বাংলাদেশে ইসলামি দলগুলো কী সমাজসেবায় পিছিয়ে? যা বললেন দুই ইসলামি রাজনীতিক

আতাউর রহমান খসরু ।।

বাংলাদেশের আলেম রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে সমাজবিমুখতার অভিযোগ করেন কেউ কেউ। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রাজনীতিক হিসেবে গণমানুষের নেতা হয়ে ওঠার চেষ্টা নেই তাদের। ইসলামি দলগুলোর জাতীয় পর্যায়ের অনেক নেতাই নিজ এলাকায় ভিনদেশীতুল্য। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে এর কারণ, গণ্ডিবদ্ধ কর্মজীবন, সমাজমুখী ও সমাজকল্যাণমূলক কর্মসূচির অভাব।

আবার অনেকেই মনে করছেন, যেহেতু দেশের রাজনৈতিক অবস্থা স্তব্ধ হয়ে আছে। তাই সামাজিক উন্নয়ন ও সমাজসেবায় মনোযোগী হতে পারে ইসলামি দলগুলো। এতে দলের সাংগঠনিক কাঠামো যেমন অক্ষুণ্ন থাকবে, তেমনি সাধারণ মানুষের ভেতর গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে তাদের।

অবশ্য ইসলামি দলগুলোর সমাজ সেবায় মনোযোগী নয় এমন অভিযোগ মানতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি মাওলানা ইমতিয়াজ আলম। তার দাবি হলো, ইসলামি দলগুলোর সামাজিক অবদান সাধারণ দলগুলোর তুলনায় কোনো অংশে কম নয়। তিনি পাল্টা প্রশ্ন করেন, দেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দলগুলো সমাজের কী এমন সেবা করছে বলুন? কল্যাণসমাজ গঠনে তাদের দুর্নীতি ও লুটপাট বাধা নয় কী?

তাহলে, অভিযোগ কেন উঠছে? সে প্রশ্নেরও উত্তর দেন তিনি। বলেন, অভিযোগ উঠছে এজন্য যে, আমরা যে সেবা মানুষকে দিচ্ছি তার সামাজিক স্বীকৃতি নেই অথবা তার প্রাপ্য প্রচার নেই। যেমন, ধরুন! কোনো এলাকার একদল যুবক বাচ্চাদের লেখাপড়ার জন্য একটি স্কুল করলো। স্কুল পরিচালনার জন্য তারা একটি এনজিও করলো। অন্যদিকে একই এলাকায় একজন কারী সাহেব মসজিদের পাশে একটি মক্তব প্রতিষ্ঠা করে বাচ্চাদের কুরআন ও প্রাথমিক শিক্ষা দিলো। আপনি দেখবেন, সেই যুবকদের নানাভাবে পুরস্কৃত করা হবে। অথচ যে কারী সাহেব শিশুদের মাঝে বছরের বছর জ্ঞান বিতরণ করে যাচ্ছেন তার সেবাকে সেবা বলেই স্বীকৃতি দেয়া হবে না। আমাদের দেশের আলেমরা লাখ লাখ শিশুকে কুরআন-সুন্নাহ শিখিয়ে, যত্নের সাথে প্রাথমিক শিক্ষা প্রদান করে যাচ্ছেন সেটা কী সমাজসেবা নয়?

তিনি আরও বলেন, আমরা (ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ) রাজধানী বিভিন্ন পয়েন্টে পথশিশুদের নিয়ে ৩ মাসব্যাপী শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করেছি। কিন্তু গণমাধ্যমগুলো তা দেখেও দেখেনি। একই কাজ যদি বামধারার কোনো ছাত্র সংগঠন করতো হয়তো ফলাও করে প্রচার করতো। শুধু পথশিশুদের শিক্ষা নয় বা শুধু ইসলামী আন্দোলনের সেবামূলক কাজ নয়; ইসলামি সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের অবদান স্বীকার ও প্রচার করার ক্ষেত্রে বৈষম্য রয়েছে। শীতবস্ত্র বিতরণ, ত্রাণ বিতরণ, ঈদসামগ্রি বিতরণ, নাগরিক সচেতনতা বাড়াতে সপ্তাহব্যাপী পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচি আমাদের কোন সেবাটা তারা প্রচার করে?

