শাহ মুহাম্মাদ খালিদ ।। কুর্মিটোলা হাসপাতাল থেকে
গতকাল ২৮ মার্চ রাজধানীর বনানীর এফ আর টাওয়ারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে এখন পর্যন্ত মারা গিয়েছেন ২৫ জন। আহত অবস্থায় বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন সত্তরের অধিক মানুষ। এদের মধ্যে ১২ জন আহত ব্যক্তি ভর্তি হয়েছিলেন বিমানবন্দর সড়কের কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে। বনানী থেকে এই হাসপাতাল বেশ কাছে অবস্থিত। দুর্ঘটনার পরদিন অর্থাৎ আজ শুক্রবার দুপুর আড়াইটার দিকে এই প্রতিবেদক দিয়েছিলেন কুর্মিটোলা হাসপাতালে। নিচতলায় বেজমেন্টে দুটি ইলেকট্রিক মিডিয়ার গাড়ি দেখা যায়। সংবাদকর্মীরা এখান থেকে আহতদের সর্বশেষ অবস্থা সরাসরি সম্প্রচার করছিলেন।
ওপরে গিয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আহত অবস্থায় যে ১২ জন ভর্তি হয়েছিলেন তাদের মধ্যে চারজন আজ সকালেই রিলিজ নিয়ে চলে গেছেন। বাকি ৮ জনের মধ্যে একজনের অবস্থা একটু আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। তার শরীরের ১০ শতাংশ আগুনে পুড়ে গেছে। বাকি সাতজন এখনো এখানে চিকিৎসাধীন আছেন। তবে তাদের আঘাত ততটা গুরুতর নয়।
![](https://scontent.fdac40-1.fna.fbcdn.net/v/t1.15752-9/55621046_337824983534662_9012348491032166400_n.jpg?_nc_cat=103&_nc_ht=scontent.fdac40-1.fna&oh=94edae9de2c74cfe5a2e4d5e29735f48&oe=5D451C63)
ভবন থেকে নামতে গিয়ে অথবা আগুনে ভবনের বিভিন্ন অংশ ভেঙে বা ছুটে গিয়ে তাদের গায়ে পড়ে তার আহত হয়েছেন। তারা এখানে চিকিৎসা নিচ্ছেন এবং আগামী এক দু’দিনের মধ্যে তারাও এখান থেকে রিলিজ নিবেন বলে আশা করা যাচ্ছে। যে ২৫ জনের মৃত্যুর সংবাদ এখন পর্যন্ত জানা গিয়েছে তাদের মধ্যে ছয়জনকে এই কুর্মিটোলা হাসপাতালে আনা হয়েছিল এবং ইতোমধ্যেই তাদের লাশ স্বজনদের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।
কুর্মিটোলা হাসপাতালের ব্যাপারে মানুষের জানাশোনার ঘাটতি আছে বলে মনে করা হয়। অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন এ হাসপাতালটি ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে কিন্তু বনানী থেকে এয়ারপোর্টগামী সড়কের একেবারে সাথেই অবস্থিত। বনানীর আহত-নিহতদের সংবাদ সংগ্রহের পর এই প্রতিবেদক পুরো হাসপাতালটি একবার ঘুরে দেখেন। একটি আদর্শ হাসপাতাল যেমন নিরিবিলি পরিবেশে থাকা দরকার কুর্মিটোলা হাসপাতালটি ঠিক তেমন জায়গাতেই অবস্থিত। ছিমছাম সাজানো গোছানো পরিবেশ, কোথাও কোন হৈচৈ বা হট্টগোল নেই। হাসপাতালে জানালা দিয়েই ঢাকা বিমানবন্দরের সুবিশাল রানওয়ে, অপেক্ষমান বিমানের সারি এবং ক্যান্টনমেন্টের একটা বড় অংশ সহজেই দেখা যায়।
