ড. মুস্তফা ফেতাওরি ।।
যদিও ইয়েমেন যুদ্ধে সৌদি অধিকতর শক্তিশালী প্রতিপক্ষ, যার পাশে রয়েছে অনেক সহযোগী বিদেশী শক্তি কিন্তু এখন সংগত কারণে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, ইয়ামেনে সৌদি কি বিপুল শক্তিসহ হেরে যাচ্ছে? সৌদির সহযোগী দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সুদান, মিসর, কুয়েত ও জর্ডান।
ফ্রান্স ও ইটালি -এর মতো শক্তিশালী দেশগুলো অস্ত্র সরবরাহ করে সহযোগিতা করছে। সৌদি যুদ্ধ করছে এমন একদল লোকের সাথে যাদের নেতৃত্বে রয়েছে হুতি বিদ্রোহীরা যারা ইরানের মদদপুষ্ট। যাই হোক, বিপুল শক্তির অধকারী হয়েও সৌদি ইয়েমেন যুদ্ধে হেরে যাচ্ছে। এ বিষয় টি বোঝার জন্য জানতে হবে, ইয়েমেন যুদ্ধে সৌদীর লক্ষ্য কি? কোন দলের জন্য কি যুদ্ধে বিজয়ী হয়েও হেরে যাওয়া সম্ভব?
মুহাম্মদ বিন সালমান এই যুদ্ধে পুরোপুরি জড়িয়ে পড়ে ২০১৫ সালে। তখন তার ঘোষিত দুটি উদ্দেশ্য ছিল; এক. তিনি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি প্রাপ্ত ইয়েমেন সরকারকে সহযোগিতা করে আন্তর্জাতিক আইন সমুন্নত করছেন। দুই. তার অভিযোগ, ইরান বিদ্রোহীদেরকে সহযোগিতার মাধ্যমে সৌদীর দক্ষিণ সীমান্তে শিয়াদেরকে উস্কে দিয়ে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাচ্ছে।
চলতি বছরের মার্চ মাসে ইয়েমেন যুদ্ধের চার বছর পূর্ণ হলো, কিন্তু এ ৪ বছরের প্রাপ্তি বলতে হামলা-দুর্ভিক্ষ আর মৃত্যু ছাড়া কিছুই না। এখানে একটা জিনিস বলে রাখা দরকার যে, সৌদি জোট সিদ্ধান্তমূলক এক চূড়ান্ত অভিযান চালিয়ে ইয়েমেনের আকাশসীমা নিজেদের দখলে রেখেছে। বন্দরগুলোতে অবরোধ আরোপ করেছে। বলতে গেলে এ ৪ বছর ইয়েমেন সৌদির করতলে রয়েছে।
কিন্তু এরপরও বিদ্রোহীরা তাদের যা যা করা দরকার মনে করেছে তারা তা পাচ্ছে। এমনকি তারা ড্রোন সংগ্রহ করেছে। যদিও অভিযোগ রয়েছে এসবই ইরান তাদেরকে সরবরাহ করছে। এই অস্ত্র পাওয়াটাকে সৌদি জোটের অবরোধের ব্যর্থতা ছাড়া আর কি ব্যাখ্যা করা যায়। এখানে কি সৌদি অধিকতর শক্তিশালী প্রতিপক্ষ হয়েও পরাজিত হলো না। পরাজিত হওয়ার লক্ষণ হলো বিদ্রোহীরা সৌদি-তে মিসাইল নিক্ষেপ করছে। যুদ্ধটাকে সৌদির ভিতরে নিয়ে যাওয়াটা সৌদির জন্য চরম ব্যর্থতা।
যে কোনো যুদ্ধ দীর্ঘ হতে থাকলে আশঙ্কা বেড়ে যায় । দীর্ঘ হতে থাকলে যুদ্ধের উদ্দেশ্য ধীরে ধীরে ভুলে যাওয়া হয়। এমন মুহূর্তে সঠিক পদক্ষেপ হচ্ছে যুদ্ধ বন্ধ করে দেয়া। অনেক পশ্চিমা দেশ যারা প্রথমে বিন সালমানের পক্ষ নিয়েছিল এখন তারা তাকে আহ্বান জানাচ্ছে এই যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা বন্ধ করার জন্য। ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, এই নোংরা খেলা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে।
জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলেছে, ২ লক্ষ লোক এখন ইয়েমেনের ভিতরে বাস্তুচ্যুত। যদি সৌদী বিজয় অর্জন করতে না পারে তাহলে এটার দ্বারা বুঝা যাবে যে তার প্রতিপক্ষরা এখন যুদ্ধ করতে করতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে।
যদি বিন সালমান আন্তর্জাতিক আইন সমুন্নত করার জন্যই যুদ্ধে নেমে থাকেন তাহলে এটা তো এ যাবৎ লাভের চেয়ে ক্ষতি করেছে বেশি। ইয়েমেন এ বর্তমান পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় চলছে। সৌদি কি একথা মেনে নিবে যে যুদ্ধে হেরে যাই তারপরও শান্তি কে প্রাধান্য দেই? বিন সালমান কি তার কর্ম পদ্ধতি পরিবর্তন করবেন? এ যাবৎকালে প্রকাশিত তাঁর বিভিন্ন কর্মকান্ড এ কথার সমর্থন করে না।
তিনি তার দেশের ভিতরে জামাল খাশোগির মত মানুষকে দমন করতে চান, তেমনি প্রতিবাদী প্রতিবেশীকেও তিনি নীরব করে দিতে চান। তিনি যাই করুন না কেন যুদ্ধে তাঁর পাল্লা ভারী হলেও তিনি কিন্তু হেরে গেছেন। তার যে পরিমাণ ব্যয় যুদ্ধে হয়েছে তা যুদ্ধের যেকোনো লাভকে ছাড়িয়ে যাবে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য ব্যর্থ নেতারা ব্যর্থতা একটু দেরিতেই স্বীকার করে।
মিডল ইস্ট মনিটর থেকে অনুবাদ করেছেন এনাম হাসান জুনাইদ
