সাহাবায়ে কেরামের প্রতি শ্রদ্ধা, আস্থা ও মহব্বত পোষণ করা উম্মতের দায়িত্ব: মাওলানা যাকারিয়া আবদুল্লাহ

সাহাবী। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সহচর। যারা ঈমানের সঙ্গে রাসূলুল্লাহকে দেখেছেন এবং ঈমানের সঙ্গে মৃত্যুবরণ করেছেন- তারাই সাহাবায়ে কেরাম। এই সাহাবায়ে কেরাম হচ্ছেন এ উম্মতের মধ্যে দীনের প্রথম ধারক-বাহক। কোনো একজন সাহাবি বা সাহাবায়ে কেরাম সম্পর্কে কেমন হবে উম্মতের অনুভূতি, আচরণ? তাদের প্রতি উম্মতের পরবর্তীদের শ্রদ্ধার সম্পর্ক থাকবে না কি সমালোচনার? মুসলিম উম্মাহর মাঝে তাদের অবস্থান কী? এ নিয়ে ইসলাম টাইমসের সঙ্গে কথা বলেছেন মারকাযুদ দাওয়াহ আলইসলামিয়া ঢাকার উলূমুল হাদীসের উসতায, মাসিক আলকাউসারের সহ-সম্পাদক, উত্তরা ৭ নম্বর সেক্টর মসজিদের খতিব মাওলানা মুহাম্মাদ যাকারিয়া আবদুল্লাহ। তার সঙ্গে ইসলাম টাইমসের পক্ষ থেকে আলাপনে ছিলেন আবু তাশরীফ

ইসলাম টাইমস : সাহাবায়ে কেরামের মাকাম ও অবস্থান বিষয়ে উম্মতের দৃষ্টিভঙ্গি কেমন হওয়া উচিত?

মাওলানা যাকারিয়া আবদুল্লাহ : সাহাবায়ে কেরাম তো হচ্ছেন সাহাবায়ে কেরাম। রাসূলের সোহবত তারা লাভ করেছেন। দীনের প্রথম ধারক-বাহক। উম্মতের পূর্বসূরী। তাদের মেহনত ও ইখলাসের মধ্য দিয়েই এই উম্মতের কাছে দীন পৌঁছেছে। এসব বিষয় সামনে রেখে উম্মতের দায়িত্ব হচ্ছে তাদের প্রতি শ্রদ্ধা, আস্থা ও মহব্বত পোষণ করা ও প্রকাশ করা।

ইসলাম টাইমস : সাহাবায়ে কেরামের কারও যদি কোনো ভুলত্রুটি হয়ে গিয়ে থাকে এটাকে উম্মতের সদস্যরা কীভাবে গ্রহণ করবে বা কী অবস্থান গ্রহণ করবে?

মাওলানা যাকারিয়া আবদুল্লাহ : কোনো সাহাবীর কোনো ভুল হতে পারে না- এমন নয়। তাদেরকে মাসুম বা নিষ্পাপ মনে করা হয় না। আমরা এভাবে বলিও না। কিন্তু উম্মতের দায়িত্ব হচ্ছে, সেসব ‘ভুলত্রুটি’ বিনা কারণে আলোচনায় না আনা। তাদের ভুলেরও তো বিভিন্ন স্তর থাকতে পারে। কোনো কোনো ভুল আছে ইজতেহাদি ভুল। সেটা অনুধাবন করার চেষ্টা করা উচিত। আর আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআত সাহাবায়ে কেরামের প্রতি যে দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করেন- সে অনুযায়ী চলা উচিত সবার। সাহাবায়ে কেরামের কোনো কোনো ভুলের বিষয়ে কুরআন শরীফে ঘোষণা এসেছে- আল্লাহ তাআলা তাদের মাফ করে দিয়েছেন। সামগ্রিকভাবে তারা যে মাফপ্রাপ্ত একটি মহান জামাত- কুরআন-হাদীসে সে ঘোষণা এসেছে একাধিক জায়গায়। সুতরাং তাদের কারও কোনো ভুলকে- যদি সেটা ভুল হয়েও থাকে- তাদের শ্রেষ্ঠত্ব, নিষ্ঠা, অবদান এবং তাদের ব্যাপারে কুরআন-হাদীসের ঘোষণা সামনে নিয়ে নিজেদের অবস্থান ঠিক করা ও ঠিক রাখা উম্মতের দায়িত্ব।

ইসলাম টাইমস : সাহাবায়ে কেরামের ক্ষেত্রে আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআতের দৃষ্টিভঙ্গি ও নীতিটি কী- একটু বিশ্লেষণ করবেন?

মাওলানা যাকারিয়া আবদুল্লাহ : সাহাবায়ে কেরামের কিংবা তাদের যে কোনো একজনের কোনো ভুলের কথা সামনে এলে প্রথমে দেখতে হবে, যে ভুলটার কথা বলা হচ্ছে সেটা আসলেই ভুল কি না। দেখতে হবে- সেটা ইজতিহাদি কোনো ভুল কি না। আল্লাহ তাআলা তো তাদের মাফ করে দিয়েছেন। কুরআনে কারীমে ঘোষণা এসেছে। এ জন্য তাদের কোনো ভুল- সেটা ইজতেহাদি হোক কিংবা প্রকৃত ভুলই হোক- নিয়ে সমালোচনা করা বা তাঁকে আক্রমণ করার অধিকার উম্মতের নেই। উম্মতের কেউ এমন করতে পারেন না। বরং সর্বাবস্থায় তাদের প্রতি সাধারণ শ্রদ্ধা ও আদব বজায় রাখতে হবে। এটাই আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের বিশ্বাসগত ও কর্মগত অবস্থান।

ইসলাম টাইমস : উম্মতের কেউ কেউ আছেন, সাহাবী-বিদ্বেষী হিসেবে পরিচিত নন, সাহাবায়ে কেরামের ইতিহাস-পর্যালোচনা করতে গিযে সচেতনভাবে কিংবা অসচেতনভাবেই কোনো কোনো সাহাবীর ‘ভুল’ নিয়ে আলোচনা করে বসেন। এ  ক্ষেত্রে আসলে করণীয় কী?

