হামলার বর্ণনা দিলেন আল্লামা তাকি উসমানি ‘হঠাৎ বৃষ্টির মতো গুলিবর্ষণ শুরু হলো’

উপমহাদেশের বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন শায়খুল ইসলাম আল্লামা তাকি উসমানির উপর আজ ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা হয়। হামলায় দুই জন শহিদ ও দুই জন আহত হন। কিন্তু তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা নিরাপদে ফিরে আসতে সক্ষম হন। হামলার পর তিনি দারুল উলুম করাচিতে ফিরে সমবেত ছাত্র-শিক্ষক ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের উদ্দেশে সংক্ষিপ্ত আলোচনা পেশ করেন। সেখানে তিনি হামলার বিবরণ তুলে ধরেন। ওয়াটসঅ্যাপে পাওয়া অডিও ক্লিপের শ্রুতিলিখন করেছেন আবরার আবদুল্লাহ


 

আমি ধারণা করছি, আপনারা আজকের ঘটনা নিয়ে চিন্তিত ও পেরেশান। আমি আপনাদেরকে সংক্ষেপে ঘটনাটি বর্ণনা করছি। আমি বায়তুল মোকাররমে জুমা পড়াই। সে উদ্দেশ্যেই আমি বের হয়। আমার সাথে আমার স্ত্রী এবং এক পৌত্র ও এক পৌত্রি ছিলো। ছয়-সাত বছরের শিশু। একজন নিরাপত্তা কর্মী যিনি পুলিশের পক্ষ থেকে আসেন তিনি আমার সামনের সিটে বসা ছিলেন। আমার ড্রাইভার হাবিব ড্রাইভিং সিটে বসা ছিলো।

যখন আমরা ঘটনাস্থলে পৌঁছায় হঠাৎ বৃষ্টির মতো গুলিবর্ষণ শুরু হলো। আমাদের গাড়িকে লক্ষ্য করেই গুলি ছুড়ছিলো। সামনের দিক থেকে, ডান ও বাম দিক থেকে ধারাবাহিকভাবে বৃষ্টির মতো গুলিবর্ষণ চলতে থাকলো। আমার ড্রাইভারের শরীরের এখানে এবং এখানে (হাতের ইশারায় দেখান) দুটি গুলি লাগে। নিরাপত্তা কর্মীরও এখানে গুলি আঘাত করে। আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহ আমার শরীরে, আমার স্ত্রী ও বাচ্চাদের গায়ে ভেঙ্গে আসা কাঁচের টুকরো আঘাত ছাড়া তেমন কোনো আঘাত লাগেনি। আমাদের শরীরে কোনো গুলির লাগেনি।

হামলাকারীরা আক্রমণ করে সামনের দিকে চলে যায়। তাদের হয়তো খেয়াল হয় যাকে তারা লক্ষ্য বানাতে চেয়েছিলো তাকে লক্ষ্যে পরিণত করতে পারেনি, তখন আবার ফিরে আসে এবং চতুরদিক থেকে গুলিবর্ষণ শুরু হয়। আমার নিরাপত্তাকর্মী আবারও গুলিবিদ্ধ হন এবং শহিদ হয়ে যান। আমার ড্রাইভারের ডান হাত গুলি আঘাতে অকেজো হয়ে যায়। কিন্তু সে বাম হাত দিয়ে গাড়ি চালিয়ে নিয়ে যায়। সে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে জীবনবাজি রেখে গাড়ি চালাতে থাকে।

আমি তাকে বলেছিলাম, তোমার হাতে আঘাত লেগেছে। তুমি পেছনে এসো আমি গাড়ি চালাই। কিন্তু সে রাজি হয়নি। সে বললো, হজরত আল্লাহর ওয়াস্তে আপনি এমনটি করবেন না। ওরা আপনার উপর দ্বিতীয়বার হামলা করেছে। সম্ভাবনা আছে ওরা তৃতীয়বারের মতো হামলা চালাবে। আপনি পেছনে বসুন এবং মাথা নিচু করে বসুন যেনো আপনার শরীরে গুলি না লাগে।

তার হাত গুলির আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত ছিলো, রক্ত ঝরছিলো এই অবস্থায় সে নিপা চৌরাঙ্গি থেকে লিয়াকত ন্যাশনাল হাসপাতালে গাড়ি চালিয়ে নিয়ে যায়। হাসপাতালে পৌঁছানোর পর আমি তাকে তাকে গাড়ি থেকে নামাই। ড্রাইভার ও নিরাপত্তা কর্মীকে জরুরি বিভাগে নিয়ে যায়। তারা দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করে।

আমরা আশা করেছিলাম, নিরাপত্তা কর্মী বেঁচে যাবেন। কিন্তু ডাক্তাররা জানালেন, হাসপাতালে যাওয়ার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে। ড্রাইভারের কথা বললো, এর চিকিৎসা সম্ভব। চিকিৎসা করলে সে বেঁচে যাবে এবং সুস্থ্ হয়ে উঠবে।

আমাদের পেছনের গাড়িতে একজন ড্রাইভার ও নিরাপত্তা কর্মী ছিলো। গুলির আঘাতে নিরাপত্তা কর্মী শহিদ হয়ে যান এবং ড্রাইভার মারাত্মকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হন। সে হাসপাতালে ভর্তি। তার অপারেশন হবে।

আল্লাহর তায়ালার কুদরত যে, তিনি আমাকে রক্ষা করেছেন। আপনাদের দোয়া ছিলো, আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহ ছিলো। আল্লাহ তায়লা আমাকে কীভাবে রক্ষা করলেন তার ব্যাখ্যা আমি জাগতিক কোনো জিনিসের মাধ্যমে করতে পারবো না। আল্লাহর দয়ায় আমি পরিপূর্ণ সুস্থ আছি। ভালো আছি। বহাল তবিয়তে আপনাদের সামনে আছি। আমি ভয়ও পাইনি এবং চিন্তিতও নই। কিন্তু আমার দুইজন সাথী শহিদ হয়েছেন। তাদের জন্য আমার হৃদয় ক্ষত-বিক্ষত। তাদের পরিবারের প্রতি আমার দোয়া ও সমবেদনা। দুইজন আহত হয়েছেন। তার মধ্যে একজনের অবস্থা গুরুতর। আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে পরিপূর্ণ ও দ্রুত আরোগ্র দান করুন। আমিন।

পূর্ববর্তি সংবাদগ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি রোধ ও নতুন নির্বাচনের দাবিতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কর্মসূচি ঘোষণা
পরবর্তি সংবাদআইয়ুব খানের উন্নয়নের দশকের সাথে সাদৃশ্যের কথা বললেন আনু মুহাম্মদ