মুসলিমবিদ্বেষী ব্রিটিশ লেখক মিলো অস্ট্রেলিয়ায় নিষিদ্ধ

ইসলাম টাইমস ডেস্ক: ইসলাম ও মুসলিমবিদ্বেষ পোষণ করে লাগামহীন ও বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য প্রসিদ্ধ ব্রিটিশ রাজনৈতিক ভাষ্যকার ও লেখক মিলো ইয়ান্নোপোলোসকে অস্ট্রেলিয়ায় প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

শুক্রবার নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে মসজিদে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর ইসলাম ধর্মকে ‘বর্বর’ এবং ‘অ্যালিয়েন’ সংস্কৃতি বলে বিতর্কিত মন্তব্য করেন তিনি। এই মন্তব্যের পর অস্ট্রেলিয়া সরকার তার বিরুদ্ধে দেশটিতে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।

চলতি বছরের শেষের দিকে অস্ট্রেলিয়ায় একটি অনুষ্ঠানে বিতর্কিত এই ব্রিটিশ ভাষ্যকারের বক্তৃতা করার কথা ছিল। কিন্তু অস্ট্রেলিয়া সরকার ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করায় ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম রেইটবার্ট নিউজের সাবেক এই সম্পাদক সেই অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পারবেন না।

নারীদের ‘পরগাছার’ সঙ্গে তুলনা করে ২০১৫ সালে ডিসেম্বরে ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দেন ব্রিটিশ এই ভাষ্যকার। চলতি মাসের শুরুর দিকে অস্ট্রেলিয়ার স্বরাষ্ট্র দফতর প্রাথমিকভাবে মিলোকে ভিসা না দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। দফতরের এই সিদ্ধান্তে সমর্থন জানায় সরকারের জ্যেষ্ঠ মিত্ররা। পরে উদারপন্থীদের দাবির মুখে তাকে ভিসা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

কিন্তু ক্রাইস্টচার্চের দুটি মসজিদে ভয়াবহ বন্দুক হামলায় ৪৯ জনের প্রাণহানির পর আবারো বিতর্কিত মন্তব্য করেন মিলো। তার এ মন্তব্যের প্রতিবাদে শনিবার সকালের দিকে আগের নেয়া সিদ্ধান্ত বাতিল করে অস্ট্রেলিয়ায় প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।

শুক্রবার জুমআর নামাজের সময় অস্ট্রেলীয় বংশোদ্ভূত উগ্র ডানপন্থী শেতাঙ্গ সন্ত্রাসী ব্রেন্টন ট্যারেন্ট আধা-স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র নিয়ে নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের দু’টি মসজিদে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালান। মসজিদের ভেতরে ঢুকে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে ৪৯ জনকে হত্যা করেন তিনি। এতে আহত হয় আরো ৫০ জন।

মুসলিমদের নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের অতীত ইতিহাস আছে মিলোর। ক্রাইস্টচার্চে হামলার পর ফেসবুকে দেয়া এক পোস্টে ইসলাম ধর্মকে নিয়ে তিনি আপত্তিকর মন্তব্য করে বলেন, চরম বামপন্থী, আদিম এবং অ্যালিয়েন ধর্মীয় সংস্কৃতির প্রতিষ্ঠার কারণে ক্রাইস্টচার্চের মতো হামলার ঘটনা ঘটছে।

ক্রাইস্টচার্চের হামলাকারী ট্যারেন্ট যুক্তরাষ্ট্রের রক্ষণশীল রাজনৈতিক অ্যাক্টিভিস্ট ক্যানড্যাসি ওয়েনসের দ্বারা প্রভাবিত বলে ম্যানিফেস্টোতে উল্লেখ করেছেন। ট্যারেন্টের এই ইশতেহারের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন মিলো। ফেসবুকে তিনি লিখেছেন, নিউজিল্যান্ডে যা ঘটছে সেজন্য মিলো ইয়ান্নোপোলোসের কিছুই করার নেই। তবে প্রাণঘাতী এই হামলার জন্য বামপন্থীরা দায়ী।

ইসলাম ধর্মকে অ্যালিয়েন সংস্কৃতি এবং অসভ্য বলে মন্তব্য করায় অস্ট্রেলিয়া সরকার শনিবার আরো পরের দিকে তার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দেবে।

এদিকে, ক্রাইস্টচার্চে মসজিদে হামলার ঘটনায় মুসলিম অভিবাসনকে দায়ী করে বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে ডিম হামলার শিকার হয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার কট্টর ডানপন্থী এক সিনেটর। শুক্রবার ক্রাইস্টচার্চের দুটি মসজিদে হামলার পর আপত্তিকর মন্তব্যের প্রতিবাদে শনিবার এক তরুণ অস্ট্রেলিয়ার ওই সিনেটরের মাথায় ডিম ভাঙেন।

অভিবাসনের কারণে ক্রাইস্টচার্চে মসজিদে হামলায় ৪৯ জনের প্রাণ গেছে বলে মন্তব্য করে বিশ্বজুড়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন দেশটির কুইন্সল্যান্ডের সিনেটর ফ্রাজার অ্যানিং। তীব্র সমালোচনার মাঝেই মেলবোর্নে শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে কথা বলার সময় সিনেটর ফ্রাজারের মাথায় ডিম দিয়ে আঘাত করেন অজ্ঞাত এক তরুণ।

পূর্ববর্তি সংবাদনিউজিল্যান্ডে খ্রিস্টান জঙ্গির হামলার প্রতিবাদে বাগেরহাটে বিক্ষোভ
পরবর্তি সংবাদতিনি ছিলেন নির্বিরোধ, শান্তিপ্রিয়, ধর্মপ্রাণ মানুষ