এই খুনির পেছনে আছে কারা?

আবু তাশরীফ ।।

একজন মুসলিমবিদ্বেষী খ্রিস্টান সন্ত্রাসী বন্দুক হাতে মসজিদে ঢুকে নির্বিচারে গুলি করে মানুষ মারছে। ঘুরে ঘুরে, খুঁজে খুঁজে মারছে। সেই দৃশ্য আবার নিজের মাথায় বসানো ক্যামেরার মাধ্যমে লাইভ প্রচার করছে। তার রাইফেলের বাঁটে-নালায় লিখে রেখেছে মুসলিমবিরোধী যুদ্ধে খ্রিস্টান সেনানায়কদের নাম। বিভিন্ন ক্রুসেড-আধা ক্রুসেড যুদ্ধের নাম ও সন-তারিখ। ১৭ পাতার বিদ্বিষ্ট বিবৃতি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দিয়েছে। দেশের প্রধানমন্ত্রীকে ঘটনার সামান্য আগে মেইল করে জানিয়ে দিয়েছে হত্যাকাণ্ডের প্রস্তুতির কথাও। এক মসজিদে হামলা শেষ করে আরেক মসজিদে গিয়ে হামলে পড়েছে। কয়েক বছর ধরে মুসলিমবিরোধী হামলার প্রস্তুতি নিয়েছে।

এত ঠাণ্ডা মাথায়, এত ভয়ঙ্কর কাজটাই করা হয়েছে ১৫ মার্চ শুক্রবার নিউজিল্যান্ডে। এটা কীভাবে সম্ভব হলো? এই আক্রোশ ও নৃশংসতা তার ভেতরে তৈরি হলো কীভাবে? নিউজিল্যান্ডকে আপাত শান্ত নিরিবিলি একটি দেশ মনে করা হয়। সেই দেশটাকেই এই বর্বরতার জন্য বেছে নিল কেন খুনি?

এমন শত প্রশ্ন সামনে চলে আসে এখন। এর সঙ্গে এ প্রশ্নটাও জোরালো হয়ে সামনে আসে যে, এই বর্বরতার ঘটনা ও বর্বরতার বোধ ও বীজ কি সে একাই তৈরি করেছে? একাই বহন করেছে? একাই চাষবাস করে এই বীভৎস খুনে প্রবণতাটাকে বাস্তব করে তুলেছে? উত্তর খুঁজতে পেছনে যাওয়ার দরকার নেই। আধুনিক ‘সভ্য’ পৃথিবীর রাজনীতি, মিডিয়া, সংস্কৃতি, শোবিজে এবং রাষ্ট্রপ্রধানদের স্লোগান ও বক্তব্যেই এর বীজ-চাষ-বর্ধনের বহু প্রণোদনা পাওয়া যায়।

ক্রুসেড যুদ্ধের পর থেকে ইসলাম ও মুসলমানকে বিদ্বেষের নীরব চোখে দেখার যে সর্বাত্মক সংস্কৃতি তাদের মাঝে লালিত হয়ে এসেছে, আধুনিক সময়ে নয়-এগারোর পর তারা সেটাকে বহুমুখি সশস্ত্র যুদ্ধের চর্চায় নিয়ে গেছে। রাষ্ট্রীয় আয়োজনে যুদ্ধ, হত্যা, খুন, ধরে নেওয়া এবং বোমায় বোমায় শহর-নগর ধ্বংস করে দেওয়ার ঘটনা এখন চলমান। রাষ্ট্রের বাইরে ব্যক্তি ও সংগঠনগত উদ্যোগেও তাদের মাঝে নৃশংসতার কাজ-কারবার শুরু হয়ে গেছে। আর এই বিদ্বিষ্ট নৃশংসতার কাজগুলোই তারা করছে মানুষের মনস্তত্ত্ব দখলের সবকটি মাধ্যমে। এরই বিষাক্ত ফল এখন আমেরিকা-ইউরোপ জুড়ে দেখা যাচ্ছে মুসলিমবিরোধী খ্রিস্টান সশস্ত্র লোকদের নৃশংসতার ঘটনায়।

তাহলে এসব নৃশংসতার দায়টা কি খুনি এক ব্যক্তি পর্যন্ত সীমাবদ্ধ কেন থাকবে? একা একজন তো এমনি এমনি তৃষ্ণাতুর গর্বিত খুনি হয়ে উঠেনি। এর খুনে জমিন চাষ করেছে খ্রিস্টান সমাজের দেশনায়ক, চিত্রনায়ক, চিন্তানায়ক ও মিডিয়া-নায়কদের একটা বড় মিছিল। ‘ইসলামি সন্ত্রাসবাদের’ জিগির তুলে তারা যে কোনো মুসলমানের যে কোনো কর্মপ্রয়াসকে টার্গেট করেছে। যে কাউকে খুন-হত্যা বৈধ করেছে। তাদের ‘শ্রেষ্ঠত্ব ধারণা’, তাদের ‘কর্তৃত্ব ধারণা’ আর তীব্র মুসলিম বিদ্বেষের কারণে মুসলিম হত্যার বৈধতার জমিন তৈরি করেছে। এর দায় তাই পুরোপুরিভাবে বর্তায় পশ্চিমা রাজনীতিক-সাংস্কৃতিক ও মিডিয়াজগতের ওপর।

পশ্চিমা জগতের এই কট্টরপন্থা ও আক্রমণপন্থার বাইরেও একটি ভিন্নমতের স্রোতধারা আছে। সেটা খুবই ক্ষীণ। সেই স্রোতধারার কার্যকারিতা বাস্তব ক্ষেত্রে কোনো ঘটনা ঘটা বা না ঘটার নিয়ামকে পরিণত হয় না। এ জন্যই আমাদের বলতে বাধা নেই, নিউজিল্যাণ্ডে বর্বর হত্যার দায় থেকে পশ্চিমের এস্টাবলিশমেন্ট ও প্রভাবক মিডিয়ার কোনো রেহাই নেই। ঠাণ্ডা মাথার বিদ্বিষ্ট খুনীদের পেছনের রিমোটটা তাদেরই হাতে। তারাই বীজতলা ও চাষবাসের কাজ করছেন। আজ হোক, কাল হোক- এর মাশুল তাদের গুনতে হবে।

পূর্ববর্তি সংবাদগুম বা নিখোঁজ: ফিরে আসা ব্যক্তিরা কেন মুখ খোলেন না
পরবর্তি সংবাদগত দশ-বারো বছর ধরে সরকারের অপছন্দের মানুষ গুম-খুন হচ্ছে: ফখরুল