উত্তাপহীন সিটি নির্বাচন : দুই ইসলামি রাজনীতিকের মূল্যায়ন

আতাউর রহমান খসরু ।।

গতকাল বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হলো ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদে উপনির্বাচন। দেশের বৃহত্তম বিরোধী দল বিএনপিসহ প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দল এই নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছে। তাই গুরুত্বপূর্ণ এই নির্বাচন নিয়ে উত্তাপ ছিলো না রাজনৈতিক অঙ্গণে। নির্বাচন কমিশন নির্বাচনী আয়োজনে কোনো কমতি না রাখার পরও ভোটারদের আগ্রহ দেখা যায়নি।

নির্বাচন কমিশন কর্তৃক প্রকাশিত ফলাফলে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী মো. আতিকুল ইসলাম ৮ লাখ ৩৯ হাজার ৩০২ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন। জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো. শাফিন আহমেদ পেয়েছেন ৫২ হাজার ৪২৯ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছেন।

ইসির হিসেব মতে নির্বাচনে ৩১.০৫ শতাংশ পড়েছে। তবে বিরোধীদের ভোটের এই পরিমাণ নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেছে।

সবকিছুর পরও বিরোধী দলের অনুপস্থিতিকে গুরুত্ব দিচ্ছে না সরকার। একদিকে সরকারের পূর্ণ উৎসাহ এবং অপর দিকে বিরোধী দলগুলো ও ভোটারদের অনাগ্রহ দেশের রাজনীতিতে কী বার্তা বয়ে আনছে?

খেলাফত মজলিসের মহাসচিব অধ্যাপক ড. আহমদ আবদুল কাদের মনে করেন, সরকারের এই ‘ডোন্ট কেয়ার’ ভাব দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার চূড়ান্ত ধ্বংস টেনে আনবে এবং সরকারকে আরও স্বৈরাচারি ও জনগণ থেকে আরও বেশি বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে। কারণ, কোনো নির্বাচনে যখন সরকারি দল ছাড়া আর কারো আগ্রহ থাকে না, তখন সহজেই বোঝা যায় সেই নির্বাচন কেমন হবে।

তিনি আরও বলেন, সরকার এই নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার বোঝাতে চাচ্ছে, দেশে গণতন্ত্র আছে। কিন্তু জনগণ ও আন্তর্জাতিক মহল সবাই জানে এখানে নির্বাচনের নামে কী হচ্ছে।

সবাই জানার পরও কেন সমস্যার সমাধান হচ্ছে না? উত্তরে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক মহল নিজেদের গুরুতর স্বার্থ ব্যতীত কোনো দেশে হস্তক্ষেপ করবে না। তাই বলা যায়, তারা কিছু করে দেবে না। যখন জনগণ যখন মাঠে নামবে এবং আমরা তাদের নামাবে পারবো, তখন হয়তো আন্তর্জাতিক মহলও সমর্থন দেবে।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন গত সরকারের অধীনে স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে নিয়মিতভাবে অংশগ্রহণ করে। দলের কোনো কোনো নেতার বক্তব্য ছিলো, আমরা সরকারকে বিনা চ্যালেঞ্জে ছেড়ে দেবো না এবং দুর্নীতি হলেও নির্বাচনে অংশ নেবো যাতে সরকারের দুর্নীতি ধরা পড়ে। কিন্তু এবারের নির্বাচনে অংশ নেয়নি তারাও। কেন তারা হাল ছেড়ে দিলেন?