খেলাফত মজলিসের ঢাকা মহানগর সভাপতি শেখ গোলাম আসগর অবশ্য সমাজসেবায় ইসলামি দলগুলোর পিছিয়ে থাকার কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, কিছুটা কমতি তো আছেই। তার ভাষায় এর কারণ হলো, এ দেশের আলেমদের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা ও আর্থিক সামর্থ্যের অভাব, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় সমাজের উপর নির্ভরতা ইত্যাদি।

তার কাছে জানতে চেয়েছিলাম, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান যদি মানুষের সহযোগিতা নিয়ে পরিচালনা করা যায় তাহলে সমাজসেবামূলক কাজ মানুষের সহযোগিতায় চলতে পারে না? এর একটি সমস্যার দিক তুলে ধরেন তিনি। তাহলো, আমাদের দেশের সাধারণ মুসলমান মাদরাসা-মসজিদকে যতোটা ইসলাম মনে করে সমাজসেবা বা ইসলামি রাজনীতিকে ততোটা ইসলাম মনে করে না। তাই একই ব্যক্তি মাদরাসা পরিচালক হিসেবে যতো সফল, রাজনীতিক হিসেবে ততোটা সফল না।

তবে উভয় রাজনীতিক মনে করেন আলেম রাজনীতিক ও ইসলামি দলগুলোর সামাজিক কল্যাণমূলক কাজে আরও মনোযোগী হওয়া দরকার। সমাজসেবা ও জনগণের পাশে দাঁড়ানোর পরিমাণ বাড়লে তাদের সামাজিক গ্রহণযোগ্যতাও বাড়বে।

ইসলামি দলগুলো কী ধরনের সমাজসেবা করতে পারেন? উত্তরে তারা বলেন, সমাজের মানুষের চাহিদা ও প্রয়োজন এক রকম হয় না। তাই সুনির্দিষ্ট করে বলে দেওয়াও কঠিন। বরং যখন যেটা প্রয়োজন মনে হবে, সেটা করতে হবে। একজনের ঘর নেই তার জন্য ঘরের ব্যবস্থা করা, একজনের চিকিৎসার টাকা নেই তার চিকিৎসার খরচ মেটানো, একটা রাস্তা ভেঙ্গে যাওয়া গ্রামবাসীর কষ্ট হচ্ছে সংগঠনের সবাই মিলে সেটা ঠিক করে দেওয়া।

তাদের পরামর্শ হলো, সংগঠনের অনেকেই হয়তো ব্যক্তিগতভাবে সমাজসেবা করছেন। কিন্তু সেটা যদি সম্মিলিতভাবে করা হয় এবং পরামর্শের ভিত্তি করা হয়, তাহলে তা আরও বেশি ফলপ্রসূ হতে পারে। তাই ইসলামি রাজনীতির সাথে জড়িত সামর্থ্যবান ব্যক্তিদের উচিৎ সম্মিলিত উদ্যোগে অংশিদার হওয়া।

অন্যদিকে তরুণ আলেম ও ইসলামি রাজনীতিকদের সেবার মানসিকতা দিনদিন বাড়ছে দাবি করে সন্তোষ প্রকাশ করেন মাওলানা ইমতিয়াজ আলম ও শেখ গোলাম আসগর। তারা রানা প্লাজার দুর্ঘটনা, দেশের উত্তরাঞ্চল ও হাওর এলাকায় বন্যা এবং রোহিঙ্গা সংকটের সময় তরুণ আলেম, ইসলামি দল ও রাজনীতিকদের ভূমিকার প্রশংসা করেন। তাদের মতে এই উদ্যোগ ও মানসিকতা তরুণদের সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠাকে সহজ করবে।

পূর্ববর্তি সংবাদকাশ্মীরে ভারতীয় সেনা সদস্য নিখোঁজ
পরবর্তি সংবাদহিন্দু নাগরিকদের প্রতি কোনও ধরনের অন্যায় সহ্য করা হবে না, ইমরান খান