হ্যাঁ, আমিই আমিরে মুআবিয়া রা.

নাজিশ হুমা কাসেমী ।।

হ্যাঁ, আমি আমিরে মুআবিয়া রা.। আমি রাসূল সল্লাল্লাহু এর অহি লেখক। আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বিশ্বস্ত লোকদের একজন। আমি শাম ও দামেস্কের বিজেতা, ইসলামী রাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে আমার অনেক পাণ্ডিত্য। সর্বপ্রথম  সমুদ্র অভিযান আমি চালিয়েছি। আমার এই গর্ব আছে যে, আমার বোন উম্মে হাবিবা র. রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের স্ত্রী। আমার কুনিয়াত আবু আব্দুর রহমান। রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে আত্মীয়তার সুবাদে আমাকে মানুষ সম্মান করে বলে, মুমিনদের মামা।

আমি ইসলাম গ্রহণের পূর্বে মুসলমানদের শত্রু ছিলাম কিন্তু ইসলাম গ্রহণের পর ইসলামের প্রচার-প্রসারের জন্য এবং মুসলমানদের সফলতা ও কামিয়াবীর জন্য নিজের জীবনকে আমি উৎসর্গ করে দিয়েছি। আমি হুদায়বিয়ার সময় ইসলাম গ্রহণ করেছি এবং মক্কা বিজয়ের সময় নিজের ইসলাম গ্রহণের কথা ঘোষণা করেছি।

আমার মা হিন্দা বিনতে ওতবা এবং আমার বাবা হযরত আবু সুফিয়ানও ইসলাম গ্রহণের সৌভাগ্য লাভ করেছেন এবং রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাহাবা হয়েছেন।

নবুয়তের ৫ বছর আগে আমার জন্ম। মক্কা বিজয়ের পর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে  আমি হুনাইন যুদ্ধে এবং তায়েফ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছি। আমাকে মক্কার শিক্ষিত লোকদের মধ্যে গণ্য করা হত। এজন্যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে ইসলাম গ্রহণ করার পর অহি লেখার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। এছাড়া আরো বিভিন্ন প্রয়োজনীয় জিনিস রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার মাধ্যমে লেখাতেন। আমার মাধ্যমে রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিভিন্ন বাদশাহদের নিকট চিঠি লিখিয়েছেন।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার জন্যে দোয়া করেছেন, ‘হে আল্লাহ তুমি  তাকে হেদায়েত দান কর। এবং তার মাধ্যমে অন্যদেরকেও হেদায়েত দাও।’

আমাকেই হযরত ওমর র. হিমসে উমাইর বিন সাদ রা. -এর পরিবর্তে শাসক বানিয়ে পাঠিয়েছিলেন। লোকজন যখন এই পরিবর্তনের সমালোচনা শুরু করল, তখন উমাইর বিন সাদ রা. বললেন, তোমরা মুআবিয়ার ব্যাপারে ভালো ছাড়া মন্দ কিছু বলো না। কারণ আমি রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘ হে, আল্লাহ, তুমি তাকে হেদায়াত দান কর। ‘

হ্যা, আমার ব্যাপারেই আবদুল্লাহ ইবনে ওমর র. বলেছেন, আমি রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পর আমিরে মুআবিয়ার চেয়ে প্রাজ্ঞ রাজনীতিক কাউকে দেখিনি।

ইতিহাস সাক্ষী, যখন থেকে আমি খেলাফত ও ইমারতের দায়িত্ব পেয়েছি, আমি আমার প্রজাদের সাথে ভালো ব্যবহারই করেছি। আমার জীবনকে আমি কল্যাণের জন্যে উৎসর্গ করে দিয়েছি।

হ্যা, আমার সমুদ্র অভিযান সম্পর্কেই রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আমার ‍উম্মতের প্রথম নৌবাহিনী যারা সমুদ্রে লড়াই করবে, তাদের জন্যে জান্নাত ওয়াজিব করে দেওয়া হয়েছে।

আমি খোলাফায়ে রাশেদীনের এর আমলে ইসলামী বাহিনীর নেতৃত্বে থেকে যুদ্ধ করেছি। ইসলামের মানচিত্রে নতুন নতুন দেশ ও রাষ্ট্র যুক্ত করেছি। দিকে দিকে ইসলামের আলো পৌঁছে দিয়েছি।

দামেস্কে আমার ২০ বছরের শাসনকা্লে আমি দুনিয়ায় সর্বপ্রথম আবাসিক হাসপাতাল স্থাপন করেছি। কৃষিকাজে আধুনিকায়ন করেছি। সকল পুরানো মসজিদগুলো মেরামত করে নবায়ন করেছি, যার মধ্যে মসজিদুল হারামও ছিল।

ডাক ব্যবস্থাকে উন্নত করেছি। চিকিৎসা শাস্ত্রে অস্ত্রোপচার বিদ্যার সংযোজন করেছি। সীমান্তের হেফাজতের জন্যে পুরানো দূর্গের মেরামত করেছি, এবং নতুন নতুন দূর্গ নির্মাণ করে সীমান্ত পাহারার জন্যে স্বতন্ত্র বাহিনী নিয়োগ করেছি। শান্তি ও জননিরাপত্তা উন্নত করার জন্যে পুলিশ ব্যবস্থায় সংস্কার এনেছি, যা হযরত ওমর র. প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। দামেস্কসহ সব নগরীতে মজলিসে শুরা কায়েম করেছি।

আমার ইন্তিকাল হয়েছে ৬০ হি. দামেস্কে। আমার অসিয়ত মোতাবেক আমার কাফন দেওয়া হয়েছে রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জামা মোবারক পরিধান করিয়ে। আমার জন্ম ভূমি মক্কা থেকে বহু দূরে ইসলামের সেবা করা অবস্থায় সেখানেই আমার দাফন হয়েছে।

যরবে দেওবন্দ থেকে সংক্ষেপণ ও অনুবাদ : এনাম হাসান

 

পূর্ববর্তি সংবাদভারতে এনআরসি আতঙ্কে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা
পরবর্তি সংবাদআবারও ভারতে গো-মাংস বিক্রির সন্দেহে যুবককে পিটিয়ে হত্যা