তাওহীদুল ইসলাম তায়্যিব।।
এর আসল নাম মাফাতিহুল গাইব। লেখক : হিজরী ষষ্ঠ শতকের বিখ্যাত দার্শনিক আলেম ইমাম ফখরুদ্দীন মুহাম্মদ ইবনে উমর আর-রাযী (ইনতিকাল ৬০৬ হিজরী)। রিওয়ায়াত ভিত্তিক তাফসীরের ক্ষেত্রে তাফসীরে ইবনে কাসীর যেমন অতুলনীয়, দিরায়াত বা কোরআনের বক্তব্য বুঝা ও অনুধাবনে সহায়ক তাফসীরের ক্ষেত্রে তাফসীরে কাবীর তেমনি।
এতে ইমাম রাযী রাহ. প্রতিটি আয়াতের নাহবী তারকীব বা বাক্যবিশ্লেষণ, শানে নুযূল বা অবতরণ পেক্ষাপট ও আয়াতের ব্যাখ্যা সম্পর্কে পূর্ববর্তী মনীষীদের যত বক্তব্য পাওয়া যায় তার প্রায় সবই বিন্যস্ত আকারে এবং বিশ্লেষণসহ উল্লেখ করেন। ফলে কোনো আয়াতের তাফসীর সম্পর্কে কয়টি বক্তব্য আছে এবং সেগুলো কী কী-সহজেই জানা যায়। তাফসীরের অন্য অনেক কিতাবেও বক্তব্যগুলো পাওয়া যায়, তবে একসঙ্গে নয় এবং অতটা বিন্যস্ত ও বিশ্লেষণসহ নয়। এছাড়া এক আয়াতের সঙ্গে অপর আয়াতের যোগসূত্র বর্ণনা ও আয়াতের সাথে সম্পৃক্ত ফিকহী মাসআলাও বিস্তারিত দলীল প্রমাণসহ উল্লেখ করেন তিনি।
ইমাম রাযী রাহ. ছিলেন দর্শন ও কালাম শাস্ত্রের পণ্ডিত ব্যক্তি। তাই তাঁর কিতাবে দলীলে আকলী (যৌক্তিক প্রমাণ ও বিশ্লেষণ) এর প্রসঙ্গ এসেছে বেশি। তাছাড়া সেই যামানার প্রেক্ষিতে এই প্রসঙ্গের প্রয়োজনও ছিল তীব্র। এর মাধ্যমে তিনি বিভিন্ন ভ্রান্ত মত ও ফেরকার খণ্ডন করেছেন চূড়ান্ত শক্তিশালী ও অপ্রতিরোধ্য আঙ্গিকে। তাই আয়াতের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের সঙ্গে এসব আলোচনাও দীর্ঘ হয়েছে। সেকারণে কেউ কেউ কিতাবটি সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করেছেন এভাবে যে, ‘তাতে তাফসীর ছাড়া সবই আছে।’ এ মন্তব্য নিশ্চিত কিতাবটির প্রতি এক ধরণের যুলুম।
এই তাফসীর সম্পর্কে আল্লামা আনওয়ার শাহ কাশ্মিরী রাহ. বলেন, কোরআন বোঝার ক্ষেত্রে আমি যে জটিলতারই সম্মুখীন হয়েছি, দেখেছি ইমাম রাযী রাহ. সেসম্পর্কে আলোচনা করেছেন। [ইয়াতিমাতুল বায়ান ফী শাইইম মিন উলূমিল কোরআন , পৃষ্ঠা : ৪৩]
১১ ভলিয়মে ৩২ খণ্ডে প্রকাশিত এই তাফসীর সম্পর্কে মনে রাখার মতো একটি কথা হলো, ইমাম রাযী রাহ. কিতাবটির পুরো কাজ সম্পন্ন করে যেতে পারেননি। সূরা ফাতাহ পর্যন্ত তাফসীর লেখার পর তাঁর ইন্তেকাল হয়ে যায়। বাকী অংশটুকুর তাফসীর লেখেন হিজরী সপ্তম শতকের আলেম কাজী শিহাবুদ্দীন ইবনে খলীল আদ-দিমাশকী ( ইনতিকাল ৬৩৯ হিজরী) কিংবা শায়খ নাজমুদ্দীন আহমাদ ইবনে মুহাম্মদ রাহ. (ইনতিকাল ৭৭৭ হিজরী)।
প্রশংসনীয় ব্যাপার হলো, তিনি এই কাজে ইমাম রাযী রাহ.-এর এমন অনুকরণ করেছেন যে উপরোক্ত তথ্য জানা না থাকলে অনুমান করাও কঠিন যে উল্লেখিত অংশটি অন্য কারো রচনা।
অন্য অনেক বিখ্যাত তাফসীর গ্রন্থের মতোই গ্রন্থটি আরব অনারব বহু দেশের শ্রেষ্ঠ মাকতাবাগুলো থেকে প্রকাশিত হয়েছে।
