চেয়ারে বসে নামাজ পড়ার সিদ্ধান্ত কে দেবেন, ডাক্তার না মুফতি সাহেব?

দিন দিন মসজিদে মসজিদে চেয়ারের  সংখ্যা বেড়েই চলেছে । সামান্য অসুস্থ হলেই   অনেককে চেয়ারে বসে নামাজ পড়তে দেখা যায়।  এ বিষয়ে মিরপুর ১২ পল্লবীর মোল্লা মসজিদে তাফসীর মাহফিল এর প্রশ্নোত্তর পর্বে এক চমৎকার আলোচনা করেন মসজিদের খতিব ও মারকাযুদ্ দাওয়াহর  শিক্ষক মাওলানা মুহাম্মদ   ইয়াহইয়া । তার সেই আলোচনা নিয়েই আমাদের আজকের মুখকলাম।

 চেয়ারে বসে নামাজ পড়ার প্রশ্ন আসলো কোত্থেকে? হাদীস শরীফে তো দাঁড়াতে না পারলে বসে নামাজ পড়ার কথা এসেছে । হাদীস শরীফে এসেছে, যদি দাঁড়াতে  না পারো তাহলে বসে নামাজ পড়। মানে এই যে আপনারা বসে আছেন এটাকে বলে বসা। আপনাদেরকে যদি বলা হয় , এই বসুন তাহলে এর দ্বারা ফ্লোরে বসাই  উদ্দেশ্য হবে- এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না । এর দ্বারা চেয়ারে বসার কথা কেউ বুঝবে না ।  হাদিসকে তার স্বাভাবিক অর্থের উপরে রেখে বুঝতে হবে।
 আমি একবার এক ডাক্তারের কাছে গেলাম । দেখি ডাক্তারের প্রেসক্রিপশনে ছাপার অক্ষরে লেখা- চেয়ারে বসে নামাজ পড়বেন।  সুস্থ কিংবা অসুস্থ সবার জন্য তার সাধারণ পরামর্শ চেয়ারে বসে নামাজ পড়বেন। চিন্তা করুন নামাজের প্রতি আমাদের কতটা অবহেলা!
চেয়ারে বসে নামাজ পড়ার জন্য ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন লাগে না। এটা রোগী  নিজেই ঠিক করতে পারে সে কিভাবে নামাজ পড়বে । বসে থাকতে কেমন কষ্ট হয়, কিভাবে বসলে রোগীর  কতটুকু কষ্ট লাগে এটা রোগী ভালোভাবেই বুঝে। এটা রোগীর সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়।
আমরা হাদিসের কিতাবে পড়েছি,  উম্মে সালামা র. এর চোখে  একটা রোগ হয়েছিল।  চিকিৎসকরা জানালেন, আপনার চোখের  চিকিৎসার আপনাকে কিছু দিন  উঁচু জায়গায় সিজদা করতে হবে । মাটিতে সিজদা করা যাবে না।
তিনি বললেন আমাকে সিদ্ধান্ত নিতে দাও আমি কি সেজদা ছাড়বো না আমার চোখ  ছাড়বো। এটা হল সাহস করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয় । মেনে নেওয়ার বিষয়।  একজন রোগী এটা মেনে নিতে পারেন যে আমি অসুস্থতার উপর আমার রুকু-সিজদাকে প্রাধান্য দিব।
হা, অনেক রোগী এমন  আছেন যাদের নিচে বসতে  আসলেই অনেক কষ্ট হয়। তাদের জন্য তো চেয়ারে বসা ঠিক আছে । কিন্তু এমন লোকের সংখ্যাও কম নয় যারা ডাক্তার নিষেধ করা কাজ সব করে। ডাক্তার ভারী জিনিস বহন করতে নিষেধ করেছে সে ঠিকই ভারী জিনিস বহন করছে। আবার নিচে বসে গল্পও করছে । সবই ঠিক আছে কিন্তু নামাজের সময় গিয়ে চেয়ারে বসে । এটা খুবই দুঃখজনক।
আপনি চেয়ারে বসে নামাজ পড়বেন- এ কথা বলার অধিকার কোন ডাক্তারের নেই। ডাক্তারের জন্য এটা অনধিকারচর্চা । এ কথা বলবেন একজন আলেম। একজন মুফতি সাহেব।   একজন ডাক্তার যে কথাটা বলতে পারেন তা হল- আপনি কতটুকু ঝুকবেন, কতটুকু ঝুকবেন না সেটা।
অনুলিখন: এনাম হাসান জুনাইদ
পূর্ববর্তি সংবাদসুইডেনে বিমান বিধ্বস্ত, নিহত ৯
পরবর্তি সংবাদদুয়েক দিনের মধ্যে দেশের ২০ জেলায় বন্যা ছড়িয়ে পড়তে পারে