‘দুদক প্রাইমারি শিক্ষকদের পেছনে লাগে, বেসিক ব্যাংকের দুর্নীতি দেখে না’

ইসলাম টাইমস ডেস্ক: বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেছেন, দুর্নীতি দমন করতে হলে রাষ্ট্র ও সমাজের উপরতলা থেকেই করতে হবে। দুদক প্রাইমারি শিক্ষকদের দুর্নীতির পেছনে গেলেও বেসিক ব্যাংকের হাজার হাজার কোটি টাকার বিষয়ে কাজ করছে না। দেশে অতি ধনীর সংখ্যা এখন চীনের থেকেও বেশি।

রোববার একাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের ভাষণের ওপর রাখা বক্তৃতায় এসব কথা বলেন রাশেদ খান মেনন।

রাশেদ খান মেনন বলেন, দেশের উন্নয়নের কথা বলতে গেলে গবেষণা করার প্রয়োজন নেই, খালি চোখেই দেখা যায়। কিন্তু প্রবৃদ্ধির এই সুবিধা অসমভাবে বণ্টন হচ্ছে। দেশের ধনী দরিদ্র, গ্রাম শহরের মধ্যে বৈষম্য ক্রমেই বেড়ে চলেছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে সম্প্রতি সময়ে অতি ধনীর সংখ্যা চীন থেকে বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রবৃদ্ধির সঙ্গে কর্মসংস্খান সৃষ্টি হচ্ছে না। বছরে বেকার বাড়ছে ৮ লাখ করে। ক্রমবর্ধমান বৈষম্য ও কর্মহীনতা সামাজিক স্থিতিশীলতা কেবল নয়, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার জন্যও বড় ধরনের হুমকি।

মেনন বলেন, এই ক্রমবর্ধমান বৈষম্য শুধু বাংলাদেশেই নয়, এটা সারা বিশ্বেই একটি বড় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। কিন্তু আমাদের সাবেক অর্থমন্ত্রী এই সমস্যা স্বীকার করেননি। এর জন্য গত ১০ বছরের অর্থনৈতিক নীতির দায় কম নয়। ’৯০-এর দশকে বিশ্বায়ন ও নয়া উদারনীতিবাদী অর্থনীতি বিশ্বজুড়ে লুটেরা ধনিকদের একাধিপত্য কায়েম করে। যার প্রতিফলন আমরা বাংলাদেশে দেখতে পাই বিদেশে অর্থপাচার, ঋণখেলাপী সংস্কৃতির বিস্তার, ব্যাংকিং খাতে নৈরাজ্য, শেয়ার মার্কেট কেলেঙ্কারি ইত্যাদি ঘটনায়।

সাবেক এই বিমানমন্ত্রী বলেন, উল্টো ব্যাংকিং আইন সংশোধন করে বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে পারিবারিক মালিকানা প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। প্রয়োজন ছাড়াই ব্যাংক খোলার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। একই ব্যক্তি এখন একটি নয়, ছয়-সাতটি ব্যাংকের মূল শেয়ার হোল্ডার। প্রকৃত উদ্যোক্তারা ব্যাংক থেকে সহায়তা না পেলেও, এ সকল এক বা একাধিক ব্যক্তি বিভিন্ন নামে ব্যাংকের টাকা সরিয়ে নিচ্ছে। কথা ছিল ব্যাংকিং কমিশন হবে। হয়নি, এবং হবে না বলেই ধারণা করছি। এ সবের মধ্য দিয়ে ‘ফিলদিলি’ রিচ একটি শ্রেণী গড়ে ওঠেছে। আর নিচতলার মানুষগুলোর শিকার হচ্ছে চরম বৈষম্যের।

মেনন বলেন, বাংলাদেশের লুটেরা অর্থনীতির প্রতিফলন ঘটেছে দুর্নীতিতে। এরশাদের শাসনামলে দুর্নীতি একটা শিল্পে রূপ নিয়েছিল। বিএনপি-জামায়াত শাসনে আমরা তিন তিনবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কলঙ্ক অর্জন করেছি। এখন রাষ্ট্রের শীর্ষ পর্যায়ে দুর্নীতি না থাকলেও সমস্ত সমাজদেহে এর বিস্তৃতি ঘটেছে। দুর্নীতি এখন অগৌরবের নয়, গৌরবের।

মেনন বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করা হলেও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আইনকে সংশোধন করে দুদককে কিছুটা হলেও নির্বয্য করা হয়েছে। অন্যদিকে দুদক প্রাইমারি শিক্ষকদের অন্যায় আমলে নিলেও বেসিক ব্যাংকের হাজার হাজার কোটি টাকার কেলেঙ্কারির কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয় নাই। হাইকোর্টের নির্দেশনার পরও বেসিক ব্যাংকের তৎকালীন চেয়ারম্যান দুদকের আওতার বাইরে। তিনি বলেন, দুর্নীতি দমন করতে হলে রাষ্ট্র ও সমাজের উপর তলা থেকে এটা করতে হবে।

সুন্দরবনের পাশে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের বিরোধীতা করে সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পরিবেশ রক্ষায় ‘চ্যাম্পিয়ন অব দ্য আর্থ’ পুরস্কার পেলেও দেশের ভেতরে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। তিনি বলেন, সুন্দরবনের বিশাল অঞ্চলজুড়ে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র, এলপিজি স্টেশনসহ বিভিন্ন শিল্পের অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু আমরা ভুলে যাচ্ছি যে, সিডর-আইলায় সুন্দরবন তার বুক দিয়ে আমাদের জনপদকে রক্ষা করেছে।

উপজেলা নির্বাচনের বিষয়ে সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, কিছু সংসদসদস্য এলাকায় বলছেন ‘ভোট তো দেখেছ, তোমরা ভোট দিয়ে কি করবে?’- এ ধরনের প্রচার হুমকি-ধামকি করেন তখন সামগ্রিক নির্বাচন সম্পর্কে জনগণের অনাস্থার জন্ম হয়। এ ধারণার অবসান ঘটিয়ে নির্বাচনকে অবশ্যই অবাধ নিরপেক্ষ করতে হবে।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী ১৪ দলের শরিকদের নিজ পায়ে দাঁড়াতে বলেছেন। এর জন্য গণতান্ত্রিক স্পেস প্রয়োজন ।

পূর্ববর্তি সংবাদজাবিতে র‌্যাগিংয়ের অভিযোগে এবার দুই ছাত্রীসহ ৭ শিক্ষার্থী বহিষ্কার
পরবর্তি সংবাদগ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ থেকে বাঁচতে কী করবেন?