হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কি রহ: তাসাউফ ও জিহাদের অমলিন প্রতীক

থানাভবন

ওলিউর রহমান।।

উপমহাদেশের আধ্যাত্মিক রাহবার, কাসেম নানুতবী, রশিদ আহমদ গাঙ্গুহী, ইয়াকু্ব নানুতবীসহ দারুল উলুম দেওবন্দের অন্য প্রতিষ্ঠাতাদেরও শায়েখ সায়্যিদুত তায়িফাহ হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কি রহঃ জন্ম গ্রহণ করেন ১২৩১ হিজরীতে ভারতের মুজাফফর নগর জেলার অন্তর্গত থানাভবন নামক স্থানে।

প্রখর স্মৃতিশক্তির অধিকারী হাজী ইমদাদুল্লাহ কুরআন হিফজ করেন অতি অল্পদিনেই। জনাব মুন্সী আব্দুর রাজ্জাক ও মাওলানা ইলাহী বখশ ঝানঝানবীর মতো বিজ্ঞ আলেমের কাছে তিনি আরবি, ফারসিসহ অন্যান্য বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করেন।

কাসেম নানুতবী রহঃ হাজী ইমদাদুল্লাহর জ্ঞানের গভীরতা প্রসঙ্গে বলেন, হাজী সাহেবের কাছে কেউ যায় তার তাকওয়ার কারণে, কেউ যায় তার বিভিন্ন কারামতের কারণে, কিন্তু আমি হাজী সাহেবের কাছে যাই মূলত তার ইলমের গভীরতার কারণে।

মিয়াজী নূর মুহাম্মাদ ঝানঝানাবী রহঃ এর অন্যতম খলিফা হাজী ইমদাদুল্লাহর তাসাউফের প্রতি ঝোঁক ছিল অল্পবয়স থেকেই। ছাত্রকালেই তরীকায়ে নকশবন্দীয়ার পীর হযরত শাহ নাসিরুদ্দীনেরর কাছে বায়আত গ্রহণ করেন। শায়েখ নাসিরুদ্দীনের মৃত্যুর পর মিয়াজী নূর মুহাম্মাদ ঝানঝানবীর দরবারে দীর্ঘদিন তার সোহবতে থেকে খেলাফত লাভ করেন।

হাকীমুল উম্মত আশরাফ আলী থানভী রহঃ হাজী সাহেব প্রসঙ্গে বলতেন, লোকেরা আমাকে জিজ্ঞেস করে, – হাজী সাহেবের কাছে এমন কী আছে যা অন্যের কাছে নেই- আমি বলি, সবার কাছে জাহেরি ইলম আছে। আর হাজী সাহেবের কাছে আছে সুলূক ও তরীকতের ইলম।

বালাকোট ময়দান

“খানকায় পীর ময়দানে বীর” উপাধী খ্যাত হাজী সাহেব সাইয়্যেদ আহমদ শহীদ রহ. এর বালাকোট যুদ্ধের প্রেরণা থেকে উপমহাদেশের আযাদির জন্য করেন সশ্রস্ত্র সংগ্রাম। ১৮৫৭ সালে সিপাহী বিপ্লবকালীন সময়ে শামেলীর যুদ্ধে হাফেজ যামেন শহীদের সাথে হাজী সাহেব ছিলেন ইমামের( অগ্রনায়ক) দায়িত্বে। হাজী সাহেবকে ইমাম, কাসেম নানুতবীকে সেনাপতি ও রশিদ আহমদ গাঙ্গোহীকে কাযী নির্ধারণ করে থানাভবনে ঘোষণা করা হয় ইসলামি হুকুমত।

শামেলীর যুদ্ধে ইংরেজদের কূটচালের কাছে পরাজিত হলে হাজী সাহেব মক্কায় হিজরত করে রেবাতে ইসমাঈল নামক স্থানে ওঠেন। স্বচ্চল ঘরে জন্ম নেওয়া হাজী সাহেব মক্কার দিনগুলোতে চরম অর্থ-সংকটে ছিলেন। কয়েকদিন পর্যন্ত যমযমের পানি পান করে কাটিয়ে দিতেন। কারো কাছ থেকে সাহায্যের আশা করতেন না।

কাসেম নানুতবী, রশিদ আহমদ গাঙ্গোহীরা দেওবন্দে দারুল উলূম প্রতীষ্ঠা করেন হাজী সাহেবের পরামর্শে। মক্কায় হিজরত করলেও চিঠির মাধ্যমে রাখতেন শাগরেদদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ।

হাজী সাহেবের জীবন ছিল কারামাতে ভরপুর। শামেলীর যুদ্ধের পর মক্কায় হিজরতের সময় হাজী সাহেব এক মুরিদের বাড়িতে কিছুদিন অবস্থান করেন। স্থানীয় ইংরেজ অফিসার খোঁজ পেয়ে ‘রাষ্ট্রদ্রোহিতার ফরমান জারি হওয়া আসামীর’ তল্লাশী করতে এলে বাড়ির কোথাও তাকে খুঁজে পায়নি। অথচ হাজী সাহেব ঘরে নামাজ পড়তে ছিলেন।

হাজী সাহেব জীবনে তিনটি বিয়ে করেছিলেন। খাদিজা নামের প্রথম স্ত্রী তার জীবদ্দশাতেই ইনতিকাল করেন। খায়রুন্নেসা ও আমাতুল্লাহ নামে অপর দুই স্ত্রী হাজী সাহেবের ইনতিকালের পরেও বেঁচে ছিলেন।

জন্ম থেকেই হাজী সাহেব ছিলেন শীর্ণ ও দুর্বল দেহের। তাছাড়া জিহাদ, মুজাহাদা, ঘুম ও খাদ্য স্বল্পতার কারণে তার শরীর আরো হালকা হয়ে পড়ে। শেষ বয়সে দীর্ঘদিন তার পেটে পীড়া ছিল। ১৩১৫ হিজরীর ১৩ জুমাদাল উলা ৮৪ বছর বয়সে সোমবার সুবহে সাদিকের সময় হাজী সাহেব মক্কায় বাইতুল্লার পাশেই ইনতিকাল করেন।

খলীল আহমদ সাহরানপুরী, আশরাফ আলী থানবী, মাহমুদ হাসান দেওবন্দী, ইয়াকুব নানুতবী আব্দুল ওয়াহিদ বাঙালির মতো জদ্বিখ্যাত আলেমগণ ছিলেন হাজী সাহেবের বিশিষ্ট খলিফা।

পূর্ববর্তি সংবাদআশুগঞ্জে তিন শতাধিক চাতালকল বন্ধ, দুর্বিসহ জীবন কাটাচ্ছেন ১০ হাজার শ্রমিক
পরবর্তি সংবাদহযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ১০টি সোনার বারসহ একজন আটক