দিনাজপুরে ভিক্ষা বন্ধে ইউএনও’র অভিনব প্রয়াস

ইসলাম টাইমস ডেস্ক:  রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের রেলস্টেশন, বাস টার্মিনাল, এয়ারপোর্ট, হাসপাতাল, স্কুল কলেজের সামনে, মাজার, বাসা বাড়ি, রাস্তা ঘাটে কতো রকমের ভিক্ষুক যে রয়েছে, তার সঠিক পরিসংখ্যান এখনো জানা যায়নি। তবে বিভিন্ন সময়  ‘ভিক্ষুক পুনর্বাসন’ নামে বিভিন্ন কার্যক্রম সচেতন নাগরিক সমাজের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।

সম্প্রতি অভিনব পদ্ধতিতে এমনই একটি  ভিক্ষুক পুনর্বাসন কর্যক্রম শুরু করেছেন বাংলাদেশের উত্তরের জেলা দিনাজপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বা ইউএনও তৌহিদুর রহমান। এ নিয়ে বিবিসি বাংলায় ১ মার্চ একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে-

বাংলাদেশের উত্তরের জেলা দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলায় ২৯ জন বয়স্ক ভিক্ষুককে ভিক্ষাবৃত্তি থেকে বিরত রাখার জন্য তাদের সন্তানদের ডেকে পাঠিয়েছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বা ইউএনও।

বৃদ্ধ বাবা-মার দায়িত্ব নেওয়ার জন্য তাদের বুঝিয়েছেন, এবং এখন পর্যন্ত ২০জনকে পরিবারের হাতে তুলে দিয়েছেন। বাকি নয় জনের পরিবারের সন্ধান পাওয়া যায়নি।

ইউএনও তৌহিদুর রহমান বিবিসিকে বলেন, পরিবারের সাহায্য নিয়ে ভিক্ষুকদের ভিক্ষাবৃত্তি থেকে নির্বৃত্ত করা যেতে পারে বলে তিনি বিশ্বাস করেন।

“আসলে ভিক্ষুকরা অনেক ক্ষেত্রে বাধ্য হয়ে ভিক্ষা করে, অনেকের আবার অভ্যাসগত ভিক্ষা প্রবৃত্তি থাকে। আমি চিন্তা করলাম তাদের সবারই কোন না কোন আত্মীয় আছে। অনেকের ছেলে আছে যারা উপার্জনক্ষম। তাদেরকে মোটিভেট করে যদি ভিক্ষা থেকে দূরে রাখা যায়, তাদের যদি বাধ্য করা যায় তাদের পিতা-মাতাদের দেখা-শোনা করার জন্য। এই চিন্তা থেকে এই উদ্যোগ নেয়া।”

বিরামপুর উপজেলার দক্ষিণ ভবতিপুরে থাকেন খাদেজা বেগম। স্বামী মারা যাবার পর কঠিন দারিদ্র্যের মুখে পড়েন তিনি। সেই থেকে ভিক্ষা করেন।

তিনি বলছিলেন, “২০/২৫ বছর হচ্ছে ভিক্ষা করি। স্বামী মারা যায়। ছেলে তখন ছোট ছিল। এখন ছেলে বড় হয়েছে। বিয়ে করেছে। দুইটা ছেলে আছে। কিন্তু আমি এখনো ভিক্ষা করি।”

ছেলে কেন তার মায়ের দায়িত্ব নেয়নি? খাদেজা বেগমের ছেলে খায়রুল ইসলাম বলেন, নিজের দারিদ্র্যের কারণে তিনি খুব বেশি আগ্রহী হননি।

“আমার দায়িত্ব ছিল কিন্তু আমাদের খুব কষ্ট ছিল। আমার দুইটা বাচ্চা আছে। তাদের লেখাপড়ার খরচ আছে…এখন আমি আমার মাকে আর বাড়ির বাইরে যেতে দেব না।”

বিরামপুর উপজেলায় ৫৫৮ জন ভিক্ষুক রয়েছে বলে এক জরিপে পেয়েছে বিরামপুর স্থানীয় প্রশাসন।

তিনি মাত্র ২০ জনকে আপাতত ভিক্ষাবৃত্তি থেকে বিরত রাখতে পেরেছেন, কিন্তু আরও যে হাজার হাজার মানুষ ভিক্ষাবৃত্তির সাথে জড়িত তাদেরকে কীভাবে নির্বৃত্ত করা সম্ভব?

মি. রহমান বলেন, একটা সামগ্রিক পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় মাধ্যমে সেটা করা সম্ভব।

“তাদের যদি থাকার জায়গা না থাকে তাদের থাকার জায়গা করতে হবে, সরকার সে ব্যবস্থা নিয়েছে। যদি তাদের কর্মক্ষমতা না থাকে, তাহলে তাদের সন্তানদের সেই ব্যবস্থা করে দিতে হবে। এভাবেই বহু মানুষকে ভিক্ষা থেকে নির্বৃত্ত করা সম্ভব”

বিরামপুর উপজেলা পরিষদ বলছে, সরকারের যে সামাজিক নিরাপত্তা সংক্রান্ত প্রকল্প আছে, স্থানীয় ভিক্ষুকদের তার আওতায় নিয়ে উপার্জনক্ষম করার চেষ্টা করবে।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

পূর্ববর্তি সংবাদসাভারে বন্ধুর হাতে বন্ধু খুন
পরবর্তি সংবাদপাবনায় ডিবি পরিচয়ে ডাকাতি, গণপিটুনিতে মৃত্যু