এনাম হাসান জুনাইদ।।
আপনারা যে ঘরটি দেখতে পাচ্ছেন এটি পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট মহাদেশ ওশেনিয়ার একটি দেশ মার্শাল দ্বীপপুঞ্জের রাজধানী মাজুরোতে অবস্থিত। প্রশান্ত মহাসাগরের খুব কাছেই ঘরটি দেখতে অনেকটা মসজিদের মত। দুটি মিনারা আছে। দরজা জানালাগুলো ধনুকাকৃতির। ঘরটির প্রবেশ পথে আরবীতে লেখা, লাইলাহা ইল্লাল্রাহ মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ। এখানে দৈনিক পাঁচবার আযান হয়। স্থানীয়রা এটাকে মসজিদ মনে করে।
কিন্তু এই ঘরটি যদি কোনো ইসলামী রাষ্ট্রে হত, তাহলে মানুষ কী মনে করত?
এমন প্রশ্নের জবাবে ঢাকার এক তরুণ আলিম মাওলানা অলি উল্লাহ বলেন, তার কাছে কাদিয়ানীদের সবচেয়ে বড় অপরাধ, নিজদেরকে মুসলিম দাবি করা, নিজেদের ইবাদতখানাকে মসজিদ নাম দেওয়া।
জানা যায়,বিগত এক শতক ধরে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে এই ‘আহমদীয়া মুসলিম জামাত’ নামধারী সম্পূর্ণ ‘অমুসলিম সম্প্রদায়’টি পবিত্র ইসলাম ধর্মের অবমাননা, অপব্যাখ্যা করে সরলমনা মুসলমানদের ধর্মান্তরিত করার চেষ্টায় লিপ্ত আছে। পৃথিবীর নানা গহীন এলাকাতেও থেমে নেই তাদের তৎপরতা।
সম্প্রতি সাউথ চীনা মর্ণি পোস্ট পত্রিকার এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে পৃথিবীর ক্ষদ্রতম মহাদেশ ওসেনিয়ার এক দ্বীপ দেশে প্রশান্ত সাগর পাড়ে কাদিয়ানীদের অপতৎপরতার কিছু চিত্র।
ওশেনিয়ার মার্শাল দ্বীপপুঞ্জের রাজধানী মাজুরোতে প্রায় চার দশক আগ থেকেই কাদিয়ানী তৎপরতা শুরু হয়। মাজুরোতে ২০১২ প্রশান্ত মহাসাগর পাড়ে তারা একটি ‘মসজিদ’ও তৈরি করে।
‘মসজিদের’ ‘ইমাম’ ইকবাল, ২৮, মাথায় জিন্নাহ টুপি, মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি, সাদা পাঞ্জাবী আর টাকনুঢাকা ঢিলে ঢালা পায়জামা পরিহিত এক যুবক।
ইকবালের জন্ম ও বেড়ে ওঠা কানাডার টরোন্টোতে। তার মা-বাবা পাকিস্তান থেকে আগত।। তিনি ৭ বছর একটি কাদিয়ানী প্রতিষ্ঠানে কাদিয়ানী মতবাদ নিয়ে পড়াশোনা ও প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।
কানাডা থেকে এই দ্বীপপুঞ্জে এসেছেন ২০১৭ সনে ‘নামাজ’ পড়ানোর জন্যে।
সম্প্রতি মর্ণিং পোস্টকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ইকবাল বলেন, ‘আল্লাহর শোকরিয়া, প্রশান্ত মহাসাগর থেকে ৪৬০০ মাইল দূরে এই ছোট্ট দ্বীপ দেশে আহমদিয়া মুসলিমরা তাদের অধিকার ভোগ করতে পারছে। স্বাধীনভাবে তারা তাদের ধর্মকর্ম করতে পারছে।’
জানা যায়, খৃস্টান অধ্যুষিত এই দ্বীপদেশটিতে কাদিয়ানীদের সর্বপ্রথম আবির্ভাব হয় আশির দশকে। মাইক্রোনেশিয়ায় সেই তাদের প্রথম আগমন।। এরপর ধীরে ধীরে তারা তাদের শিকড় গেড়ে ২০১২ সনে গড়ে তোলে এই ‘ইবাদতখানা’।
সাম নেনা, একজন স্থানীয় কাদিয়ানী এবং তার স্ত্রী ৩৩০০ স্কয়ার ফিটের এই জায়গাটি ইবাদতখানার জন্যে দান করে, যা প্রশান্ত মহাসাগর থেকে এক ঢিলের দূরত্বে অবস্থিত।
স্থানীয়রা প্রথম প্রথম তাদের গ্রহণ করেনি। কিন্তু অর্থনৈতিকভাবে পীড়িত জনসাধারণ এক সময় কাদিয়ানীদের সেবামূলক কার্যক্রমে প্রভাবিত হয়ে নিজেদের বাপ-দাদাদের খৃস্ট ধর্ম ত্যাগ করতে শুরু করে।
ইকবাল মর্ণিং পোস্টকে দেয়া সাক্ষাতকারে বলেন, ‘স্থানীয়রা প্রথম প্রথম আমাদেরকে আশ্রয় দিতে চায়নি। মানুষ আমাদের দিকে পঁচা ডিম, খালি বোতল নিক্ষেপ করত।’
‘কিন্তু ‘হিউমেনিটি ফার্স্ট’ আমাদের সেবামূলক সংগঠনের কার্যক্রমের ফলে স্থা্নীয়রা এক সময় আমাদের প্রতি নরম হয় এবং আমাদের বিশ্বাস গ্রহণ করতে শুরু করে,’ যোগ করেন ইকবাল।
পৃথিবী জুড়ে কাদিয়ানীদের নানা তৎপরতা কিভাবে বন্ধ করা যায় এমন প্রশ্নের জবাবে কাদিয়ানী মতবাদ নিয়ে দীর্ঘদিন পড়াশোনা করা একজন আলিম বলেন, কাদিয়ানিরা তাদের ইবাদতখানায় একজন করে মুয়াল্লিম বা প্রচারক পাঠিয়ে থাকেন। এর বিপরীতে আমাদেরও কাদিয়ানি প্রভাবিত অঞ্চলে প্রশিক্ষিত আলেমকে ইমাম হিসেবে নিয়োগ দেওয়া উচিত, যাতে ঐ অঞ্চলে তিনি যথাযথভাবে কাজ করতে পারেন।
দ্বিতীয়ত, রাষ্ট্রীয়ভাবে তাদেরকে অমুসলিম ঘোষণা করা। এর প্রথম উপকার হলো ব্যাপকভাবে মানুষ তাদের অমুসলিম হওয়ার বিষয়টি জানতে পারবে। তারা তখন মুসলিম পরিচয় দিয়ে কাউকে প্রতারিত করতে পারবে না।
তৃতীয়ত, আমাদের সেবামূলক কার্যক্রম আরো জোরদার করা। এর মাধ্যমে সহজেই মানুষের মন জয় করা যায়।
