জামিয়া ইমদাদিয়া কিশোরগঞ্জ: সমৃদ্ধ ইতিহাসের এক বৈচিত্র্যময় প্রতিষ্ঠান

তারিক বিন মুজিব ।।

জামিয়া ইমদাদিয়া কিশোরগঞ্জ। পূর্বনাম ইমদাদুল উলূম। ঐতিহ্যের নগর কিশোরগঞ্জের প্রাণকেন্দ্র ঐতিহাসিক শহিদী মসজিদের পাশে পুরান থানা বাজার সংলগ্ন সুরম্য অট্টালিকার সুদৃশ্য মাদরাসাটিই জামিয়া ইমদাদিয়া। বৃটিশ শাসনামলে প্রতিষ্ঠিত এ মাদরাসাটি কিশোরগঞ্জ জামিয়া নামেই সে অঞ্চলে পরিচিত।

বৃটিশ ভারত ও পরবর্তী পাক শাসনামলে দেশের রাজনীতি ও আধ্যাত্মিকতায় কেন্দ্রীয় চরিত্রে যারা ছিলেন কিশোরগঞ্জের আতহার আলী রহ. ছিলেন তাদের অন্যতম। সিলেটে জন্ম নেওয়া এই মহীরুহ ছিলেন হাকীমুল উম্মতের খলিফা। সুদীর্ঘ কর্মজীবনে কুমিল্লার জামিয়া মিল্লিয়া ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জামিয়া ইউনুছিয়াতে শিক্ষকতার পরে কিশোরগঞ্জের শহিদী মসজিদে তিনি ইমাম নিযুক্ত হন। মসজিদের মুসল্লিদের সকাল বিকাল দ্বীনিয়্যাতের (ধর্মীয় বিষয়াবলীর) তালীম দিতেন তিনি। চমৎকার পদ্ধতিতে তাঁর দ্বীনের মৌলিক বিষয়াদির উপস্থাপন ও শিক্ষাদানের প্রক্রিয়া দেখে স্থানীয় লোকজন তাকে একটি মাদরাসা করারর জন্য জোর তাগীদ দিতে শুরু করেন।

বৃটিশরা আলেম নিধনকে উপমহাদেশে তাদের ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করার কৌশল হিসেবে গ্রহণ করে। অপকৌশলে রাষ্ট্রীয় অনুদানে চলা উপমহাদেশের বিশেষত বাংলা অঞ্চলের মাদরাসাগুলোকে বন্ধ করে দেয়। ১৯ শতকের মাঝামাঝি অংশে দেওবন্দে দারুল উলূম প্রতিষ্ঠা উপমহাদেশে দ্বীন রক্ষা ও সম্প্রসারণের নতুন উদ্দীপনা যোগায়। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই ভারতবর্ষের গণ্ডি ছাড়িয়ে সমগ্র বিশ্বে দেওবন্দী ধারার প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠতে থাকে।

শহিদী মসজিদ

১৯৪৫ সাল। আতহার আলী রহ.-এর তত্ত্বাবধানে মাত্র দু’জন শিক্ষক ও কয়েকজন ছাত্র নিয়ে কিশোরগঞ্জের শহীদী মসজিদে ছোট্ট একটি মাদরাসার যাত্রা শুরু হয়। আতহার আলী রহ.-এর দাদাপীর উপমহাদেশের বিশিষ্ট রাহবর হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কীর নামানুসারে ইমদাদুল উলূম রাখা হয় এ মাদরাসার নাম।

শহিদী মসজিদের পার্শ্ববর্তী জায়গাটি মাদরাসার জন্য ব্যবস্থা করা হয়। আল্লাহর রহমত, আতহার আলী রহ.-এর দোয়ার বরকত ও এলাকাবাসীর আর্থিক ও কায়িক পরিশ্রমে মাদরাসার ভবন এত দ্রুত নির্মিত হয় যে স্থানীয় মানুষ আশ্চর্য হয়ে যায়। মাওলানা আতহার আলী নিজ খলিফা মাওলানা আহমদ আলী খান রহ.কে প্রধান করে শহিদী মসজিদ থেকে মাদরাসা কার্যক্রম নিজস্ব কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন।

হাকীমুল উম্মতের খলিফা মাওলানা আতহার আলী রহ. ছিলেন কুশলী ও দূরপ্রসারী চিন্তার অধিকারী। মাদরাসা প্রতিষ্ঠার পরপরই তিনি উস্তাযদের জন্য কোয়ার্টার, ছাত্রদের দরস ও বিশ্রামের জন্য পৃথক আবাসনেরর ব্যবস্থা করেন। ছাত্রদের কর্ম ও জীবিকার সম্মানজনক পন্থা অবলম্বনের লক্ষ্যে মাদরাসায় ট্রেইলারিং, শর্ট হ্যান্ড, টাইপ রাইটিং, সার্ভে ও ক্যালিগ্রাফির শিক্ষা কার্যক্রম চালু করেন।

১৯৫৩-৫৫ সময়ের মধ্যে এ মাদরাসায় তাকমীল জামাত খোলা হয়। তখন মাদরাসার নামকরণ করা হয় জামিয়া ইমদাদিয়া।

আরব আজমের দুর্লভ অনেক কিতাব, সংকলন সংগ্রহ করে জামিয়ার জন্য একটি সমৃদ্ধ পাঠাগার গড়ে তোলা হয়। এ সময় জামিয়ার পক্ষ থেকে মাসিক আল-মুনাদি, মাসিক নাজাত, সাপ্তাহিক নেজামে ইসলাম প্রকাশ করা হত। কিন্তু স্বাধীনতা পরবর্তী মাদরাসার সাময়িক সংকটের সময় পাঠাগারের দুর্লভ অনেক কিতাব হারিয়ে যায়। প্রকাশনা বিভাগ বন্ধ হয়ে যায়।

জামিয়ার মহা পরিচালক আল্লামা আযহার আলী আনোয়ার শাহ

প্রতিষ্ঠার পর থেকে ১৯৮২ সালে ইনতিকালের আগ পর্যন্ত মাওলানা আহমদ আলী রহ. ছিলেন এ মাদরাসার মোহতামিম। তাঁর শেষ বয়সে বার্ধক্যজনিত কারণে অবশ্য মাওলানা আনোয়ার শাহ সাহেবকেই মাদরাসা পরিচালনার দায়িত্ব আঞ্জাম দিতে হয়েছে। আতহার আলী রহ-এর সুযোগ্য উত্তরসূরী চিন্তাশীল আলেম মাওলানা আনোয়ার শাহ সাহেব নব্বইয়ের দশক থেকে জামিয়া ইমদাদিয়ার পরিচালনার দায়িত্ব পালন করে আসছেন।

জামিয়ার উস্তায ও প্রধান মুফতি মাওলানা ওমর ফারুক সাহেবের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়।

তিনি জানান, উলুমুল হাদীস, ফিকহ, কিরাআত বিভাগসহ জামিয়ায় বর্তমান ছাত্র সংখ্যা প্রায় পনের শত। একসময় জামিয়ায় তাফসীর, আদবসহ আরো কিছু বিভাগ চালু ছিল।

পূর্ববর্তি সংবাদপ্রকাশ্যে গুলি করে কলেজ-ছাত্রকে হত্যা
পরবর্তি সংবাদতেল ট্যাংকার জব্দের প্রতিবাদে ব্রিটেনের বিরুদ্ধে প্রতিশোধের হুমকি ইরানের