ইঁদুর ধরতে না পারলে বিড়াল থাকার দরকার নেই: দুদকের কার্যক্রম নিয়ে হাইকোর্ট

ইসলাম টাইমস ডেস্ক: সোনালী ব্যাংকের সাড়ে ১৮ কোটি টাকা ঋণ জালিয়াতি-সংক্রান্ত ৩৩টি মামলার শুনানিতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্ত কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন হাইকোর্ট। এ সময় আদালত বলেন, ইঁদুর ধরতে পারে না, বিড়াল থাকার দরকার নেই।

আজ বুধবার দুদকের অন্যায়ভাবে কারাভোগকারী জাহালমের মামলার শুনানির সময়ে আদালত এ কথা বলেন।

আদালত দুদকের আইনজীবীকে উদ্দেশ করে বলেন, কেউ চায় না দুদক সম্পর্কে মানুষের ধারণা খারাপের দিকে যাক। তবে দুদককেও পরিচ্ছন্ন (ক্লিন) হতে হবে।

আদালত বলেন, টেলিভিশন চ্যানেল টোয়েন্টিফোরে রিপোর্ট হওয়ার আগে তিনি (আইও-তদন্ত কর্মকর্তা) কী করেছেন? দুদক একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান। আপনাদের অনেক স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে। যে বিড়াল ইঁদুর ধরতে পারে না সেই বিড়াল থাকার দরকার নেই।

আদালত দুদকের আইনজীবীকে বলেন, আপনারা তথ্য কি যাচাই-বাছাই করবেন না? আপনাদের রিপোর্টে বলছেন, জাহালম ১৮ ব্যাংক থেকে লোন নিয়েছে। কিন্তু এখন দুটি ব্যাংককে মামলায় পক্ষভুক্ত করতে চাচ্ছেন?

আদালত দুদকের আইনজীবীর কাছে জানতে চান, জাহালম যে নির্দোষ তা কবে জানতে পারলেন? এর জবাবে দুদক আইনজীবী আদালতকে বলেন, চ্যানেল ২৪ থেকে জানার পর গত ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে তদন্ত করার পর তার নির্দোষের বিষয়ে জানতে পারি।

আদালত বলেন, তদন্ত করে যখন দেখলেন সে নির্দোষ তাহলে তাকে (প্রসিকিউশন) ছেড়ে দিল না কেন? তদন্তের পর আপনাদের উচিত ছিল তার (জাহালমের) জামিনের ব্যবস্থা করা। এরপরও মামলার শুনানিকালে আদালতেও আপনাদের কাছে তিনি বারবার বলেছেন, আমি জাহালম, আবু সালেক না। তারপরও তার জামিনের ব্যবস্থা করলেন না। তাহলে তার বিরুদ্ধে কীসের ভিত্তিতে চার্জশিট দাখিল করলেন?

ভুল আসামি হয়ে ২৬ মামলায় প্রায় তিন বছর কারাগারে থাকা পাটকল শ্রমিক নিরীহ জাহালমকে সব মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়ে ৩ ফেব্রুয়ারি মুক্তির নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। সোনালী ব্যাংকের অর্থ জালিয়াতির অভিযোগে দুদকের করা সব মামলা থেকে নিরীহ জাহালমকে অব্যাহতি দিয়ে মুক্তি দিতে এ নির্দেশ দেয়া হয়। ওইদিন আদালত বলেন, এক নির্দোষ লোককে এক মিনিটও কারাগারে রাখার পক্ষে আমরা না।

একই সঙ্গে আদালত এই ভুল তদন্তের সঙ্গে কারা জড়িত, তাদের চিহ্নিত করার নির্দেশ দিয়েছেন। না হলে আদালত এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে বলে আদেশে উল্লেখ করা হয়। মুক্তির নির্দেশের পরপরই গত ৩ ফেব্রুয়ারি রাতে মুক্তি পেয়ে নিজ গ্রামে ফেরেন জাহালম।

সোনালী ব্যাংকের প্রায় সাড়ে ১৮ কোটি টাকা জালিয়াতির অভিযোগে আবু সালেকের বিরুদ্ধে ৩৩টি মামলা হয়। এর মধ্যে ২৬টিতে জাহালমকে আসামি আবু সালেক হিসেবে চিহ্নিত করে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দেয় দুদক। চিঠি পাওয়ার পর দুদক কার্যালয়ে হাজির হয়ে পাঁচ বছর আগে জাহালম বলেছিলেন, তিনি সালেক নন। কিন্তু নিরীহ পাটকল শ্রমিক জাহালমের কথা সেদিন দুদকের কেউ বিশ্বাস করেনি।

২০১৬ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি দুদকের এসব মামলায় জাহালম গ্রেফতার হন। তিনি জেল খাটছেন, আদালতে হাজিরা দিয়ে চলেছেন।

গত ৩০ জানুয়ারি একটি জাতীয় দৈনিকে ‘স্যার, আমি জাহালম, সালেক না’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এ প্রতিবেদনটি ওইদিনই হাইকোর্ট বেঞ্চের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অমিত দাশগুপ্ত। শুনানি নিয়ে আদালত জাহালমের আটকাদেশ কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে স্বপ্রণোদিত রুল জারি করেন।

একইসঙ্গে, নিরীহ জাহালমের গ্রেফতারের ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে দুদক চেয়ারম্যানের প্রতিনিধি, মামলার বাদী দুদক কর্মকর্তা, স্বরাষ্ট্র সচিবের প্রতিনিধি ও আইন সচিবের প্রতিনিধিকে ৩ ফেব্রুয়ারি সশরীরে আদালতে হাজির থাকার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ওইদিন সংশ্লিষ্টরা আদালতে হাজির হন।

আরও পড়ুন : এক জাহালমের ঘটনায় পুরো রাষ্ট্রের অনেকগুলো প্রতিষ্ঠানের গায়ে দাগ লেগে গেছে : মুফতি আবুল হাসান মুহাম্মাদ আবদুল্লাহ

পূর্ববর্তি সংবাদপুরো কুরআন শরীফ হাতে লিখলেন বরিশালের হুমায়ুন
পরবর্তি সংবাদশপথে সুলতান, পিছু হটলেন মোকাব্বির