ইসলাম টাইমস ডেস্ক: মানুষের স্বাভাবিক শারীরিক সৌন্দর্য নষ্ট করে কৃত্রিমভাবে সৌন্দর্য সৃষ্টি করা ইসলামে নিষিদ্ধ ও গর্হিত। তাই ইসলামের দৃষ্টিতে শরীরে ট্যাটু বা উল্কি আঁকা বেশির ভাগ ইসলামী আইন বিশেষজ্ঞের দৃষ্টিতে হারাম। তাঁরা বলেছেন, যেসব উপায়ের মাধ্যমে আল্লাহর সৃষ্ট অঙ্গে পরিবর্তন আনা হয়, তার সবই নিষিদ্ধ।
তাছাড়া ট্যাটু বা উল্কি আঁকার শারীরিক ক্ষতিও অনেক। সম্প্রতি বিবিসির এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে ট্যাটু বা উল্কি আঁকার ভয়াবহতা। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে-
যেসব পার্লারে উল্কি ও পিয়ার্সিং করা হয় সেগুলোয় ইনফেকশন ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি থাকে।
এ কারণে এসব পার্লারে যারা কাজ করেন তাদের উপর আইন কঠোর করা উচিত বলে মনে করেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
আজকাল অনেক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে যেখানে ট্যাটু করা অথবা নাক কান বা অন্য কোথাও ছিদ্র করার বিষয়ে সঠিক প্রশিক্ষণ দেয়া হয়না। মানা হয়না সাধারণ বিধিগুলোও।
কিন্তু চটকদার অফারের ফাঁদে পড়ে অনেকেই ছুটছেন সেসব প্রতিষ্ঠানে।
উল্কি, কসমেটিক পিয়ার্সিং, আকুপাংচার এবং ইলেক্ট্রোলাইসিসের মতো সেবাগুলো আজকাল বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে।
মানুষের এই চাহিদাকে পুঁজি করে স্বাস্থ্যবিধির কোন নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে বেপরোয়াভাবে চলছে কিছু প্রতিষ্ঠান।
যেসব পার্লার ইনফেকশন নিয়ন্ত্রণের বিষয়টিকে কোন গুরুত্ব দেয় না। তাদের ব্যাপারে সচেতন হওয়া প্রয়োজন- বলছেন বিশেষজ্ঞরা।

তাদের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এই বিশেষ পদ্ধতিগুলোয় গ্রাহকদের ত্বকে ছিদ্র করা হয়। এবং টেকনিশিয়ানরা সেটা করেন সঠিক কোন যত্ন ছাড়াই। এ কারণে ব্যাকটেরিয়াসহ অন্যান্য অণুজীব শরীরে প্রবেশ করে ইনফেকশনের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, ব্রিটিশ এক কিশোর কানে ছিদ্র করার পর কিভাবে সেখানে ইনফেকশন ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি এমন হয় যে তার কানের একটা অংশ কেটে বাদ দিতে হয়।
এই ইনফেকশন অন্যের শরীরের জীবিত অণুজীব অথবা ছিদ্র করার কাজে যে সুই ও যন্ত্র ব্যবহার করা হয়, সেগুলো থেকেও হতে পারে।
এ থেকে হতে পারে হেপাটাইটিস, টিবি (টিউবারকুলোসিস), সিফিলিস এমনকি এইচআইভি এর মতো জটিল সব রোগ।
যুক্তরাজ্যে সাম্প্রতিক ইনফেকশন প্রাদুর্ভাবের পেছনেও ছিল এই উল্কি, ত্বকে ছিদ্র বা পিয়ার্সিং করাসহ চারটি বিশেষ পদ্ধতি। যা পরবর্তীতে এলার্জি প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে।
পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াগুলো কী?