উত্তর পাওয়া যায় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমানের কাছে। তারা ভাষায়, ‘এখন তো দেশে নির্বাচনই হয় না। যেখানে নির্বাচনের কোনো ম্যানারই মানা হয় না, সেখানে চ্যালেঞ্জ করার সুযোগ কোথায়। ৩১ ডিসেম্বরের নির্বাচনে সীমাহীন নৈরাজ্য হয়েছে। যা দেশের সব বিরোধী দলকেই হতাশ করেছে।’

তিনি আরও বলেন, নির্বাচনী এই আনুষ্ঠানিকতা গণতন্ত্রের প্রাণহীন কংকালকে দাঁড় করিয়ে রাখার চেষ্টা ছাড়া কিছু না এবং তা করা হচ্ছে, জনগণ ও বিশ্ববাসীকে বিভ্রান্ত করার জন্য।

পূর্বেও নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণ একই সঙ্গে করেছিলেন। দুই সময়ের মধ্যে পার্থক্য কতোটুকু? একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগ পর্যন্ত সরকার ও নির্বাচন কমিশন বিরোধী দলগুলোকে বারবার আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেছিলো। রাজনৈতিক দলগুলো মনে করেছিলো হয়তো নূন্যতম সততা রক্ষা করবে। কিন্তু নির্বাচনের পর দেখা গেলো, সরকার ও নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা কোনোটাই আশ্বস্ত হওয়ার মতো না। নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা সরকারের অঙ্গ সংগঠনের মতোই। তাদের নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যাপারে তাদের কোনো ইচ্ছা বা আগ্রহ নেই। তাই প্রায় সব বিরোধী দল এই সরকারের অধীনে নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছে।

তবে উভয় নেতাই বলছেন, এখন পরিবেশ নেই তাই তারা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন না। ভবিষ্যতে নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হলে তারা অবশ্যই স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নেবে তাদের দল। আপাতত দল গোছাবেন তারা।

অধ্যাপক আহমদ আবদুল কাদের বলেন, দল না গুছিয়ে কোনো আন্দোলনই লাভজনক হবে না। আমরা দল গোছাচ্ছি এবং ভবিষ্যতের ব্যাপারে সুষ্ঠু পরিকল্পনা প্রণয়নের চেষ্টা করছি। আমরা সরকারকে চ্যালেঞ্জ করার মতো অবস্থানে যেতে চাই।

নির্বাচন কমিশন থেকে প্রকাশিত ফলাফলের ব্যাপারে তিনি সংশয় প্রকাশ করে বলেন, আমাদের নেতা-কর্মী কালকের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছে। তাদের দেওয়া তথ্য ও গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য থেকে বোঝা যায় নির্বাচন কমিশন কর্তৃক প্রকাশিত ফলাফল নিয়ে সংশয় প্রকাশ করার সুযোগ আছে।

একই কথা বলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব। তিনি বলেন, পত্র-পত্রিকায় এক কেন্দ্রে দশের কম ভোট পড়ার কথাও এসেছে। সেখানে এতো ভোট কোথা থেকে এলো আমার বুঝে আসছে না।

তিনি তার সংশয়ের পেছনে একটি যুক্তিও তুলে ধরেন। বলেন, এর আগের সিটি নির্বাচনে জাতীয় পার্টি পেয়েছিলো চার বা সাড়ে চার হাজার ভোট পেয়েছিলো। সেখান থেকে জাতীয় পার্টি ৫২ হাজার ভোট কীভাবে পেলো সে প্রশ্নও তো থেকে যায়।

গাজী আতাউর রহমান মনে করেন, সরকার চায়ও না যে, মানুষ ভোটাধিকার প্রয়োগ করুক। এক দলীয় শাসনকে দীর্ঘায়িত করাই সরকারের উদ্দেশ্য।

এই দুই ইসলামি রাজনীতিক সরকারের সৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, সরকারের প্রতি যে জনগণের আস্থা নেই -সেটা সরকারের বোঝা উচিত। এই কারণেই মানুষের ভোটের আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে এবং তারা ভোট দিতে যায়নি।

পূর্ববর্তি সংবাদপাইলট অভিনন্দনকে ফিরিয়ে দিলো পাকিস্তান
পরবর্তি সংবাদকিশোরগঞ্জ জামিয়া এমদাদিয়ার দুই দিনব্যাপী সিরাত মাহফিল শুরু