ইসলাম টাইমস ডেস্ক: ঘূর্ণীঝড় ফণীর কারণে উপকূলে বেড়িবাঁধ ভেঙে অনেক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। কোথায় কোথায় ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধে জিও ব্যাগ ফেলার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তবে তাতে রক্ষা হবে কিনা সেটি খুব পরিস্কার নয়।
পিরোজপুর: ঘূর্ণিঝড় ফণীর আঘাত হানার খবরে পিরোজপুর জেলার উপকূলীয় উপজেলাগুলোর বিভিন্ন সাইক্লোন শেল্টারে প্রায় ২৫ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন বলে জেলা ও উপজেলা ঘূর্ণিঝড় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে জানা গেছে। এর মধ্যে নারী-শিশু ও বৃদ্ধদের সংখ্যাই বেশী। বঙ্গোপসাগরের কাছাকাছি মঠবাড়িয়া উপজেলার ৫৪টি আশ্রয় কেন্দ্রে সর্বাধিক সংখ্যক আশ্রিত রয়েছে।
এছাড়া পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা ইউনিয়নের খেতাচিড়ার বেড়িবাঁধ ভেঙে বিভিন্ন গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বলেশ্বর, সন্ধ্যা, কালিগঙ্গা, কঁচানদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপরীতসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
শরণখোলা (বাগেরহাট): শরণখোলায় শুক্রবার দুপুরে ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে বলেশ্বর নদীর তীব্র স্রোতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৩৫/১ পোল্ডারের তিনটি পয়েন্টে রিংবাঁধ ভেঙে তিন গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। দশটি পয়েন্টে বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। আতঙ্কিত এলাকাবাসী বিভিন্ন সাইক্লোন শেল্টারে আশ্রয় নিয়েছে।
বগী ওয়ার্ড ইউপি সদস্য রিয়াদুল পঞ্চায়েত জানান, শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বগী এলাকার বেড়িবাঁধের আরো দুটি পয়েন্ট নতুন করে প্রায় দুইশ মিটার ভেঙে তিনটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে চার সহস্রাধিক পরিবার দুর্ভোগে পড়েছে।
শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. কামরুজ্জামান বলেন, ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করে সবাইকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
মনপুরা (ভোলা): মনপুরা মেঘনার অব্যাহত ভাঙনে বিলীন হয়ে যাচ্ছে জনপদ। মেঘনার তীব্র ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে উত্তর সাকুচিয়া ইউনিয়নের মাস্টার হাট বাজারের পশ্চিম পাশের বেড়িবাঁধ ও কোরেজডেম। হাজিরহাট ইউনিয়নের সোনারচর রাস্তার মাথা, দাসেরহাট, চৌধুরী বাজারের পূর্বপাশের বেড়িবাঁধ। দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ ও পূর্বপাশের বেড়িবাঁধ।
ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ মোকাবিলায় ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধগুলো বালুভর্তি করে জিও ব্যাগ ফেলানোর উদ্যোগ নেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড। শুক্রবার ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ মোকাবিলায় উত্তর সাকুচিয়া ইউনিয়নের মাস্টারহাট বাজার পশ্চিম পাশের ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ রক্ষা করার জন্য উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. আবুল কালামের নেতৃত্বে জিও ব্যাগে বালু ভর্তি করে মেঘনার তীরে ফেলেছেন।
পটুয়াখালী, মির্জাগঞ্জ ও কলাপাড়া: ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলায় পায়রা নদী পাড়ের ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে অভ্যন্তরে প্রবেশ করেছে জোয়ারের পানি। প্লাবিত হয়েছে সেখানকার পাঁচটি গ্রাম।
শুক্রবার সকালের জোয়ারে নদ-নদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে বৃদ্ধি পায়। মির্জাগঞ্জ উপজেলার পায়রা নদী পাড়ের দেউলী-সুবিদখালী ইউনিয়নের ৪১/৭ পোল্ডারের পানি উন্নয়ন বোর্ডের ভাঙ্গা বেড়িবাঁধের ৭টি পয়েন্ট দিয়ে এলাকায় প্রবল বেগে জোয়ারের পানি প্রবেশ করে। এতে প্লাবিত হয় মেহেন্দিয়াবাদ, রানীপুর, হাজীপুর, চরখালী ও গোলখালী এই পাঁচটি গ্রাম।
এদিকে জোয়ারের পানি অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেয়ে পায়রা বন্দর ঘেঁষা জনপদ কলাপাড়ার চারিপাড়া গ্রামে প্রবেশ করেছে। গ্রামবাসী একমাত্র ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। অন্যদিকে, মহিপুর ইউনিয়নের নিজামপুর গ্রামে পাউবোর নব-নির্মিত বিকল্প বেড়িবাঁধেও ভাঙন দেখা দিয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড পটুয়াখালীর নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান জানান, মির্জাগঞ্জের পায়রা পাড়ের ৭শ’ মিটার বেড়িবাঁধ ভাঙ্গা রয়েছে। জোয়ারের সময় ঐ এলাকা দিয়ে অভ্যন্তরে পানি প্রবেশ করেছে।
বেতাগী (বরগুনা): বেতাগীতে ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে চরে আটকা পড়েছে শতাধিক মহিষ। উপজেলার মোকামিয়া ইউনিয়নের বিষখালী নদীর মাঝে জেগে ওঠা চরখালী চরটিতে স্থানীয়রা গো-চারণ ভূমি হিসেবে ব্যবহার করে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে। উপকূলীয় উপজেলা হিসাবে ৭ নম্বর সর্তক সংকেতের মাঝেও শুক্রবার সকালে মহিষগুলোর মালিকরা ঐ চরে পারাপার করে দেয়।
