সম্পদে কুরআনে নির্ধারিত সুবিচার জরুরি, সমতা নয়: আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী

ইসলাম টাইমস ডেস্ক: গত ২৮ এপ্রিল সম্পদে নারী-পুরুষের অধিকার নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র দেওয়া বক্তব্যে কারো কারো মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে উল্লেখ করে জমিয়ত মহাসচিব আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী বলেছেন, সম্পত্তিতে কে কত অংশ পাবে তা নিয়ে ইসলামে কোন অস্পষ্টতা নেই। পিতার মৃত্যুর পর তার সম্পদ কীভাবে বণ্টিত হবে সে বিষয়টি পবিত্র কুরআনে সূরা নিসা’র ১১ থেকে ১৪নং আয়াতে স্বয়ং মহান আল্লাহ সবিস্তার জানিয়ে দিয়েছেন। যে কেউ আয়াত দু’টির অনুবাদ পড়লেই স্পষ্ট বুঝতে পারবেন, কোন ব্যাখা-বিশ্লেষণের প্রয়োজন হবে না।

গতকাল (৩০ এপ্রিল) মঙ্গলবার পল্টনস্থ দলীয় কার্যালয়ে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ’র কেন্দ্রীয় মুযাকারা মজলিসের বৈঠকে সভাপতির বক্তব্যের এক পর্যায়ে জমিয়ত মহাসচিব আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, এতদসত্ত্বেও ইসলামের এই বিধানের কোন অংশ বুঝতে অসুবিধা হলে সরকারের উচিত হবে বিশেষজ্ঞ উলামায়ে কেরামের পরামর্শ চাওয়া। তাঁরাই সম্পদ বণ্টনে মুসলমানদের জন্য আল্লাহর নির্ধারিত বিধান কি, সেটা সুন্দরভাবে তুলে ধরবেন। পবিত্র কুরআনের এই স্পষ্ট বিধানে কোনরূপ পরিবর্তন-পরিবর্ধন বা সংশোধনের সুযোগ নেই। কারো অধিকারে হস্তক্ষেপ করা নয়, বরং সরকারের কর্তব্য হচ্ছে সম্পদে নারী-পুরুষের জন্য যে অধিকার কুরআনে নির্ধারিত আছে, সেটা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে কিনা, কেউ অন্যায়ভাবে বা ভুল বুঝিয়ে কাউকে বঞ্চিত করছে কিনা, সেটা তদারকি করা।

এ প্রসঙ্গে আল্লামা কাসেমী আরো বলেন, ইসলাম নারীকে পুরুষের প্রতিদ্বন্দ্বীরূপে দেখে না, বরং পরিবার, সমাজ ও দেশ গড়ার জন্য নারী-পুরুষ পরস্পর পরিপূরক। নারী-পুরুষ, স্বামী-স্ত্রী, ভাই-বোন সবাইকে ইসলামী সমাজ নির্মাণে বিশাল দায়ভার কাঁধে তুলে নিতে হয়। সে দায়ভার পালনে প্রতিটি মুসলমান হলো মহান আল্লাহর খলিফা। তবে ইসলাম সে দায়ভারটি নারী-পুরুষের উপর সমানভাবে নয়, বরং সক্ষমতার ভিত্তিতে ন্যায্যভাবে বণ্টন করেছে।

তিনি বলেন, ইসলামে নারী-পুরুষ উভয়কে একই রণাঙ্গনে এবং একই বাংকারে হাজির করে না। উভয়ের লড়াইয়ের ক্ষেত্রের ন্যায্যতার দায়ভারও ভিন্ন। যে কারণে সবক্ষেত্রে নারী-পুরুষের প্রয়োজন বা চাহিদা সমান হয় না। সুতরাং এক্ষেত্রে সুবিচারটিই জরুরি, সমতা নয়।  গত ২৮ এপ্রিল ‘জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস-২০১৯’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সম্পদে নারী-পুরুষের অধিকার নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র দেওয়া বক্তব্যে কারো কারো মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে উল্লেখ করে তিনি এসব কথা বলেন।

