তার কথা ছিল নবীদের কথার মতো, তার আচরণ সাহাবাদের আচরণের মতো

এনাম হাসান জুনাইদ।।

একবার মুহাম্মদ বিন আলী বিন হুসাইন, যিনি আবু জাফর নামে প্রসিদ্ধ, তার কাছে হাসান বসরী রহ. এর আলোচনা করা হল। তখন আবু জাফর বললেন, ইনি তো এমন ব্যক্তি যার কথা নবীদের কথার মত।

সত্যি, হাসান বসরী রহ.এর কথা ছিল নবীদের কথার মত। আর তার আচার-ব্যবহার ছিল সাহাবাদের আচার-ব্যবহারের মত।

হাসান বসরী রহ. এর পুরো নাম হাসান বিন ইয়াসার। তাকে হাসান বিন আবিল হাসানও বলা হয়। তার কুনিয়াত আবু সাঈদ। তার লকব বসরী। ২১হিজরীতে তার জন্ম, তখনও হযরত ওমর রা.এর খেলাফতের দু বছর বাকী।

তার পিতা-মাতাকে মায়সানের বন্দীদের সাথে মদীনায় আনা হয়েছিল।

হাসান বসরী রহ. বলেন, আমার আব্বা এবং আম্মা বনু নাজ্জারের এক লোকের গোলাম ছিলেন। তিনি বনু সালামার এক মহিলাকে বিবাহ করেন। পরে তিনি আমার আব্বা ও আম্মাকে মোহর হিসেবে দিয়ে দেন। তারপর বনু সালামার সেই মহিলা তাদের দু’জনকে আযাদ করে দেন।

তার আম্মা উম্মে সালামাহ রাদি. এর খেদমত করতেন। হযরত উম্মে সালামা তাকে কোন প্রয়োজনে পাঠালে তিনি ছোট বাচ্চা হাসানকে নিয়ে নিজের কাছেই রাখতেন, তাকে দুধও পান করাতেন।

অনেকের ধারণা, তাকে যে ইলম ও হেকমত দান করা হয়েছিল তা সেই বরকতময় দুধেরই বহি:প্রকাশ ছিল।

এভাবেই হাসান রহ. মদীনায় বড় হয়ে উঠেন এবং সাহাবায়ে কেরামের সাথে দেখা-সাক্ষাত চলতে থাকে এবং তাদের থেকে হাদীসও শ্রবণ করেন।

হাসান বসরী রহ. ইলমের ময়দানে ছিলেন এত অগ্রসর ছিলেন যে, তাকে বলা হত শায়খুল বাসরা।

আবু বুরদাহ বিন আবু মূসা আশ‘আরী রহ. বলেন, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাহাবাদের সাথে তার চেয়ে অধিক সাদৃশ্যপূর্ণ আমি কাউকে দেখিনি।

খালেদ বিন সাফওয়ান বলেন, যখন মাসলামা বিন আব্দুল মালেকের সাথে হিরায় আমার সাক্ষাত হয়, তিনি আমাকে বললেন, হে খালেদ! আপনি আমাকে হাসান বসরী সম্পর্কে কিছু বলুন।

আমি বললাম, হাসান বসরী সম্পর্কে আমার চেয়ে বেশী আর কে জানবে? কারণ, আমি ছিলাম তার প্রতিবেশী। আমি তার মজলিসে বসতাম। আমি নিজ আগ্রহে তার ব্যাপারে জেনেছি।

তার গোপন বিষয় বাহ্যিক বিষয়ের সাথে অধিক সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল। তার কথার সাথে কাজের অধিক মিল ছিল। তিনি যদি কোন কাজের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতেন তা অবশ্যই করতেন। যখন কোন কাজ করতেন তার উপর দৃঢ় থাকতেন। তিনি যখন কোন আদেশ করতেন তার উপর নিজে সবচেয়ে বেশী আমল করতেন। আর যখন কোন কাজ থেকে নিষেধ করতেন, নিজে তা থেকে অধিক বিরত থাকতেন। তিনি লোকজন থেকে অমুখাপেক্ষী থাকতেন। আর আশপাশের লোকজন থাকত তার প্রতি মুখাপেক্ষী।

মাসলামা বললেন, যথেষ্ট হে খালেদ! আর লাগবে না। ঐ কওম কীভাবে ধ্বংস হতে পারে যাদের মাঝে এমন মহান ব্যক্তি রয়েছেন!

হাসান বসরী রহ. সর্বদা চিন্তিত থাকতেন। আখেরাতের স্মরণ তার মাঝে প্রবল ছিল।

হাসান বসরী রহ. এর ঘরের আসবাবপত্র ছিল খুবই সাদাসিদা। মাতারুল ওয়াররাক বলেন, আমরা একবার হাসান বসরী রহ.কে অসুস্থ অবস্থায় দেখতে গেলাম। তখন তার ঘরে কিছুই ছিল না। কোন বিছানা ছিল না, কোন চাদরও ছিল না। বালিশ ও চাটাইও ছিল না। হ্যাঁ, চাটাইয়ের একটি সাধারণ বিছানা ছিল যাতে তিনি শোয়া ছিলেন।

আবান ইবনে মিহবার বলেন, হাসান বসরী রহ. যখন মুমূর্ষ অবস্থায় ছিলেন, তখন কতক ছাত্র তার নিকট গিয়েছিল। তারা তাকে বলল, আপনি আমাদেরকে পাথেয় হিসেবে কিছু নসীহত করুন যাতে আমাদের উপকার হবে।

তিনি বললেন, আমি তোমাদেরকে তিনটি নসীহত করছি। তারপর উঠে যেয়ো এবং আমাকে একা থাকতে দিয়োÑ

এক. তোমাদেরকে যা থেকে নিষেধ করা হয়েছে তা থেকে তোমরা নিজেরা প্রথমে সকলের চেয়ে বেশী থেকে দূরে থাকবে।

দুই. তোমাদেরকে যে কাজের আদেশ করা হয়েছে, নিজেরা সে আমলের বেশী পাবন্দী করবে।

তিন. জেনে রাখ, তোমাদের কদম দুটিই। এক. তোমাদের পক্ষে, দ্বিতীয়. তোমাদের বিপক্ষে। তাই লক্ষ্য রেখ, সকাল-সন্ধ্যা কোথায় আসা-যাওয়া করছ।

সালেহ আলমিররী বলেন, আমি যখন হাসান বসরীর কাছে আসলাম তখন তিনি মুমূর্ষ অবস্থায় ছিলেন। অধিক পরিমাণে ইন্না লিল্লা পড়ছিলেন।

তার ছেলে তাকে বলল, আপনার মত ব্যক্তির আবার দুনিয়ার জন্য ইন্না লিল্লাহ পড়তে হয় নাকি?

তিনি বললেন, হে আমার ছেলে! আমি আমার নফসের কারণে ইন্না লিল্লাহ পড়ছিলাম, নফসের মত বড় কোন মসিবত আমার ছিল না।

তার ইন্তিকাল হয়েছে একশত দশ হিজরী পহলা রজব জুমাআর রাতে। তার ছেলের ভাষ্য অনুযায়ী তার বয়স ছিল আটাশি বছর।

বসরায় জুমাআর নামাজের পর তার জানাযার নামাজ হয়।

পূর্ববর্তি সংবাদশ্রীলঙ্কা ট্র্যাজেডি: ৭ সন্দেহভাজন গ্রেফতার
পরবর্তি সংবাদশ্রীলঙ্কার মুসলিমদের প্রতি হামলায় হতাহতের পাশে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন আল্লামা আহমদ শফী