সেই ভ্যানচালক শাহীন, আইসিইউতে যেমন আছে

শরীফ মুহাম্মদ ও এনাম হাসান জুনাইদ।।

তখন বিকেল সাড়ে চারটা। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুরাতন ভবনের চার তলায় উঠেছি সম্প্রতি দুর্বৃত্তদের হামলায় আহত ‍কিশোর শাহীনকে দেখার জন্যে। এইমাত্র সদলবলে এসে দেখে গেলেন একজন মন্ত্রী। শোনলাম, আজ নাকি আরও একজন মন্ত্রী এসে দেখে গেছেন শাহীনকে।

শাহীন শুয়ে আছে ঢামেকের পুরাতন ভবনের চারতলায়, আইসিইউর (নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের) ১৬ নম্বর বেডে। তার মুখে মাস্ক লাগানো। মুখও আগের চেয়ে বেশ ফোলা। এখনও অচেতন। তবে মাঝেমধ্যে হাত নাড়ে। ডাক্তারদের মতে, শাহীন এখনও আশঙ্কা মুক্ত নয়।

নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের বাইরে  বসে ছিলেন শাহীনের মা, খালাত ভাই, আর খালু। কখন শাহীনের জ্ঞান ফিরবে, সেই আশায় নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের বারান্দায় তারা বসে অপেক্ষা করছিলেন।

শাহীনকে শনিবার রাতে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করা হয়েছে। রাতেই অপারেশন শেষে তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। ডাক্তাররা প্রথমে বলেছিলেন, ২৪ ঘন্টার মধ্যে জ্ঞান ফিরবে। পরে আরও সময় বাড়িয়ে বললেন, ৭২ ঘন্টার মধ্যে জ্ঞান ফিরবে।

শাহীনের খালু রবিউল বাশার ইসলাম টাইমসকে জানালেন, দুর্বৃত্তরা  ভ্যান ও শাহীনের সঙ্গে থাকা টাকা, মোবাইল ফোন—সবই নিয়ে গেছে। শাহীন মারা গেছে ভেবে ওরা ফেলে রেখে চলে যায়। প্রথমে শাহীনকে সাতক্ষীরা হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে তাকে খুলনার ২৫০ শয্যার হাসপাতালে নেওয়া হয়। খুলনার চিকিৎসকেরা জানান, শাহীনের মাথায় মারাত্মক জখম হয়েছে, ঢাকা মেডিকেলে নিতে হবে। শনিবারই ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করা হয় শাহীনকে।

তিনি জানান, চেতনা থাকা অবস্থায় মাঝে মাঝেই নাকি চিৎকার করে উঠত শাহীন। বলে উঠত, “এত করে কলাম, আমারে মারিস না। ওরা কয় তোর নিস্তার নেই।’’

যশোরের কেশবপুরের গোলাঘাটা দাখিল মাদ্রাসার সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী শাহীন গত শুক্রবার দুর্বৃত্তদের হামলায় গুরুতর আহত হয়। ওই দিন যাত্রীবেশী কয়েকজন দুর্বৃত্ত তার ভ্যানটি ভাড়া নেয়। শাহীন তাদের নিয়ে সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটা থানার ধানদিয়ার নামক এলাকায় যাচ্ছিল। পথে একটি পাটখেতের পাশে শাহীনের ভ্যানটি দাঁড় করায় দুর্বৃত্তরা। এ সময় তারা শাহীনের মাথায় আঘাত করে ভ্যানটি নিয়ে পালিয়ে যায়। আঘাত ও রক্তক্ষরণের ফলে অচেতন হয়ে পড়েছিল শাহীন। পরে চেতনা ফিরলে কাঁদতে শুরু করে সে। স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটা থানায় খবর দেয়।

কেশবপুর থানার মঙ্গলকোট গ্রামে শাহীনদের বাড়ি। বাবা হায়দার আলী মোড়ল একটি এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ব্যাটারিচালিত ভ্যান কিনেছিলেন। বাড়তি রোজগারের আশায় পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে শাহীনও ভ্যান নিয়ে বেরিয়ে পড়ত। মা খাদিজা বলেন, তাঁর ছেলে পড়াশোনায় ভালো। ছোট দুই বোনের পড়াশোনার প্রতিও নজর ছিল শাহীনের।

শাহীনের বাবা হায়দার আলী মোড়ল বাদী হয়ে গতকাল শনিবার পাটকেলঘাটা থানায় মামলা করেছেন বলে জানা গেছে। অপরাধীদের ধরতে সাতক্ষীরা ও যশোরের পুলিশ যৌথ অভিযান চালাচ্ছে। সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ সুপার মো. সাজ্জাদুর রহমান বলেন, শনিবার রাত থেকে অভিযান শুরু করেছে। দ্রুতই অপরাধীদের গ্রেপ্তার করা যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অসিত চন্দ্র সরকার গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন , ‘শাহীনের মাথার হাড় ফেটে ভেতরের দিকে ঢুকে গেছে। গতকাল ভর্তি হওয়ার পর পরই অপারেশন হয়েছে। ওর ইনজুরিটা একটু ক্রিটিক্যাল। তাই আইসিইউতে আছে। ওর চিকিৎসায় সাত সদস্যের একটি বোর্ড গঠন করা হয়েছে।’

গণমাধ্যমে শাহিনের খবরটি প্রকাশ হওয়ার পর অনেকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। শাহিনের সাহায্যের জন্যে আপনিও এগিয়ে আসতে পারেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজের পুরাতন ভবনের চারতলায় আইসিইউতে বললেই যে কেউ আপনাকে দেখিয়ে দেবে। আপনার একটু খানি সাহায্যের হাত হয়তো শাহিনকে সুস্থ করে তোলার ক্ষেত্রে অনেক ভূমিকা রাখবে।

পূর্ববর্তি সংবাদহজ্ব : হাদীস ও আছারের আলোকে-[তিন]
পরবর্তি সংবাদনয়ন বন্ড নিহত, ‘বন্দুকযুদ্ধে’ আহত ৪ পুলিশ