জমিয়ত মহাসচিব আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী বলেন, পাশ্চাত্যের দেশসমূহে তালাকের পর পরিবারের সম্পদের সমান ভাবে ভাগাভাগীর বিধান চালু করেছে। যে কারণে অধিকাংশ পুরুষ আর বিয়ে করতেই রাজী হচ্ছে না। কারণ, তাদের ভয় বিয়ে ভাঙ্গলে তাদের দিন-রাতের কষ্টার্জিত সম্পদ, গৃহ, গাড়ি সবকিছুর অর্ধেক তার তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীকে দিতে হবে। পাশ্চাত্যে তো অর্ধেকের বেশি বিয়েই ভেঙ্গে যায়। ফল দাঁড়িয়েছে এই, নারী হারাচ্ছে কোন একজন পুরুষের সারা জীবনের জীবনসঙ্গী হওয়ার সুযোগ। যে কারণে তাকে কাটাতে হচ্ছে পুরুষের গার্ল ফ্রেন্ড বা কলগার্লরূপে। নারী পাচ্ছে না স্ত্রীর মর্যাদা। আর্থিক নিরাপত্তার অভাবে হাজার হাজার নারী শামিল হচ্ছে পতিতাবৃত্তিতে। ফলে নারী হচ্ছে স্রেফ ভোগ্য পণ্য ও আরো অসহায়।

তিনি বলেন, ইসলামে মায়ের সম্মান পিতার চেয়ে বেশি। বলা হয়েছে মায়ের পায়ের নীচে সন্তানের জান্নাত। তবে সন্তান সব সময়ই অর্জনের বিষয়। এই অর্জন করতে হয় সময়, শ্রম, ভালবাসা ও আবেগ বিনিয়োগ করে। যে মা বেশির ভাগ সময় কাটায় ঘরের বাইরে এবং সন্তান পালনে যার হাতে কোন সময়ই থাকে না, তার পক্ষে কি সন্তানের সাথে ঘনিষ্ঠ হওয়ার সময় থাকে? ফলে সম-অধিকারের নামে পাশ্চাত্যসমাজ নারীকে শুধু তার স্বামী থেকেই দূরে সরিয়ে নেয়নি, দূরে সরিয়েছে তার সন্তান থেকেও। এতে নারী হয়েছে আপনজনহারা।

তিনি বলেন, নারী-পুরুষ উভয়ই মহান আল্লাহর সৃষ্টি। আর নিজ-সৃষ্টির প্রতি সুবিচার স্রষ্টার চেয়ে আর কে বেশি করতে পারেন? পবিত্র কুরআনে অত্যন্ত সুন্দরভাবে পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধন সুদৃঢ় হওয়ার মতো উপযোগী করে সম্পদের সুষম বণ্টন নীতি জারি করা হয়েছে। ইসলামের সম্পদ বণ্টনের এই নীতি যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা গেলে নারী-পুরুষ উভয়ের জন্যই কল্যাণ ও মঙ্গল নিহিত। এতে সুন্দর ও সুদৃঢ় পরিবার গড়ে ওঠে এবং আত্মীয়তা ও ভাই-বোনের বন্ধন হয় মজবুত। সরকারের দায়িত্ব, সম্পদ বণ্টনের এই নীতি যথাযথভাবে পালন করা হচ্ছে কিনা অথবা কেউ ধোকা দিয়ে বা ভুল ব্যাখ্যা করে কাউকে প্রতারিত করছে কিনা- তাতে সুরক্ষা দেওয়া।

প্রশিক্ষক সম্পদক মুফতি আনোয়ার মাহমূদের পরিচালনায় বৈঠকে বিষয়ভিত্তিক আলোচনা করেন দলের সহসভাপতি আল্লামা আব্দুর রব ইউসুফী ও আল্লামা উবায়দুল্লাহ ফারুক। তাঁরা দলের নীতি ও আদর্শ বিষয়ে এবং মাঠ পর্যায়ে দলীয় কাজের রূপরেখা ও কৌশলের উপর বিস্তারিত আলোচনা করেন। সকাল ১০টায় বৈঠক শুরু হয়ে বিকেল ৫টায় শেষ হয়।

পূর্ববর্তি সংবাদআগামী ৪ জুলাই থেকে হজ ফ্লাইট শুরু
পরবর্তি সংবাদ‘ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি রোধ করতে সব ধরনের প্রস্তুতিই নেওয়া হয়েছে’