বিয়েতে পাত্র-পাত্রী সংকট: সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা

মাওলানা জিয়াউর রহমান ।।

বিয়ে-শাদির বেলায় একটা কমন সমস্যা হচ্ছে, পাত্রপক্ষ কনে খোঁজে পায় না৷ আবার কনেপক্ষও পাত্রের অভাবে বিয়ে দিতে পারে না৷

একটা অভিজ্ঞতার কথা বলি। এ পর্যন্ত যত পাত্র কিংবা পাত্রপক্ষ পাত্রী খোঁজে না পাওয়ার কষ্ট শেয়ার করেছেন৷ প্রায় সবার পূর্বের ইতিহাস ঘেঁটে দেখেছি, তারা উপযুক্ত পাত্রী পেয়েও ঠুনকো অজুহাতে বিয়েতে অগ্রসর হননি৷

অপরদিকে পাত্রীপক্ষের ইতিহাসও প্রায় সেইম৷ আঠারো, উনিশ কিংবা বিশে অনেক আলাপ এসেছে৷ উচ্চশিক্ষার অজুহাত কিংবা অহমিকার কারণে বিয়েতে মত দেয়া হয়নি৷ কিন্তু এখন পড়াশোনা শেষ হলেও বয়স ওভার হয়ে যাচ্ছে৷ আর আলাপ আসছে না৷ এটা আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে এক আযাব৷ যা আমরা নিজেরাই ডেকে এনেছি৷

আমাদের সমাজে আরেকটা প্রকট সমস্যা হচ্ছে, আমরা বিয়ের উপযুক্ততার মাপকাঠি জানি না৷ কিংবা জানলেও দুনিয়াবী স্বার্থ, বস্তুবাদি চিন্তাধারা এবং বংশীয় অহমিকার কারণে আমরা মূল মাপকাঠির ধারেকাছেও যাই না৷ অথবা উপযুক্ততার মাপকাঠি মানলেও নিজেদের তৈরি আরো দশটি মাপকাঠির সঙ্গে এটাকেও সাধারণ একটা মাপকাঠি গণ্য করি৷

বিয়েতে আমাদের নিজেদের তৈরি উপযুক্ততার কিছু মাপকাঠি আছে৷ যেমন আমরা ‘চৌধুরী’ হলে যাদের সাথে আত্মীয়তা করব, তারাও ‘চৌধুরী’ হতে হবে৷ আমরা ‘সৈয়দ’ হলে তারাও ‘সৈয়দ’ হতে হবে৷ আমরা ‘তালুকদার’ হলে তারাও ‘তালুকদার’ হতে হবে৷ মনে রাখতে হবে, এটা বংশীয় বিভাজন৷ শরীয়ত উল্লিখিত ‘কুফু’ নয়৷

আঞ্চলিকতার মাপকাঠি৷ আমরা সিলেটি তো অপরপক্ষও সিলেটি হতে হবে৷ আমরা শহরের স্থায়ী বাসিন্দা, তারাও শহরের স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে৷

এরিয়া কিংবা সীমানা নির্ধারণ৷ আমাদের এলাকার আশপাশে হতে হবে৷ দূরে আত্মীয়তা করব না৷ কনে কিংবা বরের বাবা-মা বেঁচে থাকতে হবে৷ বাবা-মা না থাকলে এখানে বিয়ে করা যাবে না৷ আরো কতো ধরনের চাহিদা আর অভিলাষ যে থাকে! সব মাপকাঠি মতে মিলেও না, সব চাহিদা পুরাও হয় না৷ বিয়ে নামক সোনার হরিণও ধরা দেয় না৷

কনে দেখা নিয়েও ঘটে আরেক অনিয়ম৷ নাজায়েয অনিয়মের কথা বাদই দিলাম৷ বৈধ অনিয়মটা হচ্ছে, কনে দেখতে বর নিজে না গিয়ে মা, বোন কিংবা ভাবিকে পাঠানো৷ যে বিয়ে করবে, সে যে তাড়না, আগ্রহ এবং চোখ নিয়ে কনে দেখবে, অন্যরা সে তাড়না নিয়ে দেখবে না৷ তাছাড়া সবার পছন্দ সমান না৷ দৃষ্টিভঙ্গি সমান না৷ নারীদের মাঝে খুঁতখুঁতে স্বভাবটাও প্রবল৷

যেহেতু বিয়ে করবে বর, সংসারও করবে সে৷ আল্লাহ হয়ত বরের চোখে এই কনেকে পছন্দসই বানিয়ে দিতেন, যেটা পরিবারের অন্য নারীদের বেলায় হবে না৷ কিন্তু দেখা যায়, যে বিয়ে করবে সে নিজে যায়ই না৷ কিংবা তাকে যেতে দেয়া হয় না৷ প্রাথমিক পছন্দটা ঘরের মা-বোনরাই করেন৷ যার কারণে তাদের পছন্দ-অপছন্দের কাছে উপযুক্ত জায়গাগুলো হারিয়ে যায়

করণীয়: যারা উপযুক্ত ক্ষেত্র পেয়েও বস্তুবাদি চিন্তাধারায় পড়ে সময়মত বিয়ে করেননি, করাননি, দেননি, তাদের বেশি বেশি করে তাওবা-ইস্তেগফার পড়া উচিত৷ আল্লাহর দিকে রুজু করা উচিত৷

যারা অনেক জায়গা দেখেছেন, কিন্তু উপযুক্ততার নিজের বানানো কতিপয় মাপকাঠি নিয়ে দেখেছেন৷ আল্লাহর ওয়াস্তে শরীয়ত কৃত মাপকাঠি ছাড়া বংশ, আঞ্চলিকতা, এরিয়া, সীমানায় ঘুরপাক খেয়ে সময় নষ্ট করবেন না৷ উপযুক্ত জায়গাগুলো হারাবেন না৷

যারা এতদিন শুধু মা-বোনকে পাঠিয়েছেন৷ কনে দেখার পূর্বশর্তগুলো মেনে এখন থেকে তাদের সাথে নিজে যান৷ কারণ পেটের ক্ষুধা তো আপনার৷ পছন্দ হলে অকপটে তাদের বলুন৷ দেখবেন, বেশি জায়গায় ঘুরতে হবে না ইন শা আল্লাহ৷

লেখকের ফেসবুক পোস্ট থেকে নেওয়া

পূর্ববর্তি সংবাদবিএনপির উচিত আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ দেয়া : ওবায়দুল কাদের
পরবর্তি সংবাদরোহিঙ্গাদের নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ইউনিট নিয়োগ করা হচ্ছে : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী