ইসলাম টাইমস ডেস্ক : বাংলাদেশে কাদিয়ানিদের বিরুদ্ধে যে সকল আলেম আমরণ লড়াই করে গেছেন, যাদের সচেতনতার বদৌলতে লক্ষ লক্ষ লোকের ঈমান হেফজত হয়েছে, তাদের অন্যতম শায়খুল হাদীছ হযরত মাওলানা শামসুদ্দীন কাছেমী (রঃ) অন্যতম । তিনি একাধারে বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ, নাস্তিক-মুরতাদ প্রতিরোধ আন্দোলনের অকুতোভয় সাহসী সৈনিক, খতমে নবুওত আন্দোলন পরিষদ বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সাবেক নির্বাহী সভাপতি, মাসিক পয়গামে হক্ক ও সাপ্তাহিক জমিয়তের প্রতিষ্ঠাতা
এই মহান ব্যক্তিত্ব বাংলাদেশে ইসলামের প্রবেশদ্বার চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের এক ধর্মীয় পরিবারে জন্মগ্রহণ করে। মরহুম মাওলানার পিতা ও দাদা যথাক্রমে- মাওলানা মোহাম্মদ মুদ্দাছির ও পিতামহ জনাব আহমদ সারেং। হযরত কাছেমী (রঃ) ফার্সী ভাষায় সুপন্ডিত ও সাবেক উকিল মরহুম আলী মুন্সী সাহেবের বংশধর। চট্টগ্রাম জেলার সন্দ্বীপ থানার নয়ামস্তি এলাকায় আনুমানিক ১৯২৩ সালে তিনি জন্মগ্রহণ করেন।
গ্রামের মক্তব ও প্রাইমারী স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনের পর স্থানীয় রিয়াজুল উলুম মাদরাসায় ভর্তি হন। নাহু-সরফের শিক্ষা সমাপন করে তিনি সন্দ্বীপ হরিশপুর বশিরিয়া আহ্মদিয়া সিনিয়র মাদরাসায় ভর্তি হয়ে দাখিল, আলীম ও ফাজিল পাশ করেন।
১৯৫৫ সালে দারুল উলুম দেওবন্দে ভর্তি হন। সেখানে দুই বছর পড়াশুনা করে চট্টগ্রাম চলে আসেন। এক বছর চট্টগ্রাম জিরী মাদ্রাসায় পড়াশুনা করেন। ১৯৫৮ সালে তিনি লাহোর জামেয়া আশ্রাফিয়ায় ভর্তি হন এবং তাফসীর ও হাদীস শাস্ত্রে উচ্চতর সনদ লাভ করেন। তারপর শায়খুত তাফসীর হযরত মাওঃ আহমদ আলী লাহোরী (রহ.) এর তাফসীর এর দরসে ভর্তি হন এবং ১৯৬০-৬১ সালে তাফসীরের উপর বিশেষ সনদ লাভ করেন।
১৯৬১ সালে মোমেনশাহী সোহাগী মাদ্রাসার শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবনের সূচনা করেন। তারপর ঢাকা বড় কাটারা আশ্রাফূল উলূমে দু’ বছর এবং ফরিদাবাদ মাদ্রাসায় ৬/৭ বছর শিক্ষকতা করেন। ১৯৭০ ইং যাত্রাবাড়ী মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠায় তিনি অংশগ্রহণ করেন এবং এক বছর অবৈতনিক শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি চট্টগ্রাম শুলকবহর মাদ্রাসার মুহতামিম এবং দামপাড়া বাইতুল আজীজ মসজিদের ইমাম ও খতিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
পাকিস্তান আমলের শেষ দিকে ১৯৭০ সালে মাওলানা শামসুদ্দিন কাসেমী, মাওলানা মুহিউদ্দীন খান সহ আরো কয়েকজন বিশিষ্ট আলেমের পৃষ্টপোষকতায় হাফেজ ক্বারী আব্দুল খালিক আসআদী ভিত্তি স্থাপন করেন আজকের জামেয়া হোসাইনিয়া ইসলামিয়া আরজাবাদ। ১৯৭৪ সালে কাছেমি সাহেব আরজাবাদ মাদরাসায় যোগদান করেন। তিনি অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে মাদরাসাটিকে দাওরায়ে হাদীস পর্যন্ত উন্নীত করেন। মৃত্যু পর্যন্ত তিনি জামিয়ার মুহতামীমের দায়িত্ব পালন করেন। মাওলানা এহসানুল হক সন্দিপীর বিদায়ের পরে তিনি জামেয়ার শায়খুল হাদীস পদে অধিষ্ঠিত হন।
এই ক্ষণজন্মা আলেম বাংলাদেশে সর্বপ্রথম কাদিয়ানীদের বিরুদ্ধে জোরদার আন্দোলন গড়ে তোলেন। তিনি শিয়া মতবাদ, মুদুদীবাদ, বাহায়ী, রেজভী, ইংরেজদের দোসর দেশ ও ধর্ম বিদ্বেষী এন,জি,ও র বিরুদ্ধে আজীবন আপোষহীন সংগ্রাম পরিচালনা করে গেছেন।
এ মহান ব্যক্তিত্ব ১৯ শে অক্টোবর ১৯৯৬ ঈসায়ী ইন্তেকাল করেন। আল্লাহ তাকে জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থান দান করুন। আমীন।