ওলিউর রহমান।।
উপমহাদেশে ইংরেজ উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে প্রথম সর্বভারতীয় কার্যকর প্রতিরোধ যিনি গড়ে তোলেন তিনি ভারতবর্ষের আদর্শিক চোতনার বাতিঘর শাহ ওলিউল্লাহর রক্ত ও আদর্শের উত্তরাধিকারী সিরাজুল হিন্দ আবদুল আযীয মুহাদ্দিসে দেহলভি রহ.। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর ছদ্মবেশে বিদেশি বণিক ইংরেজরা যখন কূট-কৌশলে ক্রমান্বয়ে উপমহাদেশের শাসনক্ষমতা কুক্ষিগত করছিল তখনই ইমামুল উলামা রঈসুল হুকামা শাহ আবদুল আযীয ভারতবর্ষকে দারুল হরব ঘোষণায় দিয়ে জিহাদ ফরজ হওয়ার কথা উল্লেখ করে সাড়ে তিনশত পৃষ্ঠায় ফতোয়া প্রদান করেন।
সুগভীর ইলমের অধিকারী, আধ্মাত্যিক রাহবার এবং আল্লাহর যমিনে আল্লাহর কালিমা বুলন্দ করার চেতনায় উদ্দীপ্ত শাহ আবদুল আযীয রহ জন্মগ্রহণ করেন ১১৫৯ হিজরীর ২৫ রমযানে দিল্লীতে। সারাজীবনের নানাবিধ ‘কারনামার’ কারণে তাকে উপাধি দেয়া হয় ‘সিরাজুল হিন্দ’ নামে। সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং নানাবিষয়ে উপস্থিত জ্ঞানের কারণে অনেকেই তাকে হুজ্জাতুল্লাহ বলে ডাকতেন। সাইয়্যিদ আবুল হাসান আলী নদবী তাকে ইমামুল উলাম ও রঈসুল হুকামা বলে পরিচয় দিতেন।
শাহ ওলিউল্লাহ ও শাহ আবদুর রহিমের উত্তরাধিকারী শাহ আবদুল আযীয বংশ-পরম্পরায় মিলিত হয়েছেন দ্বিতীয় খলিফা উমর ইবনুল খাত্তাবের সঙ্গে। সম্ভ্রান্ত এ বংশে জন্ম নিয়েছেন বহু হাফিজ আলিম, অনেক মুহাদ্দিস।
খুব অল্প বয়সেই এ মহান পুরষ কুরআনের হিফজ সম্পন্ন করেন এবং ষোল বছর বয়সেই তিনি তাফসির, ফিকহ, হাদীস, মানতিক, জ্যামেতিসহ দ্বীনি ও দুনিয়াবি অনেক বিষয়েই বুৎপত্তি অর্জন করেন। যাহেরি ইলমের পাশাপাশি আধ্মাত্যিকতার চর্চাও করেন তিনি ছোটবেলা থেকেই। তরিকতের ধারার সংস্কারক নিজ পিতা শাহ ওলিউল্লাহ থেকে তিনি খেলাফত লাভ করেন।
পিতার ইনতিকালের পর ১৭ বছর বয়সে দিল্লীর মাদরাসায়ে রহিমিয়্যাতে তিনি হাদিস পড়ানো শুরু করেন। সুদীর্ঘ চৌষট্টি বছর পর্যন্ত তিনি হাদিসের খেদমতে মশগুল ছিলেন। উপমহাদেশে হাদিসের যে খেদমত শাহ আবদুল আযীয রহ আঞ্জাম দিয়েছেন তা ইতিহাসে বিরল।
যুগের বিভিন্ন ফিৎনা মুকাবেলায় শাহ ওলিউল্লাহ যে সুদূর প্রসারী আন্দোলনের সূচনা করেছিলেন শাহ আবদুল আযীয সে আন্দোলনকে বেগবান করেন। উপমহাদেশে ব্যবসার ছদ্মবেশে ইংরেজদের শাসনক্ষমতা দখলের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন সোচ্চার। সাড়ে তিনশত পৃষ্ঠার ফতোয়া দিয়ে উপমহাদেশকে দারুল হরব ঘোষণা করে ইংরেজদের বিরুদ্ধে জিহাদের আহ্বান করেন। সাইয়্যিদ আহমদ শহিদ রহ.কে দায়িত্ব দিয়ে তিনি পাঠিয়ে দেন জিহাদের ময়দানে।
সমকালীন বিভিন্ন ভ্রান্ত মতবাদের বিরুদ্ধে তিনি লেখেন অনেক পুস্তক। শীয়া মতবাদের বিরুদ্ধে লেখা তার প্রামাণিক কিতাব তুহফায়ে ইসনা আশারিয়্যাহ সর্বমহলে সমাদৃত হয়েছে। তার বক্তৃতা ছির প্রাঞ্জল। সপ্তাহে দুইদিন তিনি শিক্ষানিকেতনে বক্তৃতা করতেন। সব মতবাদের মানুষই তার বক্তৃতা দ্বারা উপকৃত হত।
ক্ষীণ দেহের শাহ আবদুল আযীয রহ. বার্ধক্যে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হন এবং ১২৩৯ হিজরীর ৭ শাওয়াল প্রভুর ডাকে সাড়া দিয়ে পরপারে পাড়ি জমান।
সুদীর্ঘ জীবনে বিভিন্ন বিষয়ের উপর শাহ আবদুল আযীয রহ. রচনা করেন অনেক কালজয়ী গ্রন্থ। বুস্তানুল মুহাদ্দিসীন, তুহফায়ে ইসনা আশারিয়্যা, সিররুশ শাহাদাতাইন, তাফসীরে ফাতহুল আযীয, ফাতওয়ায়ে আযীয তারমধ্যে অন্যতম।
তার ছাত্রদের মধ্যে অন্যতম হলেন বালাকোট-বীর সাইয়্যিদ আহমদ শহিদ, শাহ ইসমাঈল শহীদ, শাহ মুহাম্মাদ ইসহাক, মাওলানা খায়রুদ্দীন প্রমুখ।
