বিশিষ্ট আলেমদের চোখে যেমন ছিলেন মাওলানা আবুল কালাম যাকারিয়া রহ.

আতাউর রহমান খসরু ।।
আজ দেশের বিশিষ্ট আলেম ও সিলেটের ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জামিয়া কাসেমুল উলুম, দরগাহ-এর প্রিন্সিপাল মাওলানা আবুল কালাম যাকারিয়া রহ. ইন্তেকাল করেছেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।  তার ইন্তেকালে শোকের ছায়া নেমে এসেছে দেশের আলেম-উলামা এবং সিলেটের সর্বশ্রেণির দ্বীনদার মানুষের মাঝে।

তাকে নিয়ে ইসলাম টাইমসের সাথে সংক্ষিপ্ত স্মৃতিচারণ ও মূল্যায়নধর্মী কথা বলেছেন দেশের কয়েকজন বিশিষ্ট আলেম। তাদের মধ্যে রয়েছেন, মরহুমের ছাত্র, সহকর্মী ও শিক্ষকতুল্য গুরুজন। নিম্নে তাদের বক্তব্য তুলে ধরা হলো,

নির্ভরযোগ্য আলেম বলতে যা বোঝায় তিনি তাই ছিলেন : মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক

আমার দেখা একজন আখলাকি মানুষ ছিলেন মাওলানা আবুল কালাম যাকারিয়া রহ.। বৃহত্তর সিলেটসহ সারা দেশের আলেম-উলামার আস্থাভাজন ছিলেন তিনি। নির্ভরযোগ্য আলেম বলতে যা বোঝায় তাই ছিলেন।

তিনি আমার সহপাঠীর ছাত্র ছিলেন। যতো দূর শুনেছি, লেখাপড়ার যুগে তার জীবনে কোনো কালি নেই, শিক্ষকতার জীবনেও তিনি ছিলেন অত্যন্ত প্রিয়জন। ছাত্রদের ইলমি তারাক্কি (জ্ঞানগত উন্নতি) নিয়ে সব সময় চিন্তা করতেন।

ব্যক্তিত্ববান ও যোগ্যতাসম্পন্ন আলেম হওয়ার পাশাপাশি সিলেট দরবাহ মাদরাসার দক্ষ মোহতামিম হিসেবেও সিলেটের মানুষের দ্বীনি অভিভাবক ছিলেন মাওলানা আবুল কালাম যাকারিয়া।

জ্ঞানের চর্চাই ছিলো তার জীবনের সাধনা : মাওলানা আবদুল বছির

আমার দৃষ্টিতে তিনি ছিলেন একজন জামে’-মানে’ (সবকিছুতে যথার্থ) আলেম। বিশেষত ইলমে ফিকহ ও ইলমে হাদিসে তিনি গভীর জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন।

ছাত্রজীবন থেকে আমি তাকে জানি। ছাত্রজীবন থেকে লেখাপড়া ও জ্ঞানচর্চায় তিনি ডুবে থাকতেন। একদম নিচের জামাত থেকে তিনি আরবিতে উত্তর লিখতেন। ছাত্রজীবনে সব সময় প্রথম স্থান অধিকার করতেন। বোর্ডেও প্রথম স্থান অধিকার করতেন। শিক্ষকদের খুবই অনুগত ও আদরের ছিলেন। লেখাপড়ায় অনন্য হওয়ায় তাকে দরগাহ মাদরাসায় নিয়োগ দেওয়া হয়।

সিলেটের আযাদ দ্বীনী এদারায়ে তালিমের প্রকাশনা বিভাগের নাজেম ছিলেন তিনি। বোর্ডের জন্য একাধিক বই লিখেছেন। এখনও তার বই আমাদের বোর্ডে পাঠ্য। তার মৃত্যুতে একটা বড় ধরনের শূন্যতা তৈরি হয়েছে বলেই আমি মনে করি।

যেহেতু গবেষক আলেম ছিলেন। তাই উম্মতের উপর কোনো ফেতনা ভর করলে তিনি তার ইলমি সমাধান খুঁজরতেন এবং বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করতেন। তিনি বিভিন্ন মাহফিলে ভ্রান্ত আকিদার বিরুদ্ধে এমন এমন কিতাবের উদ্ধৃতি দিতেন যে অনেক আলেম তার নামও শোনেননি।

তিনি ছিলেন ছাত্র-শিক্ষক সবার আশ্রয় : মাওলানা আতাউল হক

তিনি আমার শিক্ষক ছিলেন। আমরা তার কাছে মুখতাসারুল মাআনি, জালালাইন, বায়জাবি ও ত্বহাবি শরিফ পড়েছি। আমি তো দেশের বাইরেও পড়েছি। আমার মনে হয়েছে তিনি একজন আদর্শ ও দক্ষ শিক্ষক ছিলেন। ইলমি গভীরতা, বিষয়বস্তুর উপস্থাপন, ভাষার মাধুর্য ও ফাননি মাহারাতে(বিভিন্ন বিষয়ে দক্ষতা) তিনি অতুলনীয় ছিলেন। সিলেট অঞ্চলের সবচেয়ে বড় ফকিহ মনে করা হতো তাকে। ছাত্রদের মধ্যে তিনি সবচেয়ে জনপ্রিয় ছিলেন। কিন্তু তার রউব (ব্যক্তির প্রখরতা) ছিলো। উনার সামনে টু-শব্দ করার সাহস কেউ পেতো না।

আমি হুজুরের উপর নির্ভর করেই পড়ানো শুরু করেছি। যেকোনো কিতাব পড়াতে গিয়ে আটকে গেলে হুজুরের কাছ থেকে হল (বুঝে নেওয়া) করে নিতাম। এমনও হয়েছে, একটা কঠিন কিতাব পড়ানোর দায়িত্ব এলো। আমরা বলতাম, পড়াতে পারবো না। হুজুর আশ্বাস দিয়ে বলতেন, শুরু কর আমি তো আছিই। ছাত্র-শিক্ষক সবারই আশা ও আশ্রয়ের জায়গা ছিলেন।

আমার বাবা খতিব আল্লামা উবায়দুল হক রহ.-এর কাছেও তিনি আস্থাভাজন ছিলেন। বিশেষত ইলমি কাজগুলো তিনি তার মাধ্যমে করাতেন। আব্বাই নায়েবে মোহতামিম হিসেবে তার নাম প্রস্তাব করেন।

শিক্ষকদের কাছেও তিনি খুব প্রিয় ছিলেন। তার শিক্ষকদের আগ্রহেই তিনি এখানে শিক্ষক হন। তার শিক্ষক –আমাদের শায়খুল হাদিস- মাওলানা মুহিব্বুল হক মৃত্যুর সংবাদ শুনে খুব কান্নাকাটি করছেন।

পূর্ববর্তি সংবাদডাকসু নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি: পর্যবেক্ষণকারী শিক্ষকরা
পরবর্তি সংবাদমাওলানা আবুল কালাম যাকারিয়ার ইন্তেকালে আল্লামা বাবুনগরীর শোক