আদালতকক্ষে খালেদা জিয়ার সঙ্গে ফখরুলের আলাপ: ১৯ মার্চ নাইকো মামলার পরবর্তী শুনানি

ইসলাম টাইমস ডেস্ক: নাইকো দুর্নীতি মামলার শুনানিতে এলে আদালতকক্ষে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে কথা বলেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। খালেদা জিয়ার সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক আলাপ হয়নি দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার দুরভিসন্ধি করে জামিন দিচ্ছে না।

শুনানির জন্য হুইল চেয়ারে রোববার দুপুর ১২ টা ৩৭ মিনিটে খালেদা জিয়াকে আদালতে আনা হয়। তখন আগে থেকে চেয়ারে বসে থাকা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সরকারি কৌঁসুলি মোশাররফ হোসেন কাজল উঠে গিয়ে খালেদা জিয়ার কাছে জানতে চান, তাঁর শরীর কেমন। খালেদা জিয়া কাজলের উদ্দেশে বলেন, ‘না, আমার শরীর ভালো যাচ্ছে না। শরীর খুব খারাপ। ’ কাজলের সঙ্গে কথা বলা শেষ হলে সেখানে উপস্থিত মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর খালেদা জিয়ার সঙ্গে কথা বলা শুরু করেন। খালেদা জিয়া তখন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে বলতে থাকেন, তাঁর শরীর মোটেও ভালো যাচ্ছে না। খালেদা জিয়ার কাছে ফখরুল জানতে চান, ‘থেরাপি ঠিকমতো দেওয়া হচ্ছে কি না।’ খালেদা তখন ফখরুলকে জানান, কারাগারে তাকে দেখতে চিকিৎসক এসেছিলেন। কিন্তু তার শরীর ভালো যাচ্ছে না।

খালেদা জিয়ার সঙ্গে যখন ফখরুল ইসলাম কথা বলছিলেন, এর কিছুক্ষণ পর ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৯-এর বিচারক শেখ হাফিজুর রহমান এজলাসে আসেন।

এজলাসকক্ষে মির্জা ফখরুল বসেন খালেদা জিয়ার বাঁ-পাশে। তখন থেকে খালেদা জিয়ার সঙ্গে কথা বলতে শুরু করেন মির্জা ফখরুল। বেলা ১ টা ১০ মিনিট পর্যন্ত খালেদা জিয়ার সঙ্গে কথা বলেন তিনি।

এছাড়াও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও বিএনপির নেতা জয়নুল আবেদিন, বিএনপির নেতা মীর নাসির এবং জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন কথা বলেন খালেদা জিয়ার সঙ্গে। এই তিনজনের কথা শেষ হলে আবার বেলা সোয়া ১টার দিকে খালেদা জিয়ার পাশের চেয়ারে বসেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব খন্দকার শহীদুল ইসলাম ও সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেনের পক্ষে তাঁর আইনজীবীরা শুনানি শেষ করেন। এরপর মামলার আসামি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ নিজেই শুনানি শুরু করেন। আদালতকে তিনি বলেন, এ মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে কিছুই নেই। মামলার প্রধান আসামি খালেদা জিয়াসহ অন্য সব আসামির অব্যাহতি চেয়ে শুনানি শেষ করেন সাবেক আইনমন্ত্রী মওদুদ আহমদ।

মওদুদের পর খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানি শুরু করেন আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার। তিনি আদালতকে বলেন, খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ব্যাপারে আদালতে আবেদন করেছেন। একই সঙ্গে শুনানির সময় চেয়েও আবেদন করেছেন। কারণ মামলার সব কাগজপত্রের অনুলিপি এখনো হাতে পাননি। আদালত তখন দুদকের কৌঁসুলি মোশাররফ হোসেন কাজলের বক্তব্য জানতে চান। কাজল আদালতকে বলেন, জেলকোডের বিধান অনুযায়ী খালেদা জিয়ার চিকিৎসা হোক তাতে কোনো আপত্তি নেই তার। তবে কাগজপত্রের অজুহাত দিয়ে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা শুনানি করলেন না। অন্য সব আসামির যেখানে শুনানি শেষ হয়েছে, সেখানে আজ খালেদা জিয়ার পক্ষে তার আইনজীবী শুনানি শুরু করতে পারতেন। আদালত তখন খালেদা জিয়ার আইনজীবীর উদ্দেশে বলেন, উচ্চ আদালত যেখানে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ব্যাপারে আদেশ দিয়েই দিয়েছেন, সেখানে নিম্ন আদালত আদেশ দিতে পারেন কি না? তখন খালেদা জিয়ার আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন, সরকারি মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা ২৪ ফেব্রুয়ারি কারাগারে খালেদা জিয়াকে দেখে গেছেন। কিন্তু খালেদা জিয়ার সঙ্গে তিনি কথা বলেছেন। খালেদা জিয়া তাকে বলেছেন, তার পক্ষে আদালতে বসে মামলার কার্যক্রম শোনা সম্ভব না। তার শরীর পারছে না। আদালত তখন জানান, খালেদার চিকিৎসা নিয়ে করা আবেদনের ওপর আজই আদেশ দেবেন।

১৯ মার্চ মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ঠিক করে এজলাস ত্যাগ করেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৯-এর বিচারক শেখ হাফিজুর রহমান।

প্রায় এক ঘণ্টা শুনানি শেষে বেলা ১টা ৩৫ মিনিটে হুইল চেয়ারে খালেদা জিয়াকে আদালত থেকে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। নাজিমুদ্দিন রোডের পুরোনো কারাগারে প্রবেশের প্রধান ফটক পর্যন্ত মির্জা ফখরুল ইসলাম খালেদা জিয়ার সঙ্গে যান। খালেদা জিয়াকে কারাগারে নিয়ে যাওয়ার পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘খালেদা জিয়ার সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে, কথাও হয়েছে। খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য নিয়ে আমরা চিন্তিত। চিকিৎসকদের কাছ থেকে যথাযথ চিকিৎসা পাচ্ছেন না খালেদা জিয়া। এখন পর্যন্ত খালেদা জিয়ার রক্ত নেওয়া হয়নি। তিনি ডায়াবেটিস রোগী। এ ব্যাপারেও যথাযথ চিকিৎসা তিনি পাচ্ছেন না।তিনি বলেন, ’খালেদা জিয়ার সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক আলাপ হয়নি । সরকার দুরভিসন্ধি করে জামিন দিচ্ছে না।’

পূর্ববর্তি সংবাদঅমুসলিম নারীকে বিয়ে করা যাবে?
পরবর্তি সংবাদএসএসসির ছাত্রদের জন্য মারকাযের দীনি প্রেরণার আনন্দ-আয়োজন অনুষ্ঠিত