পাকিস্তানে বিমান হামলা : মাদরাসাকে ক্যাম্প ভেবে গুড়িয়ে দিতে চেয়েছিলো ভারত!

আবরার আবদুল্লাহ ।।

পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে আকস্মিক বিমান হামলা চালিয়ে যুদ্ধাবস্থার সৃষ্টি করেছে প্রতিবেশী ভারত। দেশটি দাবি করছে, গত মঙ্গলবার পরিচালিত এই অভিযানের মাধ্যমে তারা পাকিস্তানভিত্তিক সশস্ত্র সংগঠন ‘জাইশে মুহাম্মদ’-এর একটি প্রশিক্ষণ ক্যাম্প গুড়িয়ে দিয়েছে। এতে নিহত হয়েছে সংগঠনের কমপক্ষে তিনশো যোদ্ধা ও সদস্য।

কিন্তু আল জাজিরার প্রতিবেদনে উঠে এসেছে ভিন্ন কথা। প্রতিবেদক বলছেন, স্থানীয় জনগণের সঙ্গে কথা বলে তিনি জানতে পেরেছেন, পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের যে স্থানে ভারত আক্রমণ করেছে –সেখানে ফসলের মাঠ ও বন ছাড়া আর কোনো কিছুরই ক্ষতি হয়নি।

প্রতিবেদক নিজেও ঘুরে ঘুরে বোমার আঘাতে গর্ত হয়ে যাওয়া ফসলের মাঠগুলো দেখেছেন। সেখানে কোনো ক্যাম্পও খুঁজে পাননি প্রতিবেদক।

স্থানীয় অধিবাসীরা বলছেন, সেদিন রাতে ভারতীয় বাহিনী মোট চারটি বোমা নিক্ষেপ করে। বোমা বিস্ফোরণের প্রচণ্ড আওয়াজে পুরো এলাকা কেঁপে ওঠে। আগুনের ঝলকানিতে দিনের মতো পরিস্কার হয়ে ওঠে আশপাশের এলাকা।

আহত নুরেন শাহ

প্রতিবেদক পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের অধিবাসী ‍নুরেন শাহ-এর সঙ্গে কথা বলেন। নিক্ষেপিত চারটি বোমার দুটিই পড়েছে তার কৃষি জমিতে। তিনি সেই রাতের ঘটনা তুলে ধরে বলেন, প্রথম বোমা বিস্ফোরিত হওয়ার পর আমি জেগে যাই। দ্বিতীয় বোমাটা আমার বাড়ির কাছাকাছি জায়গায় বিস্ফোরিত হয়। আমার ঘর কেঁপে ওঠে।

এ সময় একটি কাঠ এসে নুরেন শাহ-এর মাথায় পড়লে তিনি আহত হন।

অপর একজন প্রত্যক্ষদর্শী সাইয়েদ রহমান শাহ জানান, কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে চারটি বোমা বিস্ফোরিত হয়। আমার মনে হলো, এখন দিনের বেলা। এরপর আগুন ও কুণ্ডুলি পাকিয়ে ধোঁয়া উড়তে দেখা যায়।

তবে ভারত প্রশিক্ষণ ক্যাম্প গুড়িয়ে দেওয়ার দাবি করলেও সেখানে কোনো ক্যাম্পের অস্তিত্ব খুঁজে পাননি প্রতিবেদক। হ্যা, ওই এলাকায় ‘মাদরাসা তালিমুল কুরআন’ নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে -যা মাওলানা মাসউদ আযহার ও তার শালা মাওলানা ইউসুফ আযহারের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়।

ধারণা করা হচ্ছে, ভারতীয় বাহিনী মাদরাসাকেই প্রশিক্ষণ ক্যাম্প ভেবে গুড়িয়ে দিতে চেয়েছিলো। স্থানীয়দের দাবি, মাদরাসাটি আক্রান্ত হলে শত শত শিক্ষার্থীর হতাহতের ঘটনা ঘটতো।

https://www.aljazeera.com/mritems/Images/2019/2/27/8d1014a941f24587beb19e79b1287ac1_18.jpg

প্রতিবেদক পাহাড়ের উঁচু টিলার উপর অবস্থিত মাদরাসায় যেতে না পারলেও সমতলে অবস্থিত মাদরাসার একটি সাইনবোর্ডের ছবি তুলতে পেরেছেন। যেখানে সবার উপরে একটি হাদিস লেখা ‘তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম যে কুরআন শিক্ষা করে এবং শিক্ষা দেয়।’ এরপর মাদরাসার নাম ও তার পাশে লেখা দ্বীনি শিক্ষার নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান। সাইবোর্ডে মাদরাসার তিনটি বিভাগের নাম রয়েছে, হিফজুল কুরআন বিভাগ, দরসে নেজামি (কিতাব বিভাগ) ও আরবি ভাষা বিভাগ।

দুই পাশে মাদরাসার পৃষ্ঠপোষক হিসেবে মাওলানা মাসউদ আযহার এবং তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে মাওলানা ইউসুফ আযহারের নাম রয়েছে। সাথে সাথে তাদের মোবাইল নম্বর দেওয়া আছে সেখানে।

মাদরাসায় কোনো প্রকার প্রশিক্ষণ হয় কী না জানতে চাইলে স্থানীয়রা প্রতিবেদককে পরস্পর বিরোধী তথ্য দিয়েছেন বলে দাবি প্রতিবেদকের। তবে অধিকাংশই বলেছেন, এখানে কোনো ক্যাম্প নেই এবং কোনো প্রশিক্ষণও হয় না। কোনো কোনো অধিবাসী বলেছেন, ১৯৮০ দশকে মাদরাসা যে টিলার উপর মাদরাসা প্রতিষ্ঠিত, সেখানে একটি মুজাহিদ ক্যাম্প ছিলো। এখন তার কোনো অস্তিত্ব নেই।

বোমা হামলার চারটি স্থান

তথ্যসূত্র : আল জাজিরায় প্রকাশিত আসাদ হাশিমের প্রতিবেদন অবলম্বনে

পূর্ববর্তি সংবাদনওগাঁয় অপহৃত ছাত্রী জাবি ছাত্রী হল থেকে উদ্ধার!
পরবর্তি সংবাদকাল থেকে শুরু হচ্ছে বাংলাদেশ-ভারত সেনা অনুশীলন