প্রায় ৯০০ জন ব্যক্তির ওপরে এ সংক্রান্ত এক জরিপ পরিচালনা করা হয়। সেখানে দেখা যায়, এসব সেবা নেয়ার পর ১৮ শতাংশের কিছু সমস্যা ভুগতে হচ্ছে। ক্ষতস্থান জ্বালাপোড়া করা, ফুলে ওঠা, চুলকানোসহ আরও নানা সমস্যা।
২ শতাংশ মানুষ জানিয়েছেন, যে তাদের ত্বকে ইনফেকশন হয়ে পড়েছিল।
এছাড়া প্রতি ১০ জনের মধ্যে একজনের কিছু না কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছিল, যার কারণে অনেকেই মেডিকেল চিকিৎসা নিতে হয়েছে।
যদিও বেশিরভাগ মানুষের ওপর কোনও নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি।
তারপরও জরিপে অংশ নেয়া ৯৮% মানুষই বলছেন, ইনফেকশন ঠেকাতে এসব পার্লারের কর্মীদের বা যারাই এসব পরিসেবার সঙ্গে যুক্ত তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করা আইনগত-ভাবে বাধ্যতামূলক করা উচিত।
যুক্তরাজ্যে এ সংক্রান্ত কোন আইন না থাকলেও এসব প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় লাইসেন্স আরোপের কথা ভাবছে তারা।
এর অর্থ এই যে টেকনিশিয়ান, যারা কিনা এসব সেবা সরবরাহ করে তাদের একটি অনুমোদিত ইনফেকশন নিয়ন্ত্রণ যোগ্যতা থাকতে হবে এবং এই তথ্যটি জাতীয় ডাটাবেসে রাখা হবে।
যেসব টেকনিশিয়ানের ইনফেকশন নিয়ন্ত্রণ যোগ্যতা নাজুক বা খারাপ ইতিহাস আছে তাদের যত্রতত্র নতুন ব্যবসা খুলতে দেয়া হবেনা।
স্কটল্যান্ডের ব্যবসার মালিকদের জন্য লাইসেন্সিং স্কিম করার পরিকল্পনা হাতে নেয়া হলেও, সেখানে টেকনিশানদের দক্ষতা অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ নেয়ার বিষয়টিকে উল্লেখ করা হয়নি।
ইংল্যান্ড এবং উত্তর আয়ারল্যান্ডে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলতে গেলে নিবন্ধীকরণ ফর্ম পূরণ করা ছাড়া আর কিছুই করতে হয়না।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে এই পদ্ধতিগুলো “পুরানো এবং এভাবে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাবে না।”
ইংল্যান্ডের স্বাস্থ্য ও সোশ্যাল কেয়ার বিভাগ জানিয়ে যে, ” ট্যাটু এবং পিয়ার্সিং সেবা সরবরাহকারীদের পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্য নিরাপত্তা ঝুঁকিপূর্ণ হলে সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষমতা স্থানীয় কর্তৃপক্ষের আছে।
বিভাগের এক মুখপাত্র বলেন, “যথাযথ প্রশিক্ষণ দেয়া এবং জনগণকে সচেতন করার মাধ্যমে আমরা এসব পরিসেবায় মানুষের নিরাপত্তা ও সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করার ব্যাপারে অঙ্গীকারবদ্ধ।
মন্ত্রীরা সম্প্রতি এসব পদ্ধতির ঝুঁকি সম্পর্কে মানুষকে সম্পূর্ণ সচেতন করতে প্রচারণা শুরু করে।

রিপোর্টে আর কী সুপারিশ করা হয়েছে?
দ্য রয়েল সোসাইটি ফর পাবলিক হেলথের রিপোর্টে কয়েকটি বিষয়ে আহ্বান জানানো হয়েছে:
- ১৮ বছরের কম বয়সীদের জন্য নন সার্জিক্যাল কসমেটিক পদ্ধতি যেমন: ঠোটে বা শরীরের অন্য কোন অংশে ইনজেকশন দিয়ে ফোলানোর মতো পদ্ধতি অবৈধ করতে হবে।
- যদি বিশেষ কোন পদ্ধতিতে ইনফেকশনের ঝুঁকি থাকে তাহলে সেই বিষয়টি স্থানীয় কাউন্সিল বা স্বাস্থ্য সুরক্ষা দলকে জানাতে হবে।
- উল্কি এবং পিয়ার্সিং-এর সরঞ্জাম শুধুমাত্র লাইসেন্স বা নিবন্ধনের নথিযুক্ত মানুষের কাছেই বিক্রি করার নিয়ম প্রণয়ন করতে হবে।
- ডার্মাল ফিলার, উল্কি, পিয়ার্সিং- এই পদ্ধতিগুলোয় আইনি কড়াকড়ি আরোপ করতে হবে।
আরএসপিএইচ এর প্রধান নির্বাহী শেরলি ক্রামার বলেন, “আমরা চাই যুক্তরাজ্যের বাকি অংশগুলোতে ওয়েলসের উদাহরণটি অনুসরণ করা হোক।”
“যাতে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য ঝুঁকিগুলি কমিয়ে আনতে , বাধ্যতামূলক লাইসেন্সিং স্কিম চালু করা যায়।”
প্রফেসর পভিস বলেন: “একটি উল্কি বা শরীরের কোথাও ছিদ্র করাকে খুব ফ্যাশনেবল মনে হতে পারে, তবে সেটা হেপাটাইটিস বা সিফিলিসের কারণ হোক, এটা নিশ্চয়ই কেউ চাইবেনা। ”
“এজন্য সকল সংগঠনকে তাদের দায়িত্বগুলো গুরুত্ব সহকারে পালন করতে হবে।”
সূত্র: বিবিসি
