
এনাম হাসান জুনাইদ।।
তাবুর বাইরে বসে সিরিয়ান মা মোনা মুতাইর আলু আর টমোটে ছুলছিলেন। ঘরের বাইরে খোলা আকাশের নিচে কাটানো এই তাদের প্রথম রমযান।
সাধারণ পবিত্র রমযান সব সময় একটা উৎসব আমেজের মধ্যে কেটে যায়। মানুষ সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রোযা রাখেন। তারপর পরিবারের সবাইকে নিয়ে ইফতার করতে বসেন। আবার ভোর রাতে উঠে সবাই মিলে সাহরী করেন।
কিন্তু এবার সরকারী বাহিনীর বোমা বর্ষণের কারণে মুতাইর তার পরিবার নিয়ে ঘর ছাড়তে বাধ্য হন। একমাস আগে তারা আশ্রয় নেন তুরস্কের এক বর্ডারের কাছে, এক জলপাই বাগানে।
‘দিনগুলো খুব কষ্টের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে,’ বলেন ৩১ বছর বয়সী মুতাইর। ‘আমরা বাধ্য হয়ে এখানে রমযান কাটাচ্ছি।’ মুতাইর যখন এই কথাগুলো বলছিলেন তখন খালি পায়ে এক শিশু তাবুর বাইরে দাঁড়িয়ে অপপেক্ষা করছিল খাবারের জন্যে।
‘আমি আজ একটু কম রান্না করছি।’ বলেই কুটাকুটি বন্ধ করেন মুতাইর।
‘এই তো সেদিন আমরা আমাদের গ্রামে আঙ্গুর বাগানে কত আয়োজন করে ইফতার করতাম। সেখানে পানিরও কোনো অভাব ছিল না, বিদ্যুতেরও কোনো অভাব ছিল না। খুবই সুখের ছিল সেই দিনগুলো। আর আজ আমাদের অবস্থা… কোনো কোনো দিন খাবারও জুটে না।’
মুতাইরের তাবুর পাশে আরো অনেক তাবু। তাবুগুলো গাছের ডালে বেঁধে ঝুলানো হয়েছে। মুতাইরের মত হুসাইন আন নাহার তার সন্তানসম্ভবা স্ত্রী ও ছয়টি ছেলে মেয়ে নিয়ে এই প্রথম গৃহহীন রমযান কাটলেন।
রমযানে কাউকে যদি তার ঘর থেকে বের করে দেওয়া তার কেমন কষ্ট লাগে এমন প্রশ্নের জবাবে হুসাইন বলেন, ‘এটি বর্ণনাতীত। আমাদের এখন কিছুই নেই।’
হুসাইনের পাশে তার স্ত্রী কোলের সন্তানকে মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়াচ্ছিলেন। কয়েকদিন পর ঈদুল ফিতর, কিন্তু তিনি জানেন না, তার পরিবার রমযান শেষে ঈদুল ফিতর কিভাবে উদযাপন করবে।
‘বাচ্চারা নতুন জামাকাপড় চায়, কিন্তু আমাদের কাছে কোনো টাকা পয়সা নেই। টাকা তো দূরে, আমাদের কাছে তো দরকারী কম্বলও নেই।’ বলেন নাহারের স্ত্রী।
‘আগের রমযানগুলোতে আমরা কোনো দিন কারো কাছে কিছু চাইনি। কিন্তু এখন মানুষের দেয়া খাবার দিয়ে আমাদের ইফতার করতে হয়। অবশ্য কখনো সেই খাবারও জুটে না।’
‘কয়েক দিন রান্নার কিছু ছিল না। সেদিন আমরা চা আর ব্রেড দিয়ে ইফতার করেছি।’
সূত্র: সৌদি গেজেট
