হামিদ মীর।।
অনেক বছর আগে ড. আগা ইফতেখার হোসাইন এর লেখা ‘জাতিবর্গের উত্থান পতনের কারণ, একটি গবেষণা’ কিতাবটি পড়েছি। ড. ইফতেখার ফার্সী, উর্দূ, ইংরেজি, ফরাসী ভাষার উপর অনেক পান্ডিত্য রাখেন। দর্শন পড়েছিলেন আলীগড়ে। পিএইচডি করেছেন ফ্রান্সে।
তিনি পূর্ব ও পাশ্চিমের জ্ঞান-বিজ্ঞান মন্থন করে পৃথিবীর বিভিন্ন জাতির উত্থান-পতনের ইতিহাস নিয়ে লেখা এই বইয়ের এক জায়গায় লিখেছেন, একটা জাতির শক্তির পরিমাপ তার হাতিয়ার দিয়ে হয় না। শক্তির পরিমাপ হয় উন্নত চরিত্র, সমুন্নত চিন্তাভাবনার মাধ্যমে।
যে জাতি তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য হারিয়ে ফেলে সে জাতির স্বকীয়তা নষ্ট হয়ে যায় তারপর তারা অন্যের মুখাপেক্ষী হয়ে ধীরে ধীরে ধ্বংস হয়ে যায়।
বইটিতে ড. ইফতেখার পবিত্র কুরআনের সূরা রাদের একটি আয়াত উল্লেখ করেন- আল্লাহ কোন জাতির অবস্থা ততক্ষণ পর্যন্ত পরিবর্তন করেন না যতদিন না তারা নিজেদের অবস্থা বদলায়।
কোরআন অবতরণকালে মানুষের ধারণা ছিল, একটা জাতির উত্থান পতনের পিছনে মূল ভূমিকা দেবতাদের। মানুষের নয়। কিন্তু কুরআন ঘোষণা করেছে, জীবন-মৃত্যুর মালিক আল্লাহ কিন্তু ভবিষ্যৎ মানুষের হাতে। যাদের আখলাক উন্নত, যাদের চিন্তাভাবনা সুউচ্চ, তাদের ভবিষ্যৎ উন্নত আর খারাপ চরিত্রের ও নীচু চিন্তার লোকদের ভবিষ্যতে খারাপ।
ড. ইফতেখারের বইটি ছিল একটি সতর্ক-বাণী। বইটি প্রকাশের কয়েক বছরের মাথায় সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে টুকরা টুকরা হয়ে গেল। তখন বইটি আবার পড়লাম এবং দেখলাম বইটিতে পতনের যে কারণ উল্লেখ করা হয়েছে তা সোভিয়েত ইউনিয়নের ওপর পুরোপুরি ফিট হয়ে যায়। কারণ সোভিয়েত ইউনিয়নের শক্তি কম ছিল না। কিন্তু যা ছিল না তাহল চিন্তার স্বাধীনতা।
আমার মনে হলো কোরআন এমন একটি মোজেযা, যা কেবল আমাদের প্রতিদিনের কার্যকলাপকেই সংশোধন করে না বরং এটি জাতির উত্থান পতনের কারণও বলে দেয়।
কুরআন আমাদের ভালো কাজের কথা বলে। ন্যায় ও ইনসাফের শিক্ষা দেয়। আল্লাহর পথে খরচ করতে বলে। এতিম মিসকিনদের দেখাশোনা করতে বলে। কুরআন মানুষ হিসেবে সবাইকে সমান ঘোষণা করেছে। কোরআন সুদকে আল্লাহর বিরুদ্ধে যুদ্ধে শামিল করেছে।
রমজানের উছিলায় এবার খাজা আবদুল ওয়াহিদ রচিত ‘কুরআনের বিষয়াবলী এবং মানব-জীবন’ কিতাবটি আমার দেখার সুযোগ হয়েছে। এতে বিভিন্ন বিষয়ের পাশাপাশি ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতিবর্গ থেকে কুরআনের শিক্ষা গুলোকে একত্রে দেয়া হয়েছে।
কিতাবটি পড়ে মনে হল, ড. ইফতেখারের কিতাবটি আবার পড়া দরকার। সত্যি বলতে কি ড. ইফতেখারের কিতাবটি যতটা না আশির দশকের পাকিস্তানের জন্য, তার চেয়ে বেশি ২০১৯ সালের পাকিস্তানের জন্য।
আজ পাকিস্তান পরমাণু শক্তি অধিকারী হয়েও আইএমএফের ডলারের সামনে নতজানু। কারণ চিন্তার স্বকীয়তা নেই। উন্নতচরিত্র নেই। কিন্তু এসব কিছুর পরও আমি নিরাশ নই।
আল্লাহ তাআলা হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মাধ্যমে আমাদেরকে যে তোহফা দিয়েছেন তা শুধু একটি মুজেযা নয়। এ মুজেযার ভিতর লুকিয়ে আছে আরও হাজার মুজেযা।
আমাদের শাসকরা আজ কোরআন পড়েন কিন্তু কুরআন অনুযায়ী আমল করেন না। যেদিন আমরা কুরআনের হেদায়েত অনুযায়ী নিজেকে বদলাবো সেদিন অবশ্যই আল্লাহ আমাদের সাহায্য করবেন। পতন থেকে আমাদেরকে আইএমএফ নয়, এই কুরআনই আমাদের রক্ষা করতে পারে।
লেখক: পাকিস্তানের বিশিষ্ট লেখক ও সাংবাদিক
( পাকিস্তানের জাতীয় দৈনিক জং থেকে অনুবাদ করেছেন: এনাম হাসান জুনাইদ)
