দাড়ি নিয়ে ‘উসকানিমূলক’ প্রতিবেদন: বিবিসির বিরুদ্ধে মন্তব্যের ঝড়

ইসলাম টাইমস ডেস্ক: আজ বুধবার (২৪ এপ্রিল) বিবিসি বাংলার একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মানুষের মুখমণ্ডলের দাড়িতে কুকুরের পশমের চেয়েও বেশি জীবানু থাকে! সুইজারল্যান্ডের একটি অখ্যাত ক্লিনিকের ‘গবেষণা’র সূত্রকে ভিত্তি করে তৈরি করা ওই প্রতিবেদনের শিরোনাম করা হয়েছে-‘মানুষের দাড়ি কি কুকুরের পশমের চেয়েও বিপজ্জনক?’

দাড়ি নিয়ে এ প্রতিবেদন করায় বিবিসির ফেসবুক পাতায় পাঠকদের পক্ষ থেকে তীব্র প্রতিবাদ ও বিষোদগারের ঝড় বয়ে যাচ্ছে। অনেকেই এ জাতীয় প্রতিবেদন প্রকাশ করাটাকে ‘উসকানিমূলক’ পদক্ষেপ হিসেবেও আখ্যা দিয়েছেন। তারা বলছেন, মুসলমানদের মধ্যে যারা সুন্নতের নিয়তে দাড়ি রাখেন তাদের বেলায় এমন জীবানুতত্ত্ব সম্পূর্ণ ভুয়া। পশ্চিমের দেশগুলোতে যারা মাসে একদিনেও গোসল করে না এবং হিপ্পি কালচারের অংশ হিসেবে দাড়ি রাখে-তাদের ক্ষেত্রে এমন ‘গবেষণা’ সত্য হলেও হতে পারে। মুসলিম দেশ ও সমাজে সুইজারল্যন্ডের মতো দেশের দাড়ির ‘জীবানু বিষয়ক গবেষণা’কে ভিত্তি করে প্রতিবেদন প্রকাশ পুরোপুরি অগ্রহণযোগ্য।

বিবিসির প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ‘সুইজারল্যান্ডে একটি ক্লিনিকে পরিচালিত এক গবেষণায় পুরুষের দাড়ি সম্পর্কে ভয়াবহ এক ফলাফল বেরিয়ে এসেছে যে মানুষের দাড়িতে কুকুরের পশমের থেকে বেশি জীবাণু থাকে। হার্সল্যান্ডেন নামক একটি নামকরা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গবেষণাটি করা হয় ‘

‘মানুষের এমআরআই স্ক্যান যে মেশিনে করা হয়, সেটাতেই কুকুরেরও এমআরআই স্ক্যান করা সম্ভব কিনা – তা দেখাই ছিল ঐ গবেষণার প্রধান উদ্দেশ্য । কিন্তু তা করতে গিয়ে দাড়ি রাখার না-জানা বিপদ ফাঁস হয়ে গেছে। গবেষণায় ১৮ জন পুরুষের দাড়ির নমুনা এবং ৩০টি কুকুরের পশমের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। তারপর যে ফলাফল দেখা যায় তা আঁতকে ওঠার মতো।’

প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়, ‘কুকুরের পশম কি মানুষের দাড়ির চেয়ে নিরাপদ? অন্তত একটি গবেষণা তাই বলছে।
অন্যদিকে, যে ৩০টি কুকুরের নমুনা পরীক্ষা করা হয়, তাদের মধ্যে ২৩টির পশমে ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি ছিল। কিন্তু বাকি সাতটি কুকুরের পশম ছিল পুরোপুরি জীবাণুমুক্ত।’

‘আঁন্দ্রিয়াস গাটজেইট, যিনি হার্সল্যান্ডেন ক্লিনিকে ঐ গবেষণাটি পরিচালনা করেছেন, বিবিসিকে বলেন, “আমরা যা পেয়েছি, তাতে বলাই যায় যে দাড়িওয়ালা মানুষের চেয়ে কুকুর বেশি পরিষ্কার।”

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, বিবিসি ইংলিশ বা বিবিসির মূল পাতায় এ প্রতিবেদনটি ইংরেজি ভাষায় প্রকাশ করা হয় ১৬ এপ্রিলে। সেই প্রতিবেদনটিই ৮ দিন পর কেন বাংলা ভাষায় প্রকাশ করতে হলো-এ নিয়েও অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। ঢাকার একটি মাদরাসার প্রিন্সিপাল বলেন, মুসলমানরা চৌদ্দশ বছর ধরে দাড়ি রাখেন নবীজির সুন্নত হিসেবে। কখনো এমন উদ্ভট কথা শোনা গেল না। বরং দাড়ি শেভ করে ফেলাই যে স্বাস্থ্যের জন্য সমস্যাজনক-সে কথাই গবেষণায় বারবার উচ্চারিত হয়েছে। কুকুরের পশমের সঙ্গে তুলনা দিয়ে দাড়ি নিয়ে এ জাতীয় প্রতিবেদন প্রকাশ করাটা মুসলমানদের জন্য অপমানজনক।

রাজধানীর বারিধারার এক মসজিদের ইমাম মাওলানা এনাম হাসান বলেন, ‘মুসলমানদের অনুসরণীয় জীবনধারা নিয়ে কোনো রকম নেতিবাচক রিপোর্ট করার আগে বিবিসি বাংলার উচিত মূল বিষয়টিরর বাস্তবতা এবং এ জাতীয় রিপোর্টের প্রতিক্রিয়া নিয়ে বারবার ভেবে দেখা। কোনো একটা সূত্র ধরে একটা নেতিবাচক রিপোর্ট প্রকাশ দায়িত্বশীল কোনো গণমাধ্যমের কাজ হতে পারে না।’

 

পূর্ববর্তি সংবাদদেশব্যাপী খুন, ধর্ষণের প্রতিবাদে ৩০ এপ্রিল ঐক্যফ্রন্টের গণজমায়েতের ঘোষণা
পরবর্তি সংবাদকামরাঙ্গিরচরে মজলিসে তাহাফফুজে খতমে নবুওয়াতের সভা অনুষ্ঠিত