মাওলানা যাকারিয়া আবদুল্লাহ : এখানে বিষয় তো দুটো হতে পারে। এক হচ্ছে, যিনি কোনো সাহাবীর ‘ভুল’ নিয়ে কিথা বলছেন, তিনি হয়তো ভালো করে বিষয়টি জানেনই না। এটা তো জাহল বা অজ্ঞতা। এ অবস্থা থেকে এ জাতীয় আলোচনা কেউ করলে ভুল কথা বলার গুনাহ করলেন। তার এই গুনাহের দ্বারা যদি আরও মানুষের প্রভাবিত বা সংক্রমিত হওয়ার পরিস্থিতি থাকে তা হলে তো এটা মারাত্মক।

দ্বিতীয় কথা হচ্ছে, কেউ যদি জেনে-বুঝে সাহাবাযে কেরামের কথিত ‘ভুলত্রুটি’ নিয়ে সমালোচনা ও আক্রমণ করে থাকেন, তা হলে এটা হবে আমলি নিফাক ও যালালাত (বিচ্যুতি)। এটা অত্যন্ত ক্ষতিকর ও ভয়ঙ্কর।

তবে হ্যাঁ কেউ যদি সাহাবায়ে কেরামের কোনো সমালোচনা করার পর আন্তরিকভাবে তওবা করে, রুজু করে, জনসমক্ষে ভুল করলে জনসমক্ষে সেই রুজুর কথাও প্রচার করে, তা হলে আল্লাহ তাআলা তাকে মাফ করে দেবেন বলেই আশা করা যায়। তওবার দ্বারা তো সব গুনাহ থেকেই মাফ পাওয়া যায়।

ইসলাম টাইমস : কেউ কেউ আছেন অভ্যাসগতভাবে সাহাবায়ে কেরামের সমালোচক নন, কিন্তু ইতিহাসের বিশ্লেষণের প্রয়োজনে তারা মনে করেন হযরত উসমান গনী রা. হযরত মুআবিয়া রা. হযরত আমর ইবনুল আস রা. প্রমুখ সাহাবায়ে কেরামের সমালোচনা বা দোষত্রুটি পর্যালোচনা করা দরকার। এ ব্যাপারে আপনি কী বলেন?

মাওলানা যাকারিয়া আবদুল্লাহ : এটা একটা ভুল চিন্তা। একজন মুসলিম কোনোভাবেই কোনো সাহাবীকেই সমালোচনাযোগ্য মনে করতে পারেন না। শ্রদ্ধা হারিয়ে তাদের প্রতি নির্দয় হতে পারেন না। প্রথমত আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের আকীদা তাকে এ অনুমতি দেয় না। সাহাবায়ে কেরামের প্রতি আন্তরিক শ্রদ্ধা পোষণে সে বাধ্য। দ্বিতীয়ত ইসলামের ইতিহাসের দিকে চোখ রাখলে কোনো ন্যায়নিষ্ঠ মুসলমানেরই এটা করতে পারার কথা নয়। সাহাবায়ে কেরাম আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সোহবত উঠিয়েছেন, বছরের পর বছর দীনের কত কাজ করেছেন। দীনি তালীমাত, ফুতুহাত, জিহাদ, শাহাদাত সব কিছুতেই জীবনব্যাপী ছিল তাদের অংশগ্রহণ। আধাজাহান পর্যন্ত তারা ইসলাম ছড়িয়ে দিয়েছেন। ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছেন। তারাই তো এ উম্মতের পূর্বসুরী। তাদের ইখলাস ও জীবনব্যাপী মেহনতের বদৌলতে উম্মতের পরবর্তীরা দীন পেয়েছে।

দেখুন, শুধু তারা দীনের জন্য যা করে গেছেন, আজকে আমাদের উম্মতের অবস্থান সে তুলনায় কোথায়! যে বা যারা কোনো সাহাবীর বিষয়ে অন্যায়ভাবে মুখ খুলতে চায় তাদের একটু ভেবে দেখা উচিত- শুধু তিনি বা তার প্রজন্ম নন, তাদের পেছনের দশ প্রজন্মের মিলেও সাহাবায়ে কেরামের সমতুল্য কোনো খেদমত বা উৎসর্গতা প্রদান করা সম্ভব হয়নি। উম্মতের কারও ভেতরে ইনসাফ থাকলে আল্লাহর রাসূল সা.-এর কোনো সাহাবীর বিষয়ে তিনি অশোভন উচ্চারণ করতে পারেন না।

পূর্ববর্তি সংবাদপাইলট আটক হওয়ায় চুপসে গেছেন মোদি, মুক্তির ঘোষণা দিয়ে প্রশংসায় ভাসছেন ইমরান
পরবর্তি সংবাদডেমরায় ইসলামী আন্দোলনের হাজী ইবরাহীম জয়ী