তাহরির স্কয়ারের আন্দোলন: ফলাফল ও পরিণতি নিয়ে বোদ্ধাদের বিশ্লেষণ

মুশফিক রহমান ।।

তাহরির স্কয়ারে আবারও বিক্ষোভ। মিশরের স্বৈরশাসক জেনারেল আবদেল ফাতাহ সিসির দুঃশাসনে অতিষ্ঠ হয়ে তার পদত্যাগের দাবিতে আবারও রাস্তায় নেমেছে মিশরের প্রতিবাদী জনগণ। গত শুক্রবার থেকে শুরু হয় রাজপথের আন্দোলন। তাহরির স্কয়ার ছাড়াও আলেকজান্দ্রিয়া, সুয়েজের মতো বড় বড় শহরগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে বিক্ষোভ।

তবে এ আন্দোলনে দেশটির মূলধারার কোনো সংগঠনের নেতৃত্ব নেই। ইখওয়ান বা ইসলামপন্থি বিভিন্ন সংগঠনের কর্মীরা মাঠপর্যায়ে থাকলেও এবারের আন্দোলনের সূচনা অনলাইন এক্টিভিস্টদের প্রচারণায়। সাম্প্রতিক আন্দোলনে সবচেয়ে সরব ভূমিকা পালন করছে স্পেনে পলায়নরত ৪৩ বছর বয়সী মুহাম্মদ আলী নামে একজন মিশরীয় অভিনেতা। মিশরে যার রিয়েল এস্টেটের ব্যবসা ছিল। মিলিটারির সাথেও তার বেশ যোগসাযশ ছিল। তবে সম্প্রতি প্রশাসনের সাথে তার দূরত্ব তৈরি হয়।

সিসি প্রশাসনের লুটপাট এবং দুর্নীতির চিত্র সামনে এনে গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই সে ফেসবুক লাইভে এসে সিসির পদত্যাগের দাবিতে মিশরীয় জনগণকে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান করছিল। তার সাথে যোগ দিয়েছে ২০১১ সালে হোসনি মোবারকের পতনের দাবিতে আন্দোলনকারী বিভিন্ন নেতাও। ফেসবুক এবং টুইটারে তাদের আহ্বানে ব্যাপক সাড়া পড়ে।

অনেকেরই ধারণা ছিল এই আন্দোলন ফেসবুক ও টুইটারের হ্যাশট্যাগের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে। মাত্র ৬ বছর আগে ২০১৩ সালে যেরকম কঠোরভাবে আন্দোলন দমন করা হয়েছিল, তাতে এতো তাড়াতাড়ি কেউ মাঠে নামবে – এটা আশা করা কঠিন ছিল। কিন্তু স্বৈরাচার সিসির দুঃশাসনের বিরুদ্ধে মিশরীয় প্রতিবাদী জনতা ঠিক-ই আন্দোলনে নেমেছে।

আন্দোলন প্রতিরোধে প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাহরির স্কয়ারমুখী সব সড়ক বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বেসামরিক পোশাকে থাকা নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা বিক্ষোভকারীদের মুখোমুখি হচ্ছে। ধরপাকড়ের পাশাপাশি আন্দোলনকারীদের ওপর টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করা হচ্ছে।

মিশরের চলমান আন্দোলনের ফলাফল ও পরিণতি নিয়ে আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি ও রাজনীতি বিশ্লেষকগণ বিভিন্ন মত দিচ্ছেন।

কেউ বলছেন, গভীর প্ল্যানিং এবং পদস্থ কোনো মিলিটারি অফিসারের মদদ পেলে এ আন্দোলন অনেকদূর অগ্রসর হতে পারে। অবশ্য কেউ কেউ বলছেন, ২০১৩ সালের মতোই এ আন্দোলন দমন করা হবে। তবে ফলাফল বা পরিণতি যাই হোক, নির্মমতার ছয় বছরের মাথায় মিশরীয় জনতার প্রতিবাদী মানসকে সবাই স্বাগত জানাচ্ছে।

দেশটির চলমান আন্দোলনে ইসলামপন্থিদের উপস্থিতি, অনুপস্থিতি, কারণ, প্রতিকূলতা নিয়েও বিভন্ন মতামত দেখা যাচ্ছে।

মাঠপর্যায়ে ইসলামপন্থি অনেক কর্মী থাকলে নেতৃত্বে তার অনুপস্থিতি প্রসঙ্গে কেউ বলছেন, ইসলামপন্থি নেতাদের অনেকেই জেলে আছে বা দেশের বাইরে পালিয়ে আছে। আর কেউ কেউ বলছেন, দেশের জনগণের একমাত্র চাওয়া হল, সিসি শাসনের পরিসমাপ্তি। কিন্তু ইসলামপন্থিরা যোগ দিলে ‘ইখওয়ানি’ তকমা দিয়ে সরকারের জন্য এ আন্দোলন দমন করা সহজ হবে ভেবে তারা নেতৃত্বে আসছে না।

তবে কারণ যাই হোক, ইসলামপন্থিদের অনুপস্থিতিতে আদর্শিকভাবে এ আন্দোলনে প্রভাব বিস্তার করবে বামপন্থী স্যাকুলাররা। আর এটা হবে মিশরে ইসলামপন্থি রাজনীতির জন্য অশনিসংকেত।

পূর্ববর্তি সংবাদদেশ চালাতে ব্যর্থ হয়ে সরকার এখন জুয়ার আশ্রয় নিয়েছে : ফখরুল
পরবর্তি সংবাদ‘ক্যাসিনো-কাণ্ডে ধরা পড়া সবাই বিএনপি জামায়াত থেকে আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারী’