আফগান শিশুদের স্বপ্ন বোঝাই রঙিন বাস

আবরার আবদুল্লাহ ।।

আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের শেষ প্রান্তে একটি নীল বাস এসে থামলো। একটু পর খুলে গেলো তার দরজা। একদল শিশু আনন্দে হৈ চৈ করে উঠলো। তারা বেছে নিতে ব্যস্ত হলো তাদের পছন্দের বইগুলো। এরপর নেমে এলো নীরবতা। কারণ, শিশুরা এখন পড়ায় মন ডুবিয়েছে। তারা পড়ছে কোনো বীরের জীবন কাহিনী অথবা লাল পরী, নীল পরীর জ্ঞান ও উদারতার গল্প।

গত বছর ফেব্রুয়ারিতে ‘ভ্রাম্যমান পাঠাগার’ প্রকল্পটি শুরু করে ‘দ্য চার্মাগাজ’ নামের একটি দাতব্য প্রতিষ্ঠান। তারা কাবুলের শিশুদের জন্য বইপড়ার এই অভিনব আয়োজনটি করে।

The bus operates daily and visits four communities, with every visit lasting two hours. [Sorin Furcoi/Al Jazeera]

বাসটি প্রতিদিন কাবুলের চারটি এলাকায় যায় এবং প্রতি এলাকায় দুই ঘণ্টা করে অবস্থান করেন।

‘দ্য চার্মাগাজ’-এর প্রতিষ্ঠাতা ফেরেশতা কারিম বলেন, আমাদের উদ্দেশ্য শিশুর মানসিক বিকাশ ও চিন্তাশক্তির উন্নতি –যা আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা করতে পারছে না। প্র্রকল্পের বয়স এক বছর হলো, আমাদের পর্যবেক্ষণ হলো, শিশুরা প্রচণ্ড উৎসাহী। জ্ঞানের প্রতি তাদের তৃষ্ণা ও চেষ্টা সীমাহীন।

আমরা শিশুদের শিক্ষার উপযুক্ত পরিবেশ চাই। আমরা চাই, শিক্ষাখাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাক। কারণ, শিক্ষাই আমাদের দেশের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারে।

তিনি আরও বলেন, শিশুরা যখন পৃথিবীর অন্যান্য জায়গার গল্পগুলো জানবে, একটা ঘটনার ভিন্ন ভিন্ন উপস্থাপন দেখবে, তখন তারা ভাবতে শিখবে এবং তাদের সম্ভাবনাগুলো চোখের সামনে ফুটে উঠবে।

ভ্রাম্যমাণ পাঠাগারের বর্তমান সদস্য সংখ্যা ৪০ হাজার। প্রতিদিন শতাধিক শিশু পাঠক বইতে পড়তে আসে এই পাঠাগারে। শুরুতে অভিভাবকদের মধ্যে কিছুটা দ্বিধা কাজ করলেও দিনদিন পাঠক বাড়ছে পাঠাগারের বলে জানান ফেরেশতা কারিম।

বর্তমানে কয়েক হাজার বই রয়েছে তাদের সংগ্রহে। তবে অধিকাংশ বই-ই এসেছে অনুদান হিসেবে। বই পরিবহনের বাস রয়েছে দুটি।

'It's been one year since we started working with children and we realised they are very passionate and they have so much energy and thirst for knowledge,' said Freshta. [Sorin Furcoi/Al Jazeera]

স্থানীয় ও জাতীয় প্রশাসন তাদেরকে এই প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও তাদেরকে সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছে। সরকারের সহযোগিতা পেলে সেবার পরিধি বিস্তৃত করতে চায় ‘দ্য চার্মাগাজ’।

শুধু বইপড়াতেই সীমাবদ্ধ না ‘দ্য চার্মাগাজ’-এর কার্যক্রম। তারা শিশুদের মেধা বিকাশের জন্য বিভিন্ন কর্মশালা ও সাংস্কৃতিক আয়োজনও করে থাকে। শিশুদের শিক্ষামূলক ভিডিও দেখায় তারা।

Every day, some 100 children visit the library. [Sorin Furcoi/Al Jazeera]

যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগান শিশুদের মুখে হাসি ফোটাতে, তাদেরকে একটু সামনে এগিয়ে দিতে এই স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে যাচ্ছেন আট আফগান তরুণ। তাদের আশা, এভাবেই একদিন ঘুরে দাঁড়াবে তাদের প্রিয় মাতৃভূমি।

তথ্যসূত্র : আল জাজিরা

পূর্ববর্তি সংবাদনির্বাচন নিয়ে দেশে-বিদেশে অনেক কথা উঠতেছে : ইসি 
পরবর্তি সংবাদগীবতের ক্ষতি ও বাঁচার উপায় : মাওলানা শাহ আবরারুল হক রহ.