ইসলাম টাইমস ডেস্ক: চট্টগ্রাম বায়েজিদ থানাধীন ওয়াজেদিয়া (অনন্যা আবাসিক সংলগ্ন) `ওমর ফারুক আল ইসলামিয়া মাদরাসা’ ও এতিমখানায় বহিরাগতদের হামলার প্রতিবাদ এবং অবৈধ দখলমুক্ত করে পড়ালেখার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী।
আজ (১৫ মে) বুধবার দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠত এক সংবাদ সম্মেলন তিনি এ দাবী জানান।
সংবাদ সম্মেলন আল্লামা বাবুনগরীর পক্ষে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন, হেফাজতের সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, চট্টগ্রাম মহানগরীর বায়েজিদ থানাধীন ওয়াজেদিয়া (অনন্যা আবাসিক) এলাকার ওমর ফারুক আল ইসলামিয়া মাদরাসা ও এতিমখানাটি একজন ধর্মপ্রাণ, জনহিতৈষী ও দানবীর ব্যক্তি আলহাজ ওমর ফারুক কর্তৃক ২০০৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এটি আজ অবধি এলাকায় সহীহ কুরআন হাদিস ও ইসলামি শিক্ষার ব্যাপক খেদমত আঞ্জাম দিয়ে আসছে। সাত শতাধিক এতিম ও দরিদ্র ছাত্র-ছাত্রীর জন্য ফ্রি পড়ালেখা, থাকা-খাওয়া ও চিকিৎসার সুষ্ঠু-সুন্দর বন্দোবস্ত করে আসছে। প্রতিষ্ঠানের অধীনে দাওরায়ে হাদিস পর্যন্ত একটি মহিলা শাখাও রয়েছে।
এছাড়াও মাদরাসা কর্তৃপক্ষ এলাকার বিপুলসংখ্যক অসহায়, দরিদ্র ও বিধবাদের নিয়মিত ভাতা ও ভরণপোষণের ব্যবস্থা করে থাকে। প্রতিষ্ঠানটি দেশের একটি প্রসিদ্ধ কওমি মাদরাসা। এবং কওমি মাদরাসাসমূহের সর্বোচ্চ শিক্ষাবোর্ড ‘বেফাক’-এর অন্তর্ভুক্ত। বোর্ডের সম্মানিত চেয়ারম্যান ও হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমীর আল্লামা শাহ আহমদ শফী প্রতিষ্ঠানটির প্রধান পৃষ্ঠপোষক।
লিখিত বক্তব্যে আরো বলা হয়, বিগত ১০ এপ্রিল এই মাদরাসার হিফজ বিভাগের ছাত্র হাবিবুর রহমান মর্মান্তিকভাবে মৃত্যুবরণ করে। মাদরাসার একজন কিশোর ছাত্রের করুণ মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত। হাবিবুর রহমান আমাদের সন্তান। একজন ছাত্রের ‘অকাল’ মৃত্যু অবশ্যই হৃদয়বিদারক। এতে আমরা চরমভাবে ব্যথিত হয়েছি। এই হত্যাকাণ্ডে যে বা যারাই জড়িত থাকুক সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত দোষী ব্যক্তিদের উপযুক্ত শাস্তির দাবি করছি। ঘটনার পর থেকেই হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় নেতৃবর্গ মাদরাসাটির অবস্থা ও সৃষ্ট পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে আসছেন।
বক্তব্যে আরো বলা হয়, আমরা লক্ষ্য করছি যে, হাবিবুর রহমানের মৃত্যুর ঘটনাটিকে পুঁজি করে এলাকার কতিপয় স্বার্থান্বেষী ব্যক্তি উক্ত ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানটি কব্জা করে নিজেদের হীন স্বার্থ হাসিলের অপতৎপরতায় লিপ্ত হয়েছে। আমরা বিশেষভাবে আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই, গত ১১ এপ্রিল সকাল ১১.৩০টায় কতিপয় বহিরাগত সন্ত্রাসী ব্যক্তি দা-ছুরি, লোহার রড ইত্যাদি দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে মাদরাসাটিতে অতর্কিত হামলা চালিয়ে অনেক ছাত্র-শিক্ষককে গুরুতর আহত করে। মাদরাসা অফিস ও আবাসিক ভবনের তালা ভেঙে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট করে। এমনকি মহিলা শাখার ছাত্রীরাও তাদের কুরুচিপূর্ণ ব্যবহার ও অসদাচরণের শিকার হয়। অত্যন্ত দুঃখজনক বিষয় হলো স্থানীয় একজন জনপ্রতিনিধি প্রতিষ্ঠানটি রক্ষায় ইতিবাচক ভূমিকা পালনের পরিবর্তে হামলাকারীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় ও সহযোগিতা দিয়েছেন। ঘটনা সম্পর্কে অবহিত করার জন্য মাদরাসার পরিচালকসহ পাঁচজন শিক্ষক বায়েজিদ থানায় উপস্থিত হলে অনেকক্ষণ বসিয়ে রাখার পর তাদেরকে গ্রেফতার করে জেলে পাঠানো হয়। যা প্রশাসনের নিরপেক্ষ ভূমিকা চরমভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করে।
সংবাদ সম্মেলন থেকে ৪ দফা দাবী পেশ করা হয়-
(১) শিক্ষার্থীদের নিয়মিত লেখাপড়ার সুবিধার্থে ওমর ফারুক আল ইসলামিয়া মাদরাসা ও মসজিদটি বহিরাগত লোকদের কব্জা থেকে মুক্ত করে মোতাওয়াল্লি-কর্তৃক মনোনীত কর্তৃপক্ষের হাতে হস্তান্তর করতে হবে।
(২) গ্রেফতারকৃত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ যে পর্যন্ত আদালত কর্তৃক দোষী সাব্যস্ত না হন সে পর্যন্ত কাউকে অপরাধী আখ্যায়িত করা যায় না। কাজেই অবিলম্বে গ্রেফতারকৃতদের মুক্তি দিতে হবে।
(৩) ছাত্র-শিক্ষকদের ওপর হামলাকারী দুর্বৃত্তের অবিলম্বে গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। প্রশাসনের সহায়তায় প্রতিষ্ঠানটিতে যথারীতি নির্বিঘ্নে পাঠদান কার্যক্রমের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
(৪) অবিলম্বে বহিরাগত সন্ত্রাসী দখলদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে দেশের বিক্ষুব্ধ আলেমসমাজ, মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষক ও ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা ঐক্যবদ্ধভাবে যেকোনো কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, মাওলানা সরোয়ার কামাল আজিজী, মাওলানা আলী ওসমান, মাওলানা জান্নাতুল ইসলাম, মাওলানা নাসির উদ্দিন মুনির, মাওলানা জাফর আহমদ, ওমর ফারুক মাদরাসার নুতন পরিচালক ও তালিমুল কুরআন কমপ্লেক্সের চেয়ারম্যান মাওলানা হাফেজ মোহাম্মদ তৈয়ব, মুফতি হাসান মুরাদাবাদী, মাওলানা নুরুন্নবী, মাওলানা হাফেজ আইয়ুব, ওমর ফারুক মাদরাসার মুতাওয়াল্লির পক্ষে মাওলানা তারেক ফায়সাল ও মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, মাওলানা মুফতি নুর মোহাম্মদ, নিহত ছাত্র হাবিবুর রহমানের পিতা মোহাম্মদ আনিসুর রহমান প্রমূখ।
