মালয়েশিয়ার জাতীয় স্কুল শিক্ষা কারিকুলামে যেভাবে আছে ধর্মশিক্ষা ও ইসলাম

মুকিম আহমাদ ।।   মালয়েশিয়া থেকে

বহুজাতিক আধুনিক মুসলিমদেশ মালয়েশিয়া । শান্তিপ্রিয় ,ধর্মসচেতন জনগণ । মালায়ু মুসলিম ছাড়াও চীনা বৌদ্ধ ,ক্যাথলিক, তামিল হিন্দু, মুসলিমসহ নানা বর্ণের ,ধর্মের মানুষের বসবাস এবং সহনশীল ও শান্তিপূর্ণ বসবাস । বিদগ্ধমহলের বিশ্লেষণে জানা যায় এই সহনশীলতা আর শান্তির মূলে রয়েছে শিক্ষা । ইসলামী গবেষকদের গবেষণামতে শিক্ষার পরিপূর্ণতায় রয়েছে ধর্মশিক্ষা । জনগোষ্ঠীর প্রায় ৯৫% ভাগ শিক্ষিত ।

স্কুল কারিকুলাম নিয়ে আলোচনার আগে মালয়েশিয়ার সামগ্রিক শিক্ষা সিস্টেমটা জেনে রাখা দরকার ।

মালয়েশিয়ার পাবলিক স্কুলগুলো প্রধানত তিনভাগে বিভক্ত । (১) SK – Sekolah Kebangsaan (Malaysia) মালয় পাবলিক স্কুল , মালয় পাবলিক স্কুলটির ধর্মীয় ভার্সন হচ্ছে SA –Sekolah Agama দ্বীনি স্কুল ।  (2) SKJC- Sekolah Kebangsaan Jenis Cina চায়নিজদের জন্য বিশেষায়িত স্কুল ।  (৩)  SKJT- Sekolah Kebangsaan Jenis Tamil তামিলদের জন্য নির্ধারিত স্কুল।

SEKOLAH AGAMA মূলত বাংলাদেশের আলীয়া মাদরাসার ধরণের । ৬০% দ্বীনি বিষয় আর ৪০% সাধারণ বিষয়ে শিক্ষা প্রদান করা হয়  । প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্তই তাদের স্তরবিন্যাস।  এই স্কুলগুলোর আরেকটি ভাগ হচ্ছে ‍SEKOLAH AGAMA BANTUAN KERJAAN যা অনেকটা এমপিওভুক্ত আধা সরকারি ।  তাদের সিলেবাসের মৌলিক বিষয়গুলো তিন ভাগে বিভক্ত ।  আদ-দ্বীনয়্যিাহ , আল- আরাবিয়্যাহ , উমূমিয়্যাহ ।

সাধারণ পাবলিক স্কুলগুলো উপমহাদেশের ব্রিটিশ সার্টিফিকেশনের মতই তিনটি স্তরে বিন্যস্ত ।

UPSR ,SPM, STPM /STAM । সম্প্রতি সংযুক্ত হয়েছে PT3 –LOWER SECONDARY ।

পাবলিক স্কুলগুলোতে ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক

পাবলিক স্কুলগুলোতে মাধ্যমিক পর্যন্ত ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক । মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের জন্য PENDIDIKAN ISLAM বা ইসলাম শিক্ষা আর অমুসলিমদের জন্য MORAL VALUES বাধ্যতামূলক । অতি সম্প্রতি মাধ্যমিক স্কুলগুলোতে ভিন্ন ধর্মশিক্ষা ঐচ্ছিক সাবজেক্ট হিসেবে যুক্ত করার আলোচনা হলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় তা বাতিল করে দেয় ।  ব্যাখ্যায় বলা হয় , স্কুলগুলোতে শিশুদের কোমল চিন্তা-চেতনায় একটা সাংঘর্ষিক অবস্হান তৈরি হবে ,ফলে ধীরে ধীরে তার আক্বীদা সংশয়যুক্ত হতে থাকবে যেটা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে কিছুটা নিরাপদ ।

সাধারণত মালয় মুসলিমগণ আক্বীদা বিষয়ে ভীষণ সচেতন । শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রোসপেক্টাসে