২০১২ সালের ১৩ মে প্রধানমন্ত্রী ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল উদ্বোধন করেছেন এমনটা ফলকে লেখা থাকলেও এখানে চালু রয়েছে ৩০০ শয্যা। রোগীদের সবরকম ডাক্তার দেখানো, ডায়াগনস্টিক জাতীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং ঔষধ বিতরণের কাজগুলো এখানে করা হয়। যে সমস্ত রোগী এখানে চিকিৎসা নিতে আসছেন তারা আনন্দ প্রকাশ করে জানালেন, এই দেশে সাধারণ মানুষের জন্য এরকম ছিমছাম সাজানো গোছানো এবং দৃষ্টিনন্দন হাসপাতাল আর নেই। সরকারি হাসপাতাল বলতেই যে একটা জগাখিচুড়ি চিত্র আমাদের সামনে ফুটে উঠে কুর্মিটোলা হাসপাতাল তার সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম।
![](https://scontent.fdac40-1.fna.fbcdn.net/v/t1.15752-9/55543729_394093554705667_3874418228818083840_n.jpg?_nc_cat=102&_nc_ht=scontent.fdac40-1.fna&oh=b02b60c9ccb81fb7b536f96194167b50&oe=5D46FFE9)
মাত্র ১০ টাকায় এখানে সব রকম বিশেষজ্ঞ ডাক্তার, বিশেষ করে মহিলা ও শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখানো যায়। অত্যন্ত চমৎকার ও অনুকূল পরিবেশ থাকা সত্ত্বেও এই হাসপাতালে রোগীদের কোন ভিড় নেই বললেই চলে। সকাল আটটা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত বহির্বিভাগে ডাক্তার দেখানো যায়। তখন আশপাশ অর্থাৎ এয়ারপোর্ট, উত্তরা, বনানী, মিরপুর, কুড়িল বিশ্বরোড, ডিওএইচএস— এ সমস্ত এলাকা থেকে কিছু রোগী এসে ডাক্তার দেখিয়ে আবার চলে যান। কিন্তু হাসপাতলে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন এমন রোগীর পরিমাণ একেবারে হাতে গোনা। এখানে কর্মরত চিকিৎসক এবং কর্মচারীরা জানালেন তার কারণ। প্রথমত হাসপাতালটি জনমানবহীন এলাকায় অবস্থিত। জায়গাটা হল ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে। এখানে সাধারণ মানুষের বসতি নেই। যাদের জন্য এই হাসপাতাল তাদের বসবাসের জায়গাগুলো এখান থেকে বেশ দূরে। নিম্নবিত্ত যে সমস্ত রোগীদের অ্যাম্বুলেন্সের বদলে রিক্সা বা ভ্যানে করে আনা হয় এখানে আসা তাদের জন্য সম্ভব হয় না। কারণ এ রাস্তা দিয়ে রিক্সা ও ভ্যান চলাচল নিষিদ্ধ। অনেকে আবার এটাকে সেনাবাহিনীর হাসপাতাল ভেবে থাকেন।
তাছাড়া এই হাসপাতালে এখনো অস্ত্রোপচারের চিকিৎসা সেবা শুরু হয়নি। ফলে এ ধরনের রোগীর যে মারাত্মক ভিড় অন্যান্য সরকারি হাসপাতালে দেখা যায় সেটা এখানে দেখা যায় না। ১২ তলা বিশিষ্ট সুবিশাল কম্পাউন্ড হলেও ছয়তলা পর্যন্ত রোগীদের ওয়ার্ড রয়েছে। তারা সেখানে ভর্তি হয়ে আছেন। এর উপরের ফ্লোরগুলো অব্যবহৃত পড়ে আছে। হাসপাতালে চিকিৎসক নার্স ও কর্মচারী মিলিয়ে পর্যাপ্ত জনবল নেই। তবুও যারা স্বল্প খরচে ভালো বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখিয়ে দিনাদিন বাসায় ফিরতে চান তাদের জন্য একটি আদর্শ ঠিকানা হতে পারে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল।
![](https://www.islamtime24.com/wp-content/uploads/2021/03/20210308_200803-scaled.jpg)