তাওহীদুল ইসলাম তায়্যিব।।
হাকীমুল উম্মত মুজাদ্দিদুল মিল্লাত হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানবী রাহ.-এর রচনা ‘তাফসীরে বয়ানুল কোরআন।‘ বড় বড় তিন খণ্ডে প্রকাশিত এই তাফসীর উপমহাদেশের লাখো আলেমের প্রিয় কিতাব।
হযরত থানবী রাহ. এই কিতাবে প্রথমে কোরআন মাজীদের সহজ ও সাবলীল উর্দূ তরজমা করেছেন। এই তরজমাকে তিনি শাব্দিকতার কাছাকাছি রেখে সহজবোদ্ধ আকারে উপস্থাপন করেছেন। সেইসঙ্গে আয়াতসমূহের পারস্পরিক সম্পর্ক ও বক্তব্যের ধারাবাহিকতা স্পষ্ট করেছেন; কোথাও বর্ণনাভঙ্গিতে কোথাও ‘রবত‘ শিরোনামে সুস্পষ্টভাবে। ফিকহ সংশ্লিষ্ট আয়াতে তিনি কেবল হানাফী মাযহাবের বক্তব্য উল্লেখ করেছেন আর নিতান্ত প্রয়োজনে অন্যকোনো মাযহাবের বক্তব্য উল্লেখ করেছেন হাশিয়ায়।কোনো আয়াতের তাফসীরের ক্ষেত্রে পূর্বসূরি মুফাসসিরগণের বিভিন্ন মত থাকলে তিনি কেবল অগ্রগণ্য বা রাজেহ মতকেই উল্লেখ করেছেন। তবে কোথাও কোথাও একাধিক মতও পেশ করেছেন।
কোরআনের তরজমা যেখানে কিছুটা ব্যাখ্যা নির্ভর কিংবা যে জায়গায় বক্তব্য একটু জটিল, অথবা স্বয়ং বিষয়বস্তুটিই গুরুত্বপূর্ণ সেখানে ‘ফা’ আলামত দিয়ে তিনি বিস্তারিত আলোচনা করেন। তবে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিষয়াবলির উল্লেখ কিংবা কোনো ঘটনা-কাহিনী বা ফাযায়েল ও আনুষঙ্গিক মাসআলার প্রসঙ্গ তিনি এড়িয়ে যান। ফলে কোরআনের মূল বক্তব্য স্পষ্ট হয় ঠিকই, কিন্তু দীর্ঘ আলোচনার সূত্রে জড়াতে হয়না।
এই তাফসীর যেহেতু প্রধানত গাইরে আলেম পাঠকদের উদ্দেশ্যে লেখা তাই প্রাসঙ্গিক ইলমী আলোচনা তিনি করেননি। তবে এর ভিতরেই একটি আরবী হাশিয়া লিখেছেন আলেম ও তালিবুল ইলমদের জন্য। সেখানে কঠিন আরবী শব্দের অর্থ, প্রয়োজনীয় শব্দ ও বাক্যবিশ্লেষণ, আয়াত অবতীর্ণের প্রেক্ষাপট, মক্কী-মাদানী প্রসঙ্গ, বিভিন্ন কেরাত, সূক্ষ্ম কোনো মাসআলা ও বালাগাত বা অলংকার শাস্ত্রীয় কোনো আলোচনা খুব সংক্ষেপে পেশ করেন।
এই হাশিয়া সম্পর্কে তিনি নিজেই বলেন যে, তা আরবীতে লিখেছি এজন্য যাতে গাইরে আলেম পাঠকদের কষ্ট না হয়। কারণ ভাষা বুঝবে কিন্তু বিষয় বুঝবে না এটা পেরেশানীকর। এই কিতাবের আরেকটি শিরোনাম হলো ‘মাসাইলুস সুলূক’।
সারকথা, এই তাফসীর সংক্ষিপ্ত পরিসরে এক গভীর বহতা নদী যেন। তা থেকে আল্লাহ আমাদের সবাইকে উপকৃত হওয়ার তাওফীক দান করুন। আমীন।