শিক্ষার লক্ষ্য-উদ্দেশ্য বর্ণনা করা হয় এইভাবে “melahirkan Muslim yang berilmu, beriman ,beramal-soleh dan berakhlaq..” যার অর্থ  দাঁড়ায় প্রতিটি মালয় মুসলিম  জন্ম গ্রহণ করবে জ্ঞানী, ঈমানদার, উত্তম আমল এবং আখলাকের জন্য , কুরআন এবং সুন্নাহর জ্ঞান অর্জন করে ।

প্রাইমারী স্কুল সার্টিফিকেটের জন্য বাধ্যতামূলকভাবে ইসলাম শিক্ষা বিষয়টি রয়েছে।  সে বিষয়ে অধ্যয়ন করতেই হয় ।  “ইসলাম শিক্ষা” সাবজেক্টটি সাজানো হয় এভাবে যে, আল কুরআন ,হাদীস , আক্বীদাহ, ইবাদাহ , সীরাহ ,আদাব এবং জাভী হরফে লেখা যা মূলত আরবী অক্ষর এবং তাদের অতিরিক্তি অক্ষরগুলোর সমষ্টি । দৈনন্দিন নামাজে পড়ার জন্য বাচ্চাদের সূরা মুখস্হ করানো হয়, আক্বীদার জন্য সুর করে ছন্দে ছন্দে আল্লাহ তাআ’লার নিরানব্ব্‌ইটি নাম মুখস্হ করানো হয় ।

মাধ্যমিক এবং  উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট পরীক্ষার জন্যও বাধ্যতামূলক PENDIDIKAN ISLAM বা ইসলাম শিক্ষা রয়েছে ।  এই স্তরেও সাবজেক্টটি সাজানো হয়েছে তাসাওউর ইসলাম , আর কুরআন , হাদীস এবং ফারদু আইন । আল কুরআন থেকে সূরা তাওবাহ , সূরা ইয়াসীনসহ আরও কিছু সূরা তরজমা এবং অনুবাদ, তাজবীদ সিলেবাসের অন্তর্ভুক্ত ।  আক্বীদার ক্ষেত্রে “রুবুবিয়্যাত ,উলূহিয়্যাহ , আসমা ওয়াস সিফাতসহ আরও কিছু বিষয় অন্তর্ভুক্ত ।

পাবলিক স্কুলের কারিক্যুলামে ইসলাম শিক্ষা বিষয়টি এমনভাবে সুবিন্যস্ত করা হয়েছে যে প্রত্যেক ছাত্র মাধ্যমিক / উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার মাধ্যমে  ইসলামী জীবন যাপনের জন্য উপযুক্ত হয়ে উঠে।  সাধারণত মালয় মুসলিমগণ নিজেদের প্রিয়জনদের জানাযার নামাজ নিজেরাই পড়িয়ে থাকেন । তাছাড়া , সাধারণত যে কেউ নামাজে ইমামতের যোগ্যতা রাখেন ।  শতকরা ৯০% মালয় মুসলিম বিশুদ্ধ কুরআন তেলাওয়াত করতে পারেন ।  আঞ্চলিক উচ্চচরণের সীমাবদ্ধতার কারণে কিছু হরফের উচ্চারণে তারা দুর্বল । তাজবীদের প্রাথমিক জ্ঞান প্রায় সবারই জানা , কিছুক্ষেত্রে তারা তাজবীদের ইলমে  অন্য অনেক অনারব দেশগুলো থেকেও অগ্রসর ।

ধর্মশিক্ষার বাধ্যবাধকতার দরুন সমাজে ইসলামী কালচার এবং চিন্তাধারা এই আধুনিক সময়েও নীরবে চর্চিত হয় ।  জীবনের নানা ক্ষেত্রে ইসলাম স্বভাবজাত হয়ে মালয় মুসলিমদের জীবনে মিশে আছে ।  তাদের আচরণ এবং উচ্চারণে ইসলামী ভাবধারা স্বমহিমায় উজ্বল ।

পূর্ববর্তি সংবাদতিউনিসিয়ায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন : বিজয় মিছিলে সিসির নিন্দা
পরবর্তি সংবাদসৌদিতে বিদেশী পর্যটন: দেশটির পবিত্রটা কতটুকু বজায় থাকবে