর্বে যেসব দাবি সামনে রেখে আমরা আন্দোলন করেছিলাম, এখনও আমরা সেই দাবি সামনে রেখেই আন্দোলন করছি। তাহলো, কাদিয়ানিদের অমুসলিম ঘোষণা করতে হবে, তাদের জন্য মুসলিম পরিভাষা ব্যবহার নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে, তারা যেসব বই-পুস্তকের মাধ্যমে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে তা বাজেয়াপ্ত করতে হবে।

ইসলাম টাইমস : কাদিয়ানিদের নিয়ে কাজ করেন –এমন অনেকেই বলছেন, বিগত ১০ বছরে কাদিয়ানি বিরোধী উল্লেখযোগ্য কোনো আন্দোলন হয়নি। মধ্যখানের এই শূন্যতা কেন তৈরি হলো?

মাওলানা নুরুল ইসলাম : পরিস্থিতির কারণে হয়তো মিছিল-মিটিং হয়নি। তবে আমাদের কাজ বন্ধ ছিলো তা নয়। আমরা খতমে নবুওয়াতের পক্ষে কাজ করেছি এবং অনেক জায়গায় সফলও হয়েছি পেছনের দশ বছরে। টাঙ্গাইলের ঘাটাইল তারা ইবাদতখানা করতে চেয়েছিলো, সেটা মুসলমানরা প্রতিহত করেছে এবং সেখানে মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে। এভাবে দেশের বিভিন্ন জায়গায় আমরা সফল আন্দোলন করেছি।

হ্যা, বাকিটা হলো জোয়ার-ভাটার মতো। কিছু ভাটা যাচ্ছিলো এখন আবার জোয়ার শুরু হলো।

ইসলাম টাইমস : আপনাদের প্রধান দাবি কাদিয়ানিদের রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম ঘোষণা করা। সেটা কেন দরকার মনে করেন?

মাওলানা নুরুল ইসলাম : রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম ঘোষণা না দেওয়ার কারণে তারা মুসলমানের সব সুবিধা ভোগ করছে। তাদের ইবাদতখানাকে মসজিদ বলা হচ্ছে, তাদের জাতীয় পরিচয়পত্রে মুসলিম লেখা হচ্ছে, তারা মুসলিম পরিচয় ধারণ করে হজ্জ করছে –এমন অনেক পার্থক্য রয়েছে। সবচেয়ে বড় সমস্যা তারা মুসলিম পরিচয় দিয়ে মুসলিমদের প্রতারিত করছে।

ইসলাম টাইমস : নতুন করে আন্দোলন শুরু করার পর মানুষের কেমন সাড়া পাচ্ছেন?

মাওলানা নুরুল ইসলাম : অনেক বেশি সাড়া পাচ্ছি। তারা আমাদের প্রশ্ন করছে, এতোদিন কেন আমরা মাঠে সক্রিয় ছিলাম না। আসলে তারা জানেন না আমাদের কার্যক্রম কখনো বন্ধ ছিলো না।

মানুষের আবেগ, উৎসাহ, উদ্দীপনা ও সহযোগিতা সবকিছুই আমরা পাচ্ছি। এবং ষোল আনা পাচ্ছি।

ইসলাম টাইমস : ইমামদের আলাদা সম্মেলনের উদ্দেশ্য কী?

মাওলানা নুরুল ইসলাম : ইমামরা হলেন, সমাজের সবচেয়ে কাছের মানুষ। আলেমদের মধ্যে তাদের সমাজ সম্পৃক্তা তুলনামূলক বেশি। তাই ইমামদের সামনে যদি খতমে নবুওয়াতের গুরুত্ব তুলে ধরা যায় এবং তা মানুষকে বোঝানোর কৌশল তাদের শেখানো যায় তাহলে আমাদের এই ঈমানি আন্দোলন অনেক সহজ হবে বলেই আমরা মনে করছি।

তাছাড়া ইমামদের মধ্যে খতমে নবুওয়াতের চর্চা থাকলে সাধারণ মানুষও উপকৃত হবে। ইমামরা হলেন বাল্বের মতো তারা যতো বেশি উজ্জ্বল হবেন, সমাজ ততো বেশি আলোকিত হবে।

ইসলাম টাইমস : ঢাকার বাইরে এমন ইমাম সম্মেলন করার ইচ্ছে কী আছে আপনাদের?

মাওলানা নুরুল ইসলাম : ইচ্ছে তো আছেই। তো এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। বিষয়টি নিয়ে আমাদের কেন্দ্রীয় কমিটি ভাবছে।

ইসলাম টাইমস : আপনারা একটি মহাসমাবেশের ঘোষণা দিয়েছেন। এই সমাবেশ ও সমাবেশ পরবর্তী পরিকল্পনা নিয়ে যদি কিছু বলতেন?

মাওলানা নুরুল ইসলাম : মহাসমাবেশের মাধ্যমে আমরা রাষ্ট্রের কাছে এ দেশের সাধারণ মানুষের হৃদয়ের দাবি পৌঁছে দিতে চাই। কাদিয়ানিদের অমুসলিম ঘোষণা করা যে, সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের প্রাণের তা এই কর্মসূচির মাধ্যমে প্রতিফলিত করতে চাই। এবং এই মহাসমাবেশের মাধ্যমে খতমে নবুওয়াতের আন্দোলনকে চূড়ান্ত লক্ষ্যে নিয়ে যেতে চাই।

পূর্ববর্তি সংবাদবিবাড়িয়ায় খেলাকে কেন্দ্র করে বৃদ্ধাকে পিটিয়ে হত্যা
পরবর্তি সংবাদএকটি পণ্য কিস্তির মেয়াদের কম-বেশির ভিত্তিতে ভিন্ন ভিন্ন দামে বিক্রি করা যাবে?