আবদুর রহমান তাশরীফ।।
উত্তম চরিত্র ও আচরণের গুরুত্ব আমাদের সবারই জানা। সুন্দর আচার-ব্যবহার দূরকে টেনে আনে কাছে। কাছের মানুষ হয়ে ওঠে আরো ঘনিষ্ঠ। হৃদয়ের বন্ধনে ছড়িয়ে পড়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস। সুন্দর আচরণ এবং উত্তম গুণাবলি মানুষকে নিয়ে যায় বহু মানুষের উর্ধ্বে।
আচরণের সৌন্দর্যের বিষয়টি শুধুমাত্র আমাদের পার্থিব জীবনকেই স্পর্শ করছে- তা কিন্তু নয়। উত্তম আচরণ পার্থিব জীবনের গণ্ডি ছাড়িয়ে জড়িয়ে আছে পারলৌকিক জগতের সাথেও। উত্তম আচরণে পাওয়া যায় অনেক সওয়াব।
উত্তম আচরণ আল্লাহর প্রিয়। নবীজীর আদর্শ। মানুষের চারিত্রিক সংশোধনের আহ্বান, আচরণের সৌন্দর্য ধরে রাখার শিক্ষা ইসলামের অনন্য শোভা। মাধুর্যপূর্ণ চরিত্রের বিকাশ ইসলামের প্রতীক। যে বিশেষ কিছু লক্ষ্যে নবীজী সা.-এর মাটি বাতাসের এই পৃথিবীতে আগমন, উত্তম চরিত্রের পূর্ণতা বিধান তার অন্যতম।
ঈমানের সাথে উত্তম আচরণে আছে অসংখ্য পুরস্কারেরর ঘোষণা। জান্নাতের মতো মহা-প্রাপ্তির ফরমান।
উত্তম চরিত্রের আদর্শ এবং উন্নত গুণাবলির উৎস-মানব নবীজী সা.। আল্লাহ পাক নবীজী সা.-কে ইরশাদ করেছেন إنّك لعليٰ خلقٍ عظيم ‘আপনি তো আছেন মহান চরিত্রের উপর’। তাই তো নবীজী সা.-এর পুরো জীবন উত্তম চরিত্রের সুরভিত উৎস। সৌরভ ছড়ায় হৃদয় থেকে হৃদয়ে। সুবাস ছড়ায় পৃথিবী জুড়ে মানব থেকে মানবে।
নির্বাসিত মানবতার এই পৃথিবীতে উন্নত চরিত্র এবং উত্তম গুণাবলির বিকাশ ইসলামের অনন্য দান। নবীজী ইরশাদ করেছেন بعثت لاتمم حسن الاخلاق ‘উত্তম চরিত্রের পূর্ণতা বিধানের লক্ষ্যেই আমাকে পাঠানো হয়েছে’। (মুসনাদে আহমাদ)
আজকের ‘উন্নত বিশ্বও’ উত্তম চরিত্রের শিক্ষায় ইসলামের কাছে চিরঋণী, যা স্বীকার করেছেন ইউরোপের বহু মনীষী। বাধ্য হয়েছেন তারা স্বীকার করতে। এর বহু পার্থিব সুফলও তারা পাচ্ছে।
হাদীস শরীফে উত্তম চরিত্রের ফজিলত বর্ণিত হয়েছে অনেক। প্রিয় নবীজীর পবিত্র কন্ঠে বারবার ঘোষিত হয়েছে উত্তম আচরণের কথা। উত্তম আচরণের সৌন্দর্য মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া, উত্তম আচরণের গুরুত্ব মানুষকে বুঝানো, উত্তম আচরণের সাথে জড়িয়ে থাকার মহাপ্রাপ্তির কথা ঘোষণা করা – এসব তো নবীজীর দৈনন্দিন জীবনের অংশ ছিল। নবীজী সা. এরশাদ করেছেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা মহানুভব। তিনি মহানুভবতা পছন্দ করেন। উন্নত চরিত্রকে ভালবাসেন এবং নিচু আখলাককে ঘৃণা করেন।’
উত্তম চরিত্র সাহাবায়ে কেরামকে শিখিয়েছেন নবীজী। সহাবায়ে কেরাম নবীজীর স্বার্ণালী কথামালা যেমন শুনেছেন তেমন শিখেছেন। যেমনি দেখেছেন তেমনি ধারণ করেছেন। শিক্ষা-দীক্ষার এই সোনালী ধারা কেবল নিজেদের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখেননি, বরং প্রসারিত করেছেন অনুজদের মধ্যে। ছড়িয়ে দিয়েছেন ছোটদের মাঝেও। নববী এ আদর্শের সৌরভ আলো জ্বালিয়ে যাচ্ছে মানুষের প্রাণে প্রাণে।
হাদীসে শরীফে এসেছে অসংখ্য পুরস্কারের ঘোষণা এই উত্তম চরিত্রের কারণে। উন্নত আচরণের এই গুণ যার মাঝে যত উত্তমভাবে থাকবে সে তত উত্তম হবে। নবীজী ইরশাদ করেন ‘তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম সে যার আখলাক সবচেয়ে উত্তম।’ ( মুত্তাফাক আলইহি)
আম্মাজান হযরত আয়েশা রাযি. বর্ণনা করেন, নবীজীকে বলতে শুনেছি, নিশ্চয় মুমিন তার উত্তম আচরণ দিয়ে স্পর্শ করতে পারে রাত জেগে ইবাদতকারী এবং দিবসজুড়ে রোযাদার বান্দার মর্যাদা।( আবু দাউদ)
এই উত্তম আখলাকের গুণ যার মধ্যে যত বেশি তার ঈমান ততবেশি পূর্ণ। রাসূল সা. বলেছেন, اكمل المؤمنين ايمانا احسنهم خلقا – মুমিনদের মধ্যে ঈমানের দিক থেকে সে সবচেয়ে পূর্ণ, যার আখলাক সবচেয়ে উন্নত।(আবু দাউদ)
উন্নত আখলাক মানুষকে নিয়ে যায় জান্নাতে। হযরত আবু হুরায়রা রাযি. বলেন, নবীজীকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল – কোন জিনিস মানুষকে সবচেয়ে বেশি জান্নাতে প্রবেশ করাবে? ’ নবীজী উত্তরে বললেন, ‘ আল্লাহর ভয় এবং উত্তম আচরণ।’
উত্তম চরিত্র ও আচরণের মাধ্যমে বান্দা মর্যাদার সোপানগুলো পেরিয়ে পৌঁছে যাবে জান্নাতে। ইসলামে এতই গুরুত্ব উন্নত চরিত্রের। হুসনে আখলাক মানুষের পারস্পরিক সম্পর্কের ভিত ও সামাজিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার ভিত্তি। ইসলাম দ্বীনুল ফিতরাত।
মহান মানুষেরা প্রতিশোধ নেন না অন্যায় আচরণের। সবাইকে ক্ষমা করে দেন উদারভাবে। স্বভাব ভদ্রতা বজায় রাখেন বিরূপ আচরণের মুখোমুখি হলেও। চরিত্র মাধুর্যের বিভা ছড়িয়ে দেন হৃদয় থেকে হৃদয়ে।
উত্তম আচরণের গুণ আল্লাহ আমাদের দান করুন।
