আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়া: সমৃদ্ধ ঐতিহ্যের এক অনন্য প্রতিষ্ঠান

তারিক বিন মুজিব।।

আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া। পূর্বনাম জমিরিয়া কাসিমুল উলূম। চট্টগ্রাম শহর থেকে দক্ষিণ-পূর্বে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে পটিয়া উপজেলায় অবস্থিত দেশের শীর্ষ এ মাদরাসাটি। বৃটিশ শাসনামলে প্রতিষ্ঠিত এ প্রতিষ্ঠানটি পটিয়া মাদরাসা নামেই দেশব্যাপী পরিচিত।

উপমহাদেশের শীর্ষস্থানীয় আলেম, ফকীহুননফস খ্যাত রশীদ আহমদ গাঙ্গোহী রহ.-এর বিশিষ্ট খলিফা শাহ জমিরুদ্দীন রহ.-এর মনে একটি মাদরাসা করার বাসনা জাগল। নিজের ইচ্ছের কথা বিশিষ্ট আলিম মুফতি আযিযুল হক রহ.কে জানালেন। মুফতি সাহেব ছিলেন শাহ জমিরুদ্দীন সাহেবের ছাত্র ও খলিফা। তিনি তখন জিরি মাদরাসায় খেদমতে নিয়োজিত ছিলেন।

১৯৩৯ সাল। মুফতি আযিযুল হক রহ. নিজ শায়খের আশা ও আখাঙ্ক্ষার প্রেক্ষিতে বন্ধুবর, অপর প্রখ্যাত আলেম মাওলানা আহমদ রহ.সহ স্থানীয় উলামায়ে কেরামকে নিয়ে পটিয়া শহর থেকে একটু দূরে তুফান আলী মুনশী মসজিদে একটি মাদরাসার ভিত্তি স্থাপন করেন। শায়খ জমিরুদ্দীন রহ.-এর নামানুসারে নতুন প্রতিষ্ঠিত মাদরাসার নামকরণ করা হয় ‘জমিরিয়া কাসিমুল উলূম’। পরপর কয়েকবার জায়গা পরিবর্তনের পর বর্তমান ঠিকানায় মাদরাসাকে স্থানান্তর করা হয়।

চট্টগ্রামসহ দেশের দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলে বিভিন্ন বিদআত, রুসূম ও মাজার পূজার উপস্থিতি অনেকদিন থেকেই। মাদরাসা প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে শায়খ জমিরুদ্দীন রহ.-এর উদ্দেশ্য ছিল সমাজে ছড়িয়ে পড়া বিদআত-রুসূমাতের অপসারণে দ্বীনের সঠিক শিক্ষার সম্প্রসারণ করা। তিনি মাঝেমাঝে বলতেন, ‘পটিয়া হল কেন্দ্রীয় স্থান। এর মাধ্যমে দেশের আরো অনেক জায়গা আলোকিত হবে ইনশাআল্লাহ্’।

প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই মুফতি আযিযুল হক রহ. ছিলেন পটিয়া মাদরাসার পরিচালক। তবে শিক্ষা-দীক্ষা ও মাদরাসার সার্বিক উন্নয়নে অসামান্য অবদান ছিল মাওলানা আহমদ রহ., মাওলানা ইস্কান্দর রহ., ও মাওলানা আমজাদ রহ.-এর। মুফতি সাহেবের ইনতিকালের পর মাদরাসার দায়িত্ব গ্রহণ করেন মাওলানা হাজী ইউনুছ রহ.। মেধা-প্রজ্ঞা, ত্যাগ-তিতিক্ষায় ছোট্ট মাদরাসাটিকে তিনি জামিয়ায় রূপ দেন। ১৯৯২ সালে হাজী সাহেবের ইনতিকালের পর মাদরাসার দায়িত্ব অর্পিত হয় মাওলানা হারুন ইসলামাবাদীর উপর। তার হাতে সূচিত হয় জামিয়ার বিকাশের নতুন ধারা। তার জ্ঞান, যোগ্যতা, কর্মদক্ষতা ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তার পরিচিতির কারণে জামিয়ার সুনাম, সুখ্যাতি উত্তোরত্তর বৃদ্ধি পায়। ২০০৩ সালে তার ইনতিকালের পর কিছুদিন জামিয়ার শতবর্ষী আলেম মাওলানা নুরুল ইসলাম কদীম হুজুরকে দেয়া হয় মাদরাসা পরিচালনার দায়িত্ব। তার বাধর্ক্যজনীত কারণে পরিবর্তীতে জামিয়ার দায়িত্ব দেয়া হয় মেধাবী আলেম জামিয়ার কৃতি সন্তান মাওলানা আবদুল হালিম বুখারী দা.বা.কে। তিনিই এখন পর্যন্ত সফলতার সাথে মাদরাসা পরিচালনার এ গুরু দায়িত্ব আঞ্জাম দিয়ে আসছেন।

১৯৩৯ সালে ছোট্ট একটি মসজিদে শুরু হওয়া সেদিনের জমিরিয়া মাদরাসাটি বর্তমানে দেশের বৃহৎ শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান সমুহের অন্যতম। জামিয়ার বর্তমান ছাত্র সংখ্যা প্রায় পাঁচ হাজার। এ মাদরাসার তত্ত্ববধানে পরিচালিত শিক্ষাবোর্ড ইত্তেহাদুল মাদারিসের অধীনে পরিচালিত হয় প্রায় পাঁচশত মাদরাসা। পটিয়া মাদরাসার উদ্যোগে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বাস্তবায়ন করা হয় ছোট বড় নানা প্রকল্প। দাওয়াত ও বিভিন্ন কল্যাণমূলক কাজের সাথে এ মাদরাসার সংশ্লিষ্টতা অনেক বেশি।

হাদিস, তাফসির, ফিকহ, আদব, কিরাত, বাংলা, ইংরেজি, প্রযুক্তিসহ আরো অনেক বিষয়েই উচ্চতর পাঠদান করা হয় এ জামিয়ায়।

এসব তথ্য ও ইতিহাস জানতে কথা বলা হয় জামিয়ার উস্তায মুফতি শামসুদ্দীন জিয়া ও মাওলানা সালীমুদ্দীন মাহদি সাহেবের সাথে।

পূর্ববর্তি সংবাদবগুড়ায় নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী থেকে ৪০ হাজার বেশি ভোটে জয় পেয়েছেন বিএনপি প্রার্থী সিরাজ
পরবর্তি সংবাদগুজরাট মন্দিরে ‘পুণ্য’লাভ করতে গিয়ে ফাঁটা বাশের চিপায় পড়লেন